ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ৩১ মার্চ ২০১৯

আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি

আজকের বাস্তবতায় এটা প্রতীয়মান হয় যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাধা দূর করতে পারলে এই অঞ্চলের বাণিজ্য তিনগুণে উন্নীত করা সম্ভব। বস্তুত, বিশ্বায়নের যুগে এককভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বাণিজ্য বাধা দূর করে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যের আকার তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব। বিশ্বের মোট বাণিজ্যের মাত্র পাঁচ শতাংশ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্যে। যেখানে পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিকে বাণিজ্যের আকার পঞ্চাশ ভাগ। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় তেইশ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হচ্ছে। মানুষের তৈরি বাধাগুলো দূর করতে পারলে তা সাতষট্টি বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। অবশ্য বিশ্বব্যাংক মনে করে কয়েকটি কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ছে না। এসব হচ্ছে উচ্চ শুল্ক, অশুল্ক বাধা, যোগাযোগ খরচ এবং এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের আস্থার সঙ্কট। বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পারস্পরিক বাণিজ্য উন্নয়নে প্রভাবশালী সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠী অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। মূলত এ গোষ্ঠীর নেপথ্য তৎপরতার কারণে দেশগুলোর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে শুল্ক-অশুল্ক বাধা কমছে না। ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদার আশানুরূপ হারে বাড়ছে না। মূলত বাংলাদেশের বাণিজ্য ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর। সেখানে সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। বিশ্বের অন্য অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলের ট্যারিফ প্রায় দ্বিগুণ। তবে ক্রমেই আঞ্চলিক বাণিজ্যের পরিবর্তন আসছে। যেমন, সীমান্ত হাট চালুর ফলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্বল্প আকারে অর্থনৈতিক কর্মকা- হলেও মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ছে। এতে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। সীমান্তে মানুষের মধ্যে আস্থাও তৈরি হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ সাত দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার। তবে শুধু ভারতের সঙ্গেই এর চেয়ে বেশি ব্যবসা করা সম্ভব। তা বাড়াতে হলে আন্তঃদেশীয় সক্ষমতা ও অবকাঠামো কাজে লাগানো সঙ্গত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সাফটা চুক্তি রয়েছে। ফলে কোন শুল্ক থাকার কথা নয়। অথচ এই অঞ্চলেই বেশি শুল্ক রয়েছে। সরাসরি শুল্কের বাইরেও আধা ট্যারিফ রয়েছে। অপরদিকে এ অঞ্চলের বাণিজ্য ট্যারিক ১৩ দশমিক তিন শতাংশ এবং প্যারাট্যারিফ হচ্ছে ২৫ দশমিক ছয় শতাংশ। স্পর্শকাতর পণ্যের তালিকা রয়েছে তিন শতাংশ পর্যন্ত। অশুল্ক বাধাও খুব একটা দূর হচ্ছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও রয়েছে ঘাটতি। সার্ক অচল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে নতুন আঞ্চলিক প্লাটফর্ম গড়ে তোলা যেতে পারে। সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা (্এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ অনেকটাই সফল হয়েছে। তবে এসডিজির চ্যালেঞ্জ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা ছাড়া এসডিজি অর্জন সহজ হওয়ার ক্ষেত্র প্রসারিত হবে না। এসডিজি বাস্তবায়নে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা প্রণিধানযোগ্য। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী কয়েকটি দেশকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে গঠিত হয় বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেক নামক আঞ্চলিক জোট। বাংলাদেশ এ জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। বিমসটেকে রয়েছে চৌদ্দটি সহযোগিতার ক্ষেত্র। এই সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো সদস্যদেশগুলোর জন্য অত্যন্ত লাভজনক ও সময়োপযোগী। কিন্তু বাস্তবে বিমসটেকের সাফল্য তেমন নেই বললেই চলে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাধা দূর করতে পারলে এ অঞ্চলের বাণিজ্য তিনগুণে উন্নীত করা সম্ভব। ফলে লাভবান হবে সবাই।
×