ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অজ্ঞাত ভাইরাসে ২০ দিনে পাঁচ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

অজ্ঞাত ভাইরাসে ২০ দিনে পাঁচ জনের মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ২৫ ফেব্রুয়ারি ॥ প্রথমে বাবার মৃত্যু, পরে একই দিনে স্ত্রী ও জামাইয়ের মৃত্যু, পরেরদিন দুই ভায়ের মধ্যে এক ভাই মারা যান এবং অপর ভাই রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নে ভা-ারদহ মরিচপাড়া গ্রামে মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকগণ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন একটি ভাইরাসের কারণে এমন মৃত্যু হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নে ভা-ারদহ মরিচপাড়া গ্রামের আবু তাহের (৫৫) মৃত্যুবরণ করেন। আবু তাহের বয়স্ক হওয়ার কারণে বিষয়টি তেমন গুরুত্বের সঙ্গে দেখেনি তার পরিবার। এর পর গত বুধবার ২০ ফেব্রুয়ারি আবু তাহেরের জামাই সদর উপজেলার রুহিয়া থানার কুজিশহর গ্রামের কহিম উদ্দীনের ছেলে হাবিবুর রহমান বাবলু (৩৫) একইভাবে আক্রান্ত হয়। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বাবলুর মৃত্যু হলে জামাতার সেই মৃত্যুর সংবাদ শোনার কিছুক্ষণ পর আবু তাহেরের স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৪৫) একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে একই রোগে আক্রান্ত হয় আবু তাহেরের দুই ছেলে ইউসুফ আলী (২৭) ও মেহেদী হাসান (২৪)। তাদের দুজনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়ার পথে ইউসুফ মারা যায় এবং মেহেদী বর্তমানে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ২য় তলার মেডিসিন বিভাগের ৩নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। রংপুর হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে থাকা জাহির উদ্দীন ও বেরোবির ছাত্র দুলাল হোসেন জানায়, ডাক্তার রোগীর মুখে মাস্ক পরিয়ে দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি নিয়েছে। তবে কি রোগে আক্রান্ত মেহেদী সেটা এখনও কোন চিকিৎসক বলতে পারছেন না। বেরোবির ছাত্র দুলাল জানায়, প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন এটি একটি ভাইরাস। যা প্রথমে মস্তিষ্কে আক্রমণ করে। ধীরে ধীরে মানুষের শরীরকে অক্ষম এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আক্রমণের কিছু সময়ের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এভাবেই একটি পরিবারে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বেরোবির ছাত্র দুলাল আরও জানায়, সোমবার রাতে রংপুর হাসপাতালের সব চিকিৎসক এবং ঢাকার চিকিৎসকসহ আলোচনায় বসবেন। তারপর এ রোগের আসল রহস্য সম্পর্কে জানাবেন তারা। মৃত্যুর কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি মোসাব্বেরুল হক জানান, আমি মুঠোফোনে রংপুর হাসপাতাল থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি এটি একটি ব্রেন ভাইরাস। আমরা বিষয়টিকে অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। অন্যদিকে রবিবার সকালে মৃত্যুবরণ করা ইউসুফের স্ত্রী কোহিনুর বেগম তার একমাত্র কন্যাসন্তানকে নিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ মোর্শেদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, কোহিনুর ও তার কন্যাসন্তান বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। আমরা নিবিড় পরিচর্যায় তাদের রেখেছি। আশা করছি কোন ভয় নেই। তবে কোন প্রকার সমস্যা হলে আমরা পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সোমবার হাবিবুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ভাইরাসের আতঙ্কে বাড়ির আশপাশের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে দেয়া শুরু করেছে। জনমনে আতঙ্ক Ñকোন্ সময় কাকে আক্রমণ করে এই ভাইরাস। তবে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আবু তাহেরের জামাতা ৬ বছর যাবত দুবাই থাকার পর সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার পরই এ ভাইরাস আক্রমণ করেছে তার পরিবারে। এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ঘটনার বিষয় শুনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন। ঠাকুরগাঁও ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন শাহজাহান নেওয়াজ জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে প্রদাহ (ঊহপবঢ়যধষরঃরং) জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এটি প্রথমে ব্রেনে আক্রমণ করে। আক্রান্ত হলে মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, হঠাৎ পাঁচজনের মৃত্যু ঘটনায় বালিয়াডাঙ্গী হাসপাতালের ডাঃ মোর্শেদ মাসুম বিল্লাহকে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন, দ্রুত চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শের জন্য ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি মেডিক্যাল টিম গঠন এবং কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনার সঠিক কারণ নিরূপণ করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ৩ বিশেষজ্ঞ ও ৩ সহকারীসহ ৬ সদস্যের একটি টিম সোমবার সকাল থেকে বালিয়াডাঙ্গীর ওই গ্রামে পৌঁছে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করেছে। তারা রংপুর হাসপাতালে মৃত মেহেদীর মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে।
×