ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিনেমা হল

প্রকাশিত: ০৯:২০, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

সিনেমা হল

আজকাল কেউ আর সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা বা চলচ্চিত্র- যাই বলি না কেন দেখে না। মধ্যবিত্ত ও ধনীরা তো সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক আগেই। এলিট তথা শিক্ষিত শ্রেণীও সিনেমা দেখার প্রসঙ্গ উঠলেই নাক-মুখ কুঁচকে ফেলেন। আর সাধারণ দর্শক, যাদের আমরা বলি আমজনতা, তারা সিনেমা হলে গিয়ে ‘ছবি’ দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। একদা সিনেমাকে বলা হতো ছবি বা ছায়াছবি, অনতিপরে চলচ্চিত্র, অতঃপর ফিল্ম। যে কারণেই হোক না কেন, ফিল্ম বা চলচ্চিত্র তার কৌলীন্য হারিয়েছে। এর নানা কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুঁজি ও লগ্নিকারীর অভাব। একটি ভাল মানের ছবি বা সিনেমা বানাতে বিপুল অঙ্কের পুঁজির প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেইসঙ্গে বিশাল একটি দল বা টিমওয়ার্ক, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সিনেমার পাত্র-পাত্রী, কলাকুশলী, চিত্রনাট্যকার, ক্যামেরাম্যান, সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা, লাইটম্যান, সর্বোপরি সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, পরিচালক, প্রযোজক ও অন্যান্য। মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেকের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। এর পর ছবি তৈরির বাজেট। বিশাল পুঁজি বিনিয়োগের এই পুরো প্রক্রিয়াটাই ঝুঁকিনির্ভর। কেননা, ছবি দর্শকধন্য অথবা হিট, সুপারহিট, বাম্পারহিট এর কোনটাই নাও হতে পারে। সে অবস্থায় পুরো দলটিরই প্রায় ভেঙ্গে পড়ার দুরবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, এমনকি হল মালিকদেরও। কেননা, সিনেমা দর্শক ধন্য না হলে তার হলের খরচ ওঠে না। অথচ এই বিপুল অঙ্কের টাকা আপনি অন্য যে কোন ব্যবসায়ই বিনিয়োগ করুন না কেন, তা থেকে দ্বিগুণ-তিনগুণ লাভ উঠে আসতে বাধ্য। তাই বাধ্য হয়ে হল মালিকরা তাদের সিনেমা হলগুলো একে একে ভেঙ্গে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানে গড়ে তুলছেন বড় বড় সুপার মার্কেট, সুপার মল, বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ইত্যাদি। কেউ কেউ অবশ্য পুরনো প্রেম ও প্রীতির টানে ছোট করে একটি সিনেমা হল রেখে দিচ্ছেন হারানো দিনের স্মারক হিসেবে। তবে সেগুলোও প্রায় দর্শকশূন্য। যে কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে চৌদ্দ শ’ হলের মধ্যে বর্তমানে কায়ক্লেশে টিকে আছে মাত্র ২৫০টি। এর অধিকাংশই আবার অত্যাধুনিক ও ডিজিটাল নয়। মোটামুটি মানের ভাল হল মাত্র কয়েকটি। প্রধান কারণ ওই ভাল সিনেমার প্রকট অভাব। সাম্প্রতিককালে আয়নাবাজি, ঢাকা এ্যাটাক, দহন, হালদাসহ কয়েকটি সিনেমা দর্শকধন্য হলেও এর নির্মাণ খরচ উঠে আসেনি বলে পরিবেশক ও প্রযোজকরা জানিয়েছেন। এরও কারণ আছে বৈকি। একটি সিনেমা তৈরি ও মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর পাইরেটেড কপিতে বাজার ছেয়ে যায়। সর্বাধুনিক বড় পর্দার এলইডি ও স্মার্ট টিভির কল্যাণে মানুষ ঘরে বসেই সে সব সিনেমা দেখে ফেলে। হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সময় কোথায়? এই সমস্যা যে শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ তা নয়। ভারতের মুম্বাইয়ে ইদানীং বেশ কয়েকটি উঁচু বাজেটের সিনেমা একেবারে বসে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে সিনেমার প্রযোজক-পরিবেশকরা হল মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন নৈতিক দায়-দায়িত্ব থেকেই। আমাদের দেশে সে ব্যবস্থা নেই। অতঃপর হল মালিক, প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক, সর্বোপরি সরকার পক্ষ একে অপরকে দুষছেন সিনেমা না চলার জন্য। সিনেমার দশা এমনই করুণ যে, এর কারণে সরকারী মালিকানাধীন এফডিসির অবস্থা পর্যন্ত বেহাল। সরকার ভাল সিনেমার জন্য যৎসামান্য অনুদান দিলেও তা অপর্যাপ্ত। এহেন দুরবস্থায় সিনেমা হলগুলো শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে কিনা, তাতে বিস্তর সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
×