ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর। মোট দেশজ উৎপাদন, বিনিয়োগ, রাজস্ব, রফতানি আয়, রেমিটেন্স, রিজার্ভ সব ক্ষেত্রেই ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন করে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। দেশের অর্থনীতির নানা বিষয় তুলে ধরেছেন- জলি রহমান

অর্থনীতিতে অর্জন ও নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

অর্থনীতিতে অর্জন ও নতুন সম্ভাবনা

এলডিসি থেকে উত্তরণ : অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় গত বছর বড় একটি ধাপ পেরিয়েছে বাংলাদেশ। আর তা হলো জাতিসংঘের তালিকায় স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্তরে নাম লেখানোর প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন। অবশ্য চূড়ান্ত স্বীকৃতি অর্জনে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। জাতিসংঘের ওয়েবসাইট সূত্র অনুযায়ী, এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্তরে চূড়ান্তভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশকে তিন বছর নির্দিষ্ট কিছু সূচকে অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য যেমন মর্যাদা ও সম্ভাবনার বিষয়, তেমনি কিছুটা উদ্বেগেরও। কারণ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রফতানি পণ্যের প্রধান ক্রেতা দেশগুলোর কাছ থেকে যে বাণিজ্য সুবিধা পেত, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর তা আর নাও পাওয়া যেতে পারে। কারণ একটি দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোন স্তরে রয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে সে দেশকে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা দেয়া হয়। আবার এ বছরই পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এই দুটি মেগা প্রকল্প শেষ হলে তা অর্থনীতির জন্য বড় অর্জন হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রশংসনীয় : গত (২০১৭-১৮) অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। সরকার চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংক আলোচ্য প্রবৃদ্ধি হার যথাক্রমে ৭ দশমিক ৫ ও ৭ দশমিক ১ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলে প্রাক্কলন করেছে। ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের একটি হবে। তখন বাংলাদেশ হবে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে অবস্থান ৪১তম। ২০৩৩ সালে আমাদের পেছনে থাকবে মালয়েশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ। আগামী ১৫ বছর দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৭ শতাংশ থাকবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল ২০১৯ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে ১৯৩টি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সাধারণত জিডিপির আকার বিবেচনায় এনে অর্থনীতির আকার নির্ধারণ করা হয়। মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) ১ হাজার ৪৬ মার্কিন ডলারে পৌঁছার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংকের বিবেচনায় ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালের মার্চে তিনটি প্রধান মানদ- ১. মোট জাতীয় আয় ১ হাজার ২৭২ ডলার (ন্যূনতম শর্ত ১ হাজার ২৩০ ডলার), ২. মানবসম্পদ সূচকে ৭২ দশমিক ৮ স্কোর (ন্যূনতম শর্ত ৬৬-এর চেয়ে বেশি) এবং ৩. অর্থনৈতিক নাজুকতা সূচকে ৩৫ দশমিক ২ স্কোর (ন্যূনতম শর্ত ৩২ বা তার কম) পূরণের মাধ্যমে জাতিসংঘের বিবেচনায় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতের জন্য প্রয়োজনীয় মানদণ্ড শর্ত ২০২৪ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখতে হবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক হার, জনমিতিক বোনাস এবং প্রধানত স্থানীয় ও বৈশ্বিক ব্যক্তি খাত কর্তৃক চালিত বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ। গত এক দশকের অধিক সময় থেকে বাংলাদেশে গড় আয় ও ব্যয় বাড়ছে। গড় আয়ের ৯০ শতাংশেরও বেশি ব্যয় হয় ভোগে (উৎস হাউজহোল্ড ইনকাম এ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে, ২০১৬)। বর্ধমান মাথাপিছু আয় একটি মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর (এমএসি) বিকাশ ঘটাচ্ছে, যাদের অনেক বেশি ব্যয়যোগ্য আয় (ডিসপোজেবল ইনকাম) রয়েছে। ওই আয় দিয়ে অধিক বিলাসী বা ভোগ্যপণ্যে ব্যয়ে পরিবারগুলো যথেষ্ট সক্ষম। তিন বছর ধরে (২০১৫-১৭) মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল এবং তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। খাদ্যের দাম কমায় ২০১৮ সালের অক্টোবর নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এখনও উর্ধমুখী। প্রাকৃতিক গ্যাসের উচ্চ আমদানি দাম, জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম এবং দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন উপযোগ বিল ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি করবে। সম্ভবত এ কারণে ২০১৯ সালে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। বিদ্যুত উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন : ২০০৯ সাল থেকে জাতীয় গ্রিডে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত যোগ হয়েছে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা ৩৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করে বিদ্যুত খাতের মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি) অনুযায়ী সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের টার্গেট নিয়েছে (সূত্র : পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান ২০১৬)। ব্যয়সাশ্রয়ী টেকসই বিদ্যুত উৎপাদনের উৎস হিসেবে সরকার অনেকগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণেরও পরিকল্পনা করছে। ২০২২ সালের মধ্যে ২৫টি নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে বলা হচ্ছে। বর্ধিষ্ণু জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এসব বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে ২৩ হাজার ৬৯২ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া গ্যাস রিজার্ভ কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে সরকার ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করেছে। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র রূপপুর পাওয়ার প্লান্ট ২০২৩ সাল থেকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। রেমিটেন্স আহরণে রেকর্ড : ২০১৮ সালে রেমিটেন্স আহরণে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে এক হাজার ৫৫৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে। ২০১৭ সালে এসেছিল এক হাজার ৩৫৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের রেমিটেন্স। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ২০৩ কোটিরও বেশি রেমিটেন্স এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের উপরে। আমদানি ও রফতানি : রফতাানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রফতানি আয়ের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ২ হাজার ৫০ কোটি (২০.৫০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি আয় এসেছে। এদিকে গত ডিসেম্বর মাসে পণ্য রফতাানি থেকে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রফতানি আয়ে সুখবর নিয়েই শুরু হয়েছিল নতুন অর্থবছর। ইতিবাচক সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া তৈরি পোশাক খাতের আয় ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। যার কারণে রফতাানিতে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বিদ্যমান। বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার। এর মানে হলো, বাংলাদেশের একজন মানুষ বছরে গড়ে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৯ টাকা আয় করেন। তবে এটি কোন ব্যক্তির আয় নয়। তবে মাথাপিছু আয় কোন ব্যক্তির একক বা ব্যক্তিগত আয় নয়। এটি একটি দেশের মোট আয়কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে মাথাপিছু আয় বের করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্তে দেখানো হয়েছে গত ১০ বছরে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ ৩ দশমিক ৫৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ১৭ মার্কিন ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৫ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনীতির সার্বিক পর্যালোচনা : সদ্য সমাপ্ত বছরে সম্পত্তির অধিকার, করের বোঝা, ব্যবসার স্বাধীনতা, শ্রমের স্বাধীনতা ও বাণিজ্যের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর আগের বছরের চেয়ে কমে যায়। স্কোর অপরিবর্তিত ছিল বিনিয়োগ স্বাধীনতা ও আর্থিক স্বাধীনতা সূচকে। আর স্কোর বেড়েছিল গবর্নমেন্ট ইন্টেগ্রিটি, বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা, সরকারী ব্যয়, ফিসক্যাল হেলথ ও মনিটারি ফ্রিডম সূচকে। ২০১৮ সালেই হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৯তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটান (৮৭তম) ও শ্রীলঙ্কা (১১১তম) বাংলাদেশের চেয়ে ভাল অবস্থানে ছিল। পিছিয়ে ছিল ভারত (১৩০তম), পাকিস্তান (১৩১তম) ও নেপাল (১৩৩তম)। মার্কিন থিংক ট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশন প্রণীত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত ছিল। ৫৫ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে ২০১৮ সালের তালিকায় বাংলাদেশ ১২৮তম অবস্থানে ছিল। ২০১৭ সালের অবস্থানও একই ছিল। তবে অবস্থানে উন্নতি না হলেও গত বছর সার্বিকভাবে দেশের স্কোর ২০১৭ সালের চেয়ে দশমিক ১ পয়েন্ট বাড়ে। নবেম্বরের মাঝামাঝিতে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) চালুর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সংস্থাটি প্রাথমিকভাবে এ প্রক্রিয়ায় ১১টি সেবা প্রদান শুরু করে। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও তিনটি সেবা প্রদান কার্যক্রম শুরুর কথা জানায় তারা। এসব সেবা দিতে বিভিন্ন সংস্থা ও দফতরের সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনার কথাও বলে বেজা। ধাপে ধাপে সব সেবা চালু হলে বেজার ওএসএস কেন্দ্র থেকে বিনিয়োগকারীরা ২৭ ক্যাটাগরিতে মোট ১২৩টি সেবা পাবেন। এদিকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের দোরগোড়ায় কৃষিসেবা পৌঁছে দিতে দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নে ‘কৃষক সেবাকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মূলত ‘কৃষিসেবার ওয়ান স্টপ সেন্টার’ হিসেবে এসব কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এসব কেন্দ্র স্থাপনের পর প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকদের কৃষিসংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা নিতে আর উপজেলা অফিসে আসার দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। কৃষক সেবাকেন্দ্রগুলো থেকেই সব ধরনের পরামর্শ ও সেবা নিতে পারবেন তারা। এতে তাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। বাড়বে উৎপাদনশীলতা। প্রাথমিকভাবে ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সেবাকেন্দ্র স্থাপন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর (পাইলট) প্রকল্প’-এর মাধ্যমে দেশের ২১টি জেলার ২৪টি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নে এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ২০টি ইউনিয়নে আরও ২০টি কৃষক সেবাকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন। এমডিজি অর্জন ও এসডিজি সাফল্যের পথে : এমডিজির সব লক্ষ্য অর্জনে সফলতা দেখানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল। তাই জাতিসংঘের ২০১৩ সালের প্রতিবেদনে এমডিজি অর্জনে সফল ১৮টি দেশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এমনটি সম্ভবপর হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে। এমডিজি অর্জনকে প্রধানমন্ত্রী সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলেই আমরা এসব লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে গিয়েছি। এ সময়ে সরকার ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১১-১৫) মাধ্যমে পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল বলেই এমডিজির আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এ সফলতা দেখাতে পেরেছে। আর আজ তাই আমরা বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি। গত ১০ বছরে দেশ বদলেছে, গতিশীল হয়েছে অর্থনীতির চাকা, আর তাই নজরকাড়া উন্নতির মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাত ধরেই আমরা ক্রমে এসডিজির অধিকাংশ অভীষ্ট লক্ষ্যের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছি। এক দশকে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ২০ লাখ কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন করেছি। বড় ধরনের পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুরুতে কিছুটা সক্ষমতার অভাব থাকলেও এখন যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা শতভাগ সক্ষমতা অর্জন করেছি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি টেকসই গতিশীলতার মধ্যে এসেছে। এ প্রকল্পগুলো যখন শতভাগ বাস্তবায়ন হবে, তখন বাংলাদেশ হবে একটি সমৃদ্ধ দেশ। এর প্রভাব এরই মধ্যে পরিলক্ষিত হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে আমাদের সাম্প্রতিক অগ্রগতি দেখলে দেশের মানুষ তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাবে।
×