ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধোঁয়াশা কাটছে না

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

ধোঁয়াশা কাটছে না

ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার ফ্লাইট জেটি ৬১০ কেন দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে তার কারণ এখনও জানা যায়নি। সোমবার ভোরে প্লেনটি জাকার্তা থেকে দেশের ভেতরই পাংকাল পিনাং যাচ্ছিল। বিধ্বস্ত প্লেনের ১৮৯ জন আরোহীর সবাই মারা গেছে। আরোহীদের মৃতদেহ অনুসন্ধানে মঙ্গলবার ডুবুরি ও উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা অব্যাহত থাকে। বিবিসি ও সিএনএন লায়ন এয়ারের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ ব্র্যান্ডের নতুন প্লেনটি কেন দুর্ঘটনার শিকার হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণইে দুর্ঘটনা ঘটেছে তবে এই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ জানা যায়নি। যে কোন প্লেন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা মানুষের ভুলকে দায়ী করা হয়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই যে সেটি হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লায়ন এয়ার একই মডেলের এগারটি এয়ারক্রাফট পরিচালনা করছে। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার খুঁজে পাওয়া গেলে দুর্ঘটনার কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। বোয়িং কোম্পানি জানিয়েছে তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। মাত্র গত বছরই কোম্পানি নতুন ব্র্যান্ডের প্লেনটি বাজারে এনেছিল। জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পরই প্লেনটি নিখোঁজ হয়। সকাল ৬টা ২০ মিনিটে প্লেনটি উড্ডয়ন করে। ভোর ৬টা ২০ মিনিটে এটি যাত্রা শুরু করে, এক ঘণ্টা পর ৭টা ২০ মিনিটে গন্তব্যস্থলে অবতরণের কথা ছিল। পরে সমুদ্রে বিধ্বস্ত প্লেনটির খোঁজ পাওয়া যায়। যার অবস্থান যেখান থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তার দুই নটিক্যাল মাইলের মধ্যেই। লায়ন এয়ারের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ফ্লাইটটিতে ঠিক কি ঘটেছিল তা এখনও জানা যায়নি। তবে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। প্লেনটি ১৮১ জন যাত্রী, দু’জন পাইলট ও ছয়জন কেবিন ক্রু ছিলেন। যাত্রীদের সবার জাতীয়তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। শেষ মুহূর্তে পাইলটকে জাকার্তার সুকর্ন হাত্তা বিমানবন্দরে ফিরে আসতে বলা হয়। প্লেনটিকে সর্বশেষ সাগর পাড়ি দিতে দেখা যায়। ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল সার্চ এ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সি টুইটারে জানিয়েছে, যাত্রীদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র সাগরে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্সও আছে। সিএনএনের এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ পিটার গোয়েলজ বলছেন, নতুন কোন প্লেনের এ রকম দুর্ঘটনার শিকার হওয়া খুবই বিরল ঘটনা। প্লেনের পাইলটের ৬ হাজার ও কো-পাইলটের ৫ হাজার ঘণ্টা প্লেন চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। নির্দিষ্ট এই প্লেনটি ৮শ’ ঘণ্টার ওপর উড্ডয়ন করেছে যা একটি প্লেনের কারিগরিভাবে ত্রুটিমুক্ত প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আবহাওয়াও দুর্যোগপূর্ণ ছিল না। সবমিলিয়ে দুর্ঘটনাটি কিছুটা অস্বাভাবিকই মনে হয়। উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, বিমানের পেছনের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মিলেছে। মূল কাঠামোর জন্য তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জাভা সাগরে প্রচ- স্রোত ও ঢেউয়ের উদ্ধারকাজে সমস্যা হচ্ছে। সমুদ্রের তলায় কাজ করে এমন রোবটও নামানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদে উদ্ধারকাজ তদারক করছেন। লায়ন এয়ারের সিইও এডওয়ার্ড সিরেট বলেছেন, উড্ডয়নের আগের রাতেই সমস্যা দেখা দিয়েছিল ওই প্লেনটিতে। একদিন আগে সেটি বালি দ্বীপের দেনপাসার থেকে জাকার্তার মধ্যে উড্ডয়ন করেছিল। জাকার্তা বিমানবন্দরে ফ্লাইট ডাটা থেকে জানা গেছে প্লেনটি যাত্রাপথে অন্যকোন দিকে মোড় নেয়নি। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াই দুর্ঘটনার একমাত্র কারণ নয়। তারা ধারণা করছেন, প্লেনটিতে খুব দ্রুত কিছু একটা অঘটন ঘটে যায়।
×