ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বোধনের অপেক্ষায় বহু প্রতীক্ষিত খুলনা রেলস্টেশন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

উদ্বোধনের অপেক্ষায় বহু প্রতীক্ষিত খুলনা রেলস্টেশন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ কাক্সিক্ষত আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন খুলনাবাসীর কাছে এখন আর স্বপ্ন নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার এটির বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। খুলনাবাসীর বহু প্রতীক্ষিত আধুনিক রেলওয়ে স্টেশনের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আন্তর্জাতিক মানের রেল স্টেশন। ৬১ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে নান্দনিক শৈল্পিক নক্সায় নির্মিত খুলনা রেল স্টেশন এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। নবনির্মিত খুলনা রেল স্টেশন শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। নতুন এই রেল স্টেশনটি চালু হলে ট্রেনযাত্রীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে, অপরদিকে যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার মানও বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে খুলনাবাসীকে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরও একটি প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে। জনা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ সালে যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। তখন খুলনা ছিল যশোর জেলার অধীন মহকুমা। ১৮৮২ সালে যশোর থেকে খুলনা, বাগেরহাট এবং ২৪ পরগনা জেলার সাতক্ষীরাকে নিয়ে খুলনা জেলা গঠন করা হয়। যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের পর ১৮৮৫ সালে খুলনা থেকে প্রথম রেল গাড়ি চলাচল শুরু করে। পরবর্তীতে খুলনা বিভাগীয় শহরে পরিণত হয়। জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু পুরনো খুলনা রেল স্টেশনের সম্প্রসরণ বা নতুন করে নির্মাণ কাজ হয়নি। খুলনাবাসী অন্যান্য দাবির সঙ্গে শত বছরের অধিক পুরনো খুলনা রেল স্টেশনের আধুনিকায়নের জন্য অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে ‘খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ও ইয়ার্ড রিমডেলিং এবং বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের অপারেশনাল সুবিধাদি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা আর অগ্রসর হয়নি। সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালিশপুরে অনুষ্ঠিত জনসভায় খুলনা রেল স্টেশন আধুনিকায়নসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নের ঘোষণা দেন। এরপর নানা ধাপ পেরিয়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ‘খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ও ইয়ার্ড রিমডেলিং এবং বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের অপারেশনাল সুবিধাধির উন্নয়ন’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। খুলনা রেল স্টেশন ও স্টেশন ইয়ার্ড রিমডেলিং প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে খুলনা রেল স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। রেল মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন এ্যান্ড কো. লি. এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এবং প্রকল্পে নতুন পানির ওভার হেড ট্যাঙ্কি যুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ভবনসহ সংশ্লিষ্ট সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত খুলনাসহ এ অঞ্চলের অনেক প্রকল্প এর আগে বাস্তবায়ন হয়েছে। বহু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। খুলনায় নবনির্মিত আধুনিক রেল স্টেশনটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অবদান। খুলনার প্রাচীন রেল স্টেশনের পাশে যশোর রোডের কোল ঘেঁষা রেলওয়ের নিজস্ব প্রায় ৩০ একর জমিতে নতুন রেলস্টেশন ভবন, প্লাটফরম, ইয়ার্ডসহ সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। নগরীর যশোর রোডের পাওয়ার হাউস মোড় ও শিববাড়ী মোড়ের মাঝামাঝি স্থানে এই রেলস্টেশনের প্রধান ফটক। কাছেই মূল স্টেশন ভবন। ভবনটিকে ঘিরে চারদিকে দেয়া হয়েছে সীমানা প্রাচীর। প্রাচীরের ওপরের অংশে দেয়া হয়েছে গ্রিল। যশোর রোড দিয়ে যাওয়ার সময় সেই গ্রিলের ফাঁকা অংশ দিয়ে দেখা যায় মনোরম ও দৃষ্টিনন্দন নতুন রেল ভবন। সাদা নতুন ভবন ও লম্বা প্লাটফর্ম চলতি পথে সবারই নজর কাড়ছে। ঝকঝকে তিনতলা বিশিষ্ট মূল স্টেশন ভবন। ১ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের তিনটি প্লাটফর্ম। প্লাটফর্মের মাঝখানে নতুন রেললাইন বসানো হয়েছে। এখানে একই সঙ্গে ৬টি ট্রেন দাঁড়াতে পারবে। মূল স্টেশন ভবনের সামনে বিশাল এলাকাজুড়ে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ও বাগান করা হয়েছে। এছাড়া যাত্রী ও দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। প্রবেশপথ ও বের হওয়ার আশপাশে সৌন্দর্যবর্ধন বাতিও লাগানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন রেলস্টেশন ভবনের প্রথম তলায় থাকছে ৬টি টিকেট কাউন্টার, ওয়েটিংরুম ও সহকারী স্টেশন মাস্টারের রুম। দ্বিতীয় তলায় থাকছে স্টেশন মাস্টারের রুম, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংকের শাখা, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ওয়েটিং রুম, ফাস্ট ফুড এবং রেল কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা কক্ষ। তৃতীয় তলায় থাকছে রেলওয়ের প্রকৌশলীদের অফিস কক্ষ। এছাড়া ভবনে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। স্টেশন ভবন চত্বরে থাকছে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান এবং অধিক সংখ্যক গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, নবনির্মিত স্টেশন থেকে ট্রেন চালুসহ স্টেশনের অপারেশনাল কাজ উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করবেন। জাতীয় সংসদের রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। খুলনাবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি তিনি একে একে পূরণ করেছেন। খুলনায় আন্তর্জাতিক মানের এবং দৃষ্টিনন্দন রেল স্টেশনের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নতুন রেল স্টেশন চালু হলে যাত্রীদের বিড়ম্বনার অবসান ঘটবে। সেই সঙ্গে বাড়বে সেবার মান। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব নবনির্মিত খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কাজ শুরু হবে। রেলওয়ে খুলনার স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত প্রাচীন খুলনা রেল স্টেশন হতে বয়স্ক লোকদের ট্রেন উঠতে কষ্ট হয়। রেল স্টেশনের সামনে জায়গার স্বল্পতার জন্য প্রায়ই যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। নতুন স্টেশনটি চালু হলে এর অবসান ঘটবে। নবনির্মিত খুলনা রেলস্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের তদারককারী রেলওয়ে খুলনা স্টেশনের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) মোঃ হাফিজুর রহমান এ বিষযে জানান, খুলনা রিমডেলিং রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজ নক্সা অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। কয়েকদিন আগে নতুন স্টেশনের প্লাটফরম থেকে রেল চলাচলের জন্য পরীক্ষামূলক মহড়াও দেয়া হয়েছে।
×