ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যালারি চিত্রকে ‘জড়জীবনের বড় আয়োজন’

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 গ্যালারি চিত্রকে ‘জড়জীবনের বড় আয়োজন’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লতা-পাতার মাঝে উঁকি দিচ্ছে হলদে-সাদা ফুলের ঝাঁক। কলমদানিতে ঠাঁই নিয়েছে বেশ কিছু কলম। ভাজ করা দুটি বইয়ের উপর যেন শুয়ে আছে শিউলি ফুলের মালা। এমন অনুষঙ্গময় ক্যানভাসের নিচের অংশের দৃশ্যমান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি। আরেকটি চিত্রপটে রং তুলির আঁচড়ে পরিস্ফুটিত হয়েছে বাদ্যযন্ত্র। তানপুরার সঙ্গে সহাবস্থান করে নিয়েছে তবলা আর হারমোনিয়াম। আরেক ছবিতে পিতলের বাটিতে এক জোড়া পেয়ারার সঙ্গে লোভনীয়ভাবে জায়গা করে নিয়ে বেদানা। বাটির সামনে ছড়িয়ে থাকা পেয়ারাগুলো যেন পেয়েছে জীবন্ত রূপ। সেই ফ্রেমের ভেতর আরও আছে মদের বোতল, পানপাত্রসহ একাকী এক জাম্বুরা। এভাবেই প্রতিটি চিত্রকর্মে আকর্ষণীয়ভাবে ধরা দিয়েছে জড়জীবন। প্রাণহীন জীবনের সেসব শিল্পসম্ভারে মেলে প্রতীকী প্রাণপ্রবাহ। চিত্রকর্মগুলো শোভা পাচ্ছে ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে। শুক্রবার থেকে এই প্রদর্শনালয়ে শুরু হলো ‘জড়জীবনের বড় আয়োজন’ শীর্ষক প্রদর্শনী। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে উৎসর্গকৃত শিল্পায়োজনটিতে রয়েছে আশির অধিক বয়সী বরেণ্য শিল্পী থেকে ত্রিশোর্ধ বয়সের উদীয়মান চিত্রকরের ছবি। তেল রঙয়ের আশ্রয়ে স্টিল লাইফ নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় এই প্রদর্শনীতে ছবি এঁকেছেন নবীন-প্রবীণ বিয়াল্লিশ চিত্রশিল্পী। হেমন্ত সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আরেক খ্যাতিমান শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক চিত্রশিল্পী মোঃ মনিরুজ্জামান। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে রফিকুন নবী বলেন, সাধারণত কোন পেইন্টিংয়ের অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত স্টিল লাইফ। চারুকলায় পড়ার শিক্ষার্থীদের সাবজেক্ট হিসেবে থাকলেও পাস করার পর কেউ আর এ ধরনের ছবি আঁকে না। মূর্ত কিংবা বিমূর্ত হোক তখন তারা নানা ভাবনার ছবি আঁকে। ইউরোপী ধারায় এই চিত্রকলাটি একসময় খুব আঁকা হতো। চিত্রকলার ইম্প্রেশনিজমের সূচনালগ্নে বিশ্বখ্যাত শিল্পী ভানগঘ শুধু একটি চেয়ার ও জুতা ছবি এঁকে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। পোস্ট-ইম্প্রেশনিজম যুগে আরও বিকশিত হয় এই ধারাটি। একজন শিল্পীর অনুশীলনের পাশাপাশি রং চেনা ও তার ব্যবহার, টোনাল ভ্যারিয়েশন, কম্পোজিশনÑসবকিছুর সম্মিলন স্টিল লাইফের ছবি। সেই সমন্বয়ের পরিপূর্ণতা ঘটলেই কেবল আবেদনময় হয় জড়জীবনের চিত্রকর্ম। ৪২টি চিত্রকর্মে সজ্জিত প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন চুয়াল্লিশ চিত্রকর। আগামী ১০ নবেম্বর পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা থেকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কবিতা পরিষদের স্মরণে শামসুর রাহমান ॥ কবি শামসুর রাহমানের ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সবুজ চত্বরে যৌথভাবে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতি পরিষদ। এতে বিশিষ্টজনরা বলেন, দেশে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক রুচি তৈরি করেছেন শামসুর রাহমান। স্বাধীনতার আগে ও পরে সব আন্দোলনে তিনি কলম হাতে যেমন সক্রিয় ছিলেন, তেমনি রাজপথেও ছিলেন। তিনি তার কাব্যসম্ভার দিয়ে আজও এ দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন। স্মৃতি পরিষদের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, কবিতা পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি হাবীবুল্লাহ সিরাজী এবং সাংসদ কবি কাজী রোজী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শামসুর রাহমানের পুত্রবধূ টিয়া রাহমান। আনিসুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের কাব্যজীবনে শামসুর রাহমান এ দেশে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক রুচি তৈরি করেছেন। ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ সব প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি কবিতা লিখেছেন। যা প্রেরণা যোগায়। তিনি মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লেখনী দিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন। রামেন্দু মজুমদার বলেন, জীবদ্দশায় শামসুর রাহমানকে এ দেশের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে আখ্যা পেয়েছিলেন। আজও তিনি সেই আসনে রয়েছেন। তার কাব্যসম্ভার আমাদের অনুপ্রাণিত করে, নতুন আশায় বুক বাঁধতে সহায়তা করে। তার লেখায় ছিল রাজনৈতিক সচেতনতা। সব আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি কবিতা লিখেছেন। কিন্তু সেগুলো কখনও রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে নয়, শিল্পমানসম্পন্ন হিসেবে। তিনি এ সময় শামসুর রাহমানের স্মৃতিরক্ষার্থে স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানান। মুহাম্মদ সামাদ বলেন, দেশের সব সঙ্কটকালে শামসুর রাহমান কলম ধরেছেন, রাজপথে নেমেছেন। তিনি বাংলা কবিতা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতন করেছেন। দিনভর অনুবাদ উৎসব ॥ রাজধানীতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো অনুবাদ উৎসব। শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি দেশ-বিদেশে সাহিত্যিক ও লেখকদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বাংলা একাডেমির আঙ্গিনা। দেশের সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেয়ার প্রত্যাশায় ঢাকা ট্রান্সলেশন ফেস্টিভ্যাল শীর্ষক এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে উৎসব উদ্বোধন করবেন কবি কামাল চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৌরাঙ্গ মোহান্ত, লেখক কলামিস্ট রশিদ আশকীরি, অনুবাদক কবি ও ফিকশনিস্ট বীণা বিশ্বাস ও কবি ও প্রবন্ধকার হায়াত সাঈফ। অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে। অতিথিদের স্বাগত জানান ডিটিএফের ডিরেক্টর বীণা বিশ্বাস ও আহসান ইমান। তনুশ্রী পদক পেলেন বাকার বকুল ॥ ১৯৯৯ সালে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারান নাট্যধারার তরুণ নাট্যকর্মী তনুশ্রী গায়েন। তারুণ্য ও সৃজনশীলতার প্রতীক হিসেবে তনুশ্রীকে অনাগতকালের তারুণ্য ও সৃজনশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার উদ্দেশে ২০০১ সাল থেকে এই পদকের প্রবর্তন করা হয়। মঞ্চনাটকে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নাট্যধারা প্রবর্তিত তনুশ্রী পদক ২০১৮ পেলেন প্রাচ্যনাটের তরুণ নাট্যকর্মী বাকার বকুল। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে বাকার বকুলের হাতে এই পদক তুলে দেয়া হয়। এ আয়োজনের প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাট্যধারার প্রধান সম্পাদক মাসুদ পারভেজ মিজু। রামেন্দু মজুমদার বলেন, তনুশ্রী ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান নাট্যকর্মী। তার ছিল অসমাপ্ত জীবন। অল্প বয়সে মারা যাওয়ার কারণে তিনি অনেক কিছু করতে পারেননি। তার স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশে নাট্যধারার সহকর্মীরা এ পদক চালু করেছে। প্রতিশ্রুতিশীল অনেক তরুণ নাট্যকর্মী এ পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের মধ্য দিয়েই তনুশ্রী গায়েন বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করে বাকার বকুল বলেন, থিয়েটারকে আমাদের সমাজ ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ মনে করে। এ ধরনের পদক কিংবা পুরস্কার পেলে সমাজে কিছুটা হলেও মূল্যায়ন করে। কিন্তু একজন নাট্যকর্মী পদক বা পুরস্কারের আশায় কাজ করে না। আমিও মনে করি না, পুরস্কারের আশায় কোন কাজ করেছি। তারপরও এ পুরস্কার আমাকে আমার কাজে অনুপ্রাণিত করবে। কবি মোহাম্মদ রফিকের জন্মদিন উদ্যাপন ॥ আনন্দ আয়োজনে উদ্যাপিত হলো প্রখ্যাত কবি মোহাম্মদ রফিকের জন্মদিন। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় কবির বাসভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতিপত্র ‘ভূমি’। কবির ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের আয়োজনে মোহাম্মদ রফিককে নিয়ে সাজানো ভূমির বিশেষ সংখ্যার উন্মোচন করা হয়। সাময়িকীটির মোড়ক উন্মোচন করেন কবি নিজেই। জন্মদিনে অনুষ্ঠানে কবির কথা বলেন কবিতা, জীবন ও বাংলা সাহিত্যের পথচলা নিয়ে। গীতাঞ্জলি সম্মাননা পেলেন তিন গুণী ॥ পথচলার চতুর্দশ বছর পার করল উত্তরার সাংস্কৃতিক সংগঠন গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমি। এ উপলক্ষে প্রদান করা হয়েছে গীতাঞ্জলি সম্মাননা পদক। দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা পেয়েছেন চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর, কবি নির্মলেন্দু গুণ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিদুল হক। সংগঠনের চতুর্দশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিন শুক্রবার এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। উত্তরা স্কিটি অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হুয়ারেন লিনেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর সাহেদ চৌধুরী এবং এনন টেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস। সম্মাননা প্রদান শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ শনিবার একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। শিল্পকলায় পুতুলনাট্য প্রদর্শনী ॥ থাইল্যান্ডের ফুকেটে অনুষ্ঠিতব্য ‘ফুকেট হারমোনি’ শীর্ষক বিশ্ব পুতুলনাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুতুল নাট্যদল। ১ থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত্য এ উৎসবে অংশগ্রহণ উপলক্ষে বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের পরিচালনায় ‘হাতুরে ডাক্তার’ ও ‘বেড়া’ শীর্ষক দুটি পুতুলনাট্য প্রযোজনা তৈরি করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে প্রযোজনা দুইটির বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় শিশু আবৃত্তি উৎসবের সমাপ্তি ॥ ‘আমি হবো সকাল বেলার পাখি’ স্লোগানে দুই দিনব্যাপী জাতীয় শিশু আবৃত্তি উৎসবের শেষ দিন শুক্রবার সকালে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাটি শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে আবার শিশু একাডেমিতে এসে শেষ হয়। এ সময় পরিষদভুক্ত বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠনের শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত হয় শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণ। বিকেলে দ্বিতীয় দিনের শেষ পর্বে শুরু হয় শিশুদের দলীয় পরিবেশনা।
×