ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বৃক্ষপ্রেমী নূরুল এখন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৬ অক্টোবর ২০১৮

বৃক্ষপ্রেমী নূরুল এখন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী

প্রায় ৩৩ বছর আগে কোন একদিন নিজ বাড়িতে সখের বশে পেঁপের চারা উৎপাদন শুরু করেন। তারপর তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন, অনেক মানুষ তাঁর কাছ থেকে পেঁপের চারা কিনতে আসেন। পরে ধীরে ধীরে তিনি পেঁপের চারার উৎপাদন বৃদ্ধি করে নার্সারি ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েন। বৃক্ষের প্রতি প্রেমই তাঁকে এই ব্যবসায় নিয়ে এসেছে। এখন তিনি জেলার একজন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী। কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগরের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম হিংকু মিয়া জানান, প্রথম জীবনে তিনি ঠিকাদারি পেশায় ছিলেন। ইট-পাথর, রড-সিমেন্ট নিয়েই সে সময় ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু ইট-পাথরের কাঠিন্য তাঁকে কখন ছুঁতে পারেনি। বরং ঠিকাদারির কাজে যখনি কোথাও যেতেন, সেখান থেকেই নিয়ে আসতেন ফুল ও ফলজ গাছ। প্রায় ৩৩ বছর আগে মাত্র তিন হাজার টাকা মূলধন নিয়ে শহরের কালীবাড়ীর পতিত জমিতে ‘পূষণ নার্সারি’ নাম দিয়ে তিনি সর্বপ্রথম এ ব্যবসা শুরু করেন। এক সময়ে ব্যবসার স্থান পরিবর্তন করে তিনি হয়বতনগর জমিদার বাড়িতে ২ একর ৫৬ শতাংশ পতিত জমি লিজ নিয়ে সেখানে নার্সারি করেন। পাশাপাশি জেলা সদর হাসপাতালের সামনের পতিত জমি ও গুরুদয়াল কলেজের (বর্তমানে যেখানে ওসমান গণি ছাত্রাবাস হয়েছে) পতিত জমিতে নার্সারি করেন। জায়গা স্বল্পতার কারণে ওই সমস্ত স্থানে এখন আর নার্সারি নেই। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলা জজকোর্ট চত্বরে ৫০-৬০ শতাংশ জমিতে তাঁর বৃক্ষময় উদ্যানসম নার্সারি। বিভিন্ন রকম বাহারি ফুল ও ফল গাছ দিয়ে সাজানো এই নার্সারি সকলের নজরকাড়ে। নার্সারিতে বারোমাসি কাঁঠালের কলম চারা, উন্নত জাতের শরিফা, আলু বোখরা, রাম বোটাম, ডরিয়ন, থাই সফেদা, স্ট্রবেরি পেয়ারা, ডেইয়া ফল, বেরাকাটা পেয়ারা, ড্রাগন ফল, পিউলীসহ বিভিন্ন জাতের ফলজ গাছের চারা উৎপাদন করে আসছেন নূরুল ইসলাম হিংকু মিয়া। এছাড়াও বিভিন্ন জাতের মসলা জাতীয় গাছের চারা এবং বাহারি ফুলের চারা উৎপাদন করা হয় তাঁর পূষণ নার্সারিতে। এমনকি বিলুপ্ত প্রায় ঔষধি ফলগাছের চারা লাভলাভ লুকলুকি এখানে উৎপাদন করা হয়। আদালতে আসা বিভিন্ন এলাকার মানুষজন ‘পূষণ নার্সারি’ থেকে বাহারি ফুল ও ফল এবং মসলা জাতীয় গাছ কিনে নিয়ে যান। এছাড়াও জেলার সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন দফতর ও শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন আসেন এই নার্সারি থেকে গাছের চারা কিনতে। ইতোমধ্যে জেলার সফল নার্সারি ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। নার্সারি ব্যবসার আয় দিয়ে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালাচ্ছেন। বয়সের কারণে তিনি আগের মতো সময় দিতে না পারলেও একমাত্র ছেলে পারভেজ এখন সার্বক্ষণিক এ ব্যবসায় নিয়োজিত থেকে বাবাকে সাহায্য করছেন। বৃক্ষের প্রতি নূরুল ইসলাম হিংকু মিয়ার প্রেম আজ তাঁকে একজন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাঁর সফলতা দেখে কিশোরগঞ্জের অনেক বেকার যুবকরা নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন নার্সারি ব্যবসায়। -মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ থেকে
×