ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্থায়ী এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় দুবাইয়ের কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

স্থায়ী এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় দুবাইয়ের কোম্পানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (ইনোক) বাংলাদেশে একটি স্থায়ী তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) টার্মিনাল নির্মাণে প্রস্তাব দিয়েছে। জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবে স্থায়ী এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানিয়েছে কোম্পানির নতুন ব্যবসা সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান অলিভার স্টিন। দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল থাকলেও কোন এলপিজি টার্মিনাল নেই। বিপিসি সূত্র বলছে, দুবাই ভিত্তিক কোম্পানিটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে যৌথভাবে এলপিজি টার্মিনালটি নির্মাণ করতে চায়। সমান অংশীদারিত্বে টার্মিনালটি নির্মাণ হতে পারে। এতে দেশের এলএনজির দর প্রতি ১২ কেজির বোতলে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে। জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (পরিকল্পনা এবং পরিচালন) সৈয়দ মোহম্মাদ মোজাম্মেল হক বলেন, ইনোক আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা বিষয়টি বিবেচনা করেছি। আমরা তাদের আলোচনার জন্য আসতে বলেছি। আমরাও এলপিজি টার্মিনাল করতে চাই। এমন টার্মিনাল করা গেলে বড় জাহাজ আসতে পারবে। এতে এলপিজির পরিবহন ব্যয় কমে আসবে এবং ভোক্তা পর্যায়ে কম দামে এলপিজি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবিষ্যতে রান্নার জ¦ালানির পুরোটাই মেটাতে হবে এলপিজির দিয়ে। কারণ আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমে আসবে। এর বিপরীতে রান্নার জন্য দামি এলএনজি সরবরাহ করাও সম্ভব হবে না। ফলশ্রুতিতে চাইলেও রান্নার জন্য গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। ফলে এখন থেকেই এর প্রস্তুতি নেয়া জরুরী। যদিও সরকার এখনও পর্যন্ত এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণের মতো দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেয়নি। দেশে এলপিজির চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার এলপিজির সম্প্রসারণে নানামুখী উদ্যোগও নিচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশে অটো গ্যাস চালু হয়েছে। যা মূলত পরিবহনের জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সঠিক উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা নিলে অটোগ্যাস সিএনজি এবং পেট্রোলের চেয়ে অনেক সস্তায় দেয়া সম্ভব। সঙ্গত কারণে দেশে এলপিজির দর কমলে গ্রামের বাসিন্দাদের পাশাপাশি শহরে উচ্চবিত্তরাও লাভবান হবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন দেশে এলপিজির অতিরিক্ত দরের প্রধান কারণই হচ্ছে খনি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে অতিরিক্ত ব্যয় হওয়া। দেশে কোন এলপিজি টার্মিনাল না থাকার দরুন বাংলাদেশে সাধারণত পাঁচ হাজার টনের জাহাজ আসে। তবে কোন টার্মিনাল গড়ে তোলা গেলে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টনের জাহাজ আনা সম্ভব। বিপিসি বলছে, ছোট জাহাজের কারণে প্রতিটনে অন্তত ৭০ ডলার পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় হয়ে থাকে। এই ব্যয় টার্মিনাল নির্মাণ করলে কমানো সম্ভব। যাতে এলপিজির ১২ কেজির বোতলে অন্তত ১৫০ টাকা কমে আসবে। এখন যেখানে এক হাজার টাকায় ১২ কেজির বোতল বিক্রি হচ্ছে সেখানে এই দাম নেমে আসবে ৮৫০ টাকায়। টার্মিনালটি স্থায়ী হওয়ার কারণে সরবরাহ নিয়েও দুশ্চিন্তা থাকবে না। এ ধরনের টার্মিনালে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এলপিজি এনে রাখা হয়। পরে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। বেসরকারী উদ্যোক্তারাও এখান থেকে এলপিজি কিনে বিপণন করতে পারবেন। এতে তাদেরও আর এলপিজি আমদানি করতে হবে না। দেশে এখন এলপিজির মোট চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু এর বিপরীতে দেশের এলপিজি প্ল্যান্টগুলো সরবরাহ করতে পারে সর্বোচ্চ সাত লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে বিপুল ঘাটতি রয়েছে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ার প্রেক্ষিতে সারাদেশের গৃহস্থালিতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন নতুন আবাসনে রান্নাঘরের বিকল্প জ¦ালানি হিসেবে এলপিজিই একমাত্র উপায়। এলপিজির ব্যবহার সহজ করার জন্যও উদ্যোক্তারা নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে এসব কিছুর আগে এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী বলে মনে করা হয়।
×