ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনে ও ফ্যাশনে শরত

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জীবনে ও ফ্যাশনে শরত

শরতের কোমলতা জীবন ও মনে অন্যরকম স্পন্দনের সূচনা করে। জীবন ধারায় শরত আসে ‘কাশবনের কন্যা’র মতো নরম পদব্রজে। শরত মানেই কাশফুল, নদী রঙিন পালতোলা নৌকো, মেঘ, মিষ্টি রোদের সন্ধি। শরত এসেছে, তাই নিয়ে লিখেছেন- রেজা ফারুক স্নিগ্ধ মনোরম রোদেলা দুপুর গড়িয়ে যখন আঙিনায় বিকেলের মৃদু হওয়ার গুঞ্জরণ শুরু হবে ঠিক তখনই, এক পশলা ধুম বৃষ্টির ধূসর রঙের আবেশ ছড়ানোর পর প্রকৃতি দারুণ সবুজ আর আকাশ হয়ে ওঠে গভীর নীলাভ। দূরে, নদীর কিনারে সাদা পরীর মতো দুলে ওঠে থোকা থোকা আলুলায়িত কাশফুলের চূড়া নদীতে রঙিন পালতোলা নৌকা ছুটে চলেছে নিজস্ব গন্তব্যের দিকেÑ অতিপ্রাকৃতিক এই নয়নাভিরাম দৃশ্যই বুঝিয়ে দেয় ঋতুটা এখন শরত। শরতের এই যে নরম আর নিবিড় আমেজ তা দৈনন্দিন জীবনেও কোমল দোলা দিয়ে যায়। চন্দ্রডোবা ভোরে হালকা শীতার্দ্র অনুভূতি, ঘাসে গাছের পাতায় বিন্দু বিন্দু শিশির কুচি আর সন্ধ্যায় হিমেল বাতাসে শীতের ছোঁয়া দিয়ে যাওয়া শরতেরই এক অভূতপূর্ব বৈশিষ্ট্য। খাল-বিল নদীর কূলপ্লাবি রাশি রাশি জলধারা বিজড়িত বর্ষার বিদায় পর্ব শুরু হতে না হতেই শরত এসে কড়া নেড়ে তার উপস্থিতিকে জানান দেয় স্বমহিমায়। শরতের যেমন রয়েছে একটা নিজস্ব ইমেজ তেমনি এই শরতেই গ্রামে-গঞ্জে শরত মেলাও বসে। যা আমাদের বাঙালী সংস্কৃতির আবহমান ঐতিহ্যের অংশ। শরতের প্রধান প্রতীক কাশফুল হলেও শিউলি, শেফালি, হাসনাহেনা, কামিনীসহ প্রভৃতি ফুলের গন্ধে পরিবেশে সৃষ্টি হয় এক অন্যরকম সুশোভিত গন্ধমদির আবহ। যা শুধু জীবন ধারা নয় মনকেও প্রফুল্ল করে তোলে। দিগন্তে শাদা মেঘ সঞ্চারিত চিবুকে নীলাচ্ছিন্ন মিষ্টি রোদের কিরণ ভিন্ন এক রহস্যময় ভাললাগাকে দৃষ্টির সীমায় এনে যেন দাঁড় করিয়ে দেয়। নদী নৌকা কাশফুল, রঙিন প্রজাপতির চঞ্চল ওড়াওড়ি শরতকে করে তোলে আকণ্ঠ মধুময়। নগর জীবনে শরত ব্যস্ত কর্মমুখর নগর জীবনে ঋতুর উপস্থিতিটা খুব কি অনুভূত হয়। কিংবা অনুভব করার ফুরসত মেলে তারপরও কিন্তু প্রাকৃতির গতি থেমে যায় না। সে তার নিয়ম মতোই এসে চলে যায় নিজের পরিম-লে বৃত্তে। ১ বৈশাখ বর্ষা কিংবা বসন্ত নগর সংস্কৃতিতে যে আলোড়ন তুলে যায় শরতের বেলায় ততটা নয়। ভীরু নরম পদব্রজে আসে শরত। আবার সেভাবেই হঠাৎ কোনরকম পূর্বাভাস না দিয়েই চলে যায়। কখনো কখনো যদি সন্ধ্যায় বাড়ির ছাদের রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশে চোখ তুলে তাকালেই জ্যোৎস্নাচ্ছাদিত চাঁদ আর জ্যোৎস্নার কিরণ ঝরেপড়ার অপূর্বদৃশ্য মনটা কিছুক্ষণের জন্য হয়ত ফুরফুরে হয়ে ওঠে অবশ্য এই অনুরণন মন থেকে মুছে যেতেও সময় লাগে না। নগরের জীবনস্পন্দনে শরতের প্রভাব তেমন না পড়লেও বিশাল বাংলার গ্যাস গ্রামে শরতের নিবিড় ছায়া যেন অপরিসীম ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে। নগরে বসবাসরত নতুন প্রজন্ম অদূর ভবিষ্যতে ষড়ঋতুর এই বাংলার মায়াবী রূপের ঘটনাবলী কি শুধু পাঠের মাধ্যমেই জানবে। নাকি নতুন এই প্রজন্ম খুঁজে নেবে তার আপন ভুবন। প্রকৃতি আর মৃত্তিকার ঘ্রাণ শুঁকে নিজের শিকড়ের সন্ধানে উৎসাহিত হবে। গ্রাম বাংলার সঙ্গে তাদের পরিচিত করে তোলার গ্রামের সঙ্গে নগরের সেতু রচনার কাজটিও লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে বাংলার নৈসর্গিক ছবিটাও। এক্ষুনি করে নেয়াটাকি দরকার নয়। ফ্যাশনে শরত ঋতুভিত্তিক ফ্যাশনের ক্ষেত্রটা দিন দিন বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি ফ্যাশনেবল স্মার্ট হয়ে ওঠার বিষয়টাও দৈনন্দিন জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে। আর সেটাকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলোও সেজে উঠেছে নতুন ডিজাইনের নতুন পোশাকের রঙ ঝলমল আবেশে। বর্ষার ঘন বর্ষণের নেকাবে শরত তার শুভ্রনীল মখমলের পর্দার আড়াল থেকে আটপৌড়ে ভঙ্গিতে এসে দাঁড়িয়েছে। শহরের পেভমেন্টে আর তাই বিভিন্ন আউটলেটগুলো নানা ডিজাইন ও মোটিভের পোশাকে হ্যান্ড পেইন্টের শাড়িতে শরতের চিরায়ত রূপোজ্জ্বলতা ফুটিয়ে তুলে তা বিপণনের সুব্যবস্থা নিয়েছে। আনেকেরই হয়ত গ্রামে গিয়ে শরতের সান্নিধ্যে লাভ হয়ে উঠে না। শরতের আবহ উৎকীর্ণ বা চিত্রিত ড্রেসের মাঝেই খুঁজে নেয় এক-আধটু শরতাঙ্কিত আমেজ। হৃদয় দিয়ে অনুভব করবে নদীমাতৃক বৈচিত্র্যম-িত এই বাংলার। বাংলাদেশের অনুপম রূপ-লাবণ্য ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের গভীর টান। ছবি : রুদ্র ইউসুফ মডেল : ইয়াসিন ও সিমু পোশাক : কাপড়-ই-বাংলা
×