ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভুটানের বিপক্ষে স্মরণীয় জয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভুটানের বিপক্ষে স্মরণীয় জয়

রুমেল খান ॥ ১০, ২৩, ৩২ এবং ৩৩ ...। কিছু বোঝা গেল কী? একটু সবুর করুন, এখনই বুঝে যাবেন। ১০ ম্যাচ পর ২৩ মাসের একরাশ যন্ত্রণা এবং ৩২ মাসের তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো প্রতীক্ষার অবসান হলো মঙ্গলবার। স্মরণীয়-মধুর এবং দায়মুক্তির জয় কুড়িয়ে নিয়েছে ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। স্মরণীয়-মধুর-দায়মুক্তির কেন? বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সাফ সুজুকি কাপের ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশ যে ভুটানকে হারাল ২-০ গোলে, তাতে করে অনেক হতাশা, শঙ্কা এড়ানো গেছে। সেই সঙ্গে জাতীয় দলও দায়মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি জবাব দিতে পেরেছে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের নানা কটূক্তি আর বিদ্রƒপ আর কঠোর সমালোচনার। ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের প্লে অফ পর্বে স্বাগতিক ভুটানের কাছে ৩-১ গোলের লজ্জাজনক হারের পর প্রগাঢ় অমানিশায় নিপতিত হয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল। কেননা ওই এক হারেই পরের তিন বছরের জন্য এএফসির সব ধরনের ফুটবল থেকে নির্বাসিত হয়ে যায় লাল-সবুজরা। শুধু তাই নয়, এই ম্যাচের পর আরও ১০ ম্যাচ এবং দীর্ঘ ২৩ মাস পর সেই প্রতিপক্ষকে আবারও নিজেদের মাঠে বাগে পেয়ে হারানোর যে অনাবিল চিত্তসুখ পেলেন সুফিল-জামালরা, তার কোন তুলনা হয় না। খেলা দেখতে আসা দশ হাজারেরও বেশি দর্শক অপার আনন্দ নিয়ে ফিরে গেছেন ঘরে। গতকাল ভুটানীদের হারিয়ে তাদের ‘ফুটানি’ মজিয়ে আরও অনেক পরিসংখ্যানকে সামনে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ দল। এই জয় এল দীর্ঘ ৩২ মাস পর! লাল-সবুজদের সর্বশেষ জয়টি এসেছিল ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪-২ গোলে। আর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দল জিতল দীর্ঘ ৩৩ মাস পর! ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে বাংলাদেশ নেপালকে হারিয়েছিল ১-০ গোলে। তাছাড়া সাফে ভুটানের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ড অক্ষুণœ রাখল বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৫ সাফে (ভারতের কেরলে অনুষ্ঠিত) গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ। এ নিয়ে ভুটানের বিপক্ষে অষ্টম ম্যাচে অবতীর্ণ হলো বাংলাদেশ। এর ৫টিতেই জিতল বাংলাদেশ। ভুটানের জয় ১টিতে, আর বাকি ২ ম্যাচ ড্র হয়। জয়ের মতো গোলসংখ্যায়ও এগিয়ে বাংলাদেশ (১৭-৫)। এই জয়ে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে উঠল বাংলাদেশ। তাদের পয়েন্ট ৩। পাকিস্তানের সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট হলেও তারা গোল তফাতে পিছিয়ে থাকায় আছে দুই নম্বরে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচটি ছিল দিনের দ্বিতীয় ম্যাচ। এর আগে পাকিস্তান-নেপাল ম্যাচ দিয়ে পর্দা ওঠে সাফ সুজুকি কাপের দ্বাদশ আসরের। ওই ম্যাচে পাকিস্তান ২-১ গোলে নেপালকে হারিয়ে শুভসূচনা করে। এই জয় পাকিস্তানের জন্য নিঃসন্দেহে স্মরণীয়। কারণ ঘরোয়া সমস্যার কারণে তিন বছর এবং ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে এক বছর তারা যে কোন ধরনের ফুটবল থেকেই দূরে ছিল। উল্লেখ্য, এবারের এশিয়ান গেমসেও নেপালকে গ্রুপ পর্বে হারিয়েছিল পাকিস্তান। মজার ব্যাপারÑ এখানেও স্কোরলাইন ছিল একই, ২-১! বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচ প্রসঙ্গে ফেরা যাক। ২০১৬ সালের যে ম্যাচে বাংলাদেশ ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল ওই দলের চার ফুটবলার এবার সাফে বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। এবার এশিয়ান গেমস ফুটবলে চমৎকার নৈপুণ্য প্রদর্শন করা ১৩ ফুটবলার আছেন সাফের দলে। মূলত তারুণ্যনির্ভর দলই গঠন করেছেন দলের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। মঙ্গলবারের ম্যাচে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল বল নিয়ন্ত্রণে (৫৫%-৪৫%), কর্নারে (৩-১), অফসাউডে (১-০) এবং ফাউলে (৮-৫)। সমতায় ছিল শট অন টার্গেটে (২-২)। কোচ যেভাবে চেয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই খেলেছেন জামাল ভূঁইয়ারা। ডিফেন্স মজবুত রাখা, মাঝমাঠে বল নিয়ন্ত্রণ, বেশিরভাগ সময় ছোট পাসে খেলা এবং উপর্যুপরি আক্রমণ শাণানো। যদিও ভুটান হারলেও মন্দ খেলেনি। তাছাড়া তারাও গোল করার একাধিক সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের গোলরক্ষক এবং ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় গোলবঞ্চিত হয়। ম্যাচের আগের দিন কোচ জেমি ডে দলের খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করেছিলেন এই বলে, ‘আমার দলের ২০ জনই অধিনায়ক!’ ম্যাচ ডে’তে জামাল ভূঁইয়ার হাতে অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটা ছিল ঠিকই, তবে পুরো বাংলাদেশ দল সত্যিই অধিনায়কের ভূমিকাতেই ছিল। ‘কথায় নয়, যা করার মাঠেই করে দেখাব’Ñ প্রি ম্যাচ কনফারেন্স শেষে বলেছিলেন দলের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার নাসির উদ্দিন চৌধুরী। মুখে প্রতিশোধের ম্যাচ না বললেও হৃদয়ে কষ্টের ক্ষত গোপন ছিল সেটা ফুটে উঠেছে ম্যাচ ডে’তেই। প্রথম মিনিটেই কর্নার আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। ডিফেন্ডার ওয়ালী ফয়সালের কর্নার বক্সে পেয়ে লাফিয়ে উঠে হেড নেন সাদ উদ্দিন। তাকে অবৈধভাবে বাধা দেন ভুটানের এক ডিফেন্ডার। পেনাল্টি পায় লাল-সবুজরা। ৩ মিনিটে দক্ষ স্পট কিকে ভুটানের জাল কাঁপান ডিফেন্ডার তপু বর্মণ (১-০)। ৪৬ মিনিটে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের কোনাকুনি ভলি শটে শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মাহবুবুর রহমান সুফিল (২-০)। শেষ পর্যন্ত রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে বহু অধরা কাক্সিক্ষত জয় পায় জয় কুড়িয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বাড়ি ফেরে লাল-সবুজরা, যাদের পরবর্তী ম্যাচ আগামী বৃহস্পতিবার, পাকিস্তানের বিপক্ষে।
×