ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মালয়েশিয়ার সিদ্ধান্ত বোঝার চেষ্টা করছে সরকার

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৮ আগস্ট ২০১৮

মালয়েশিয়ার সিদ্ধান্ত বোঝার চেষ্টা করছে সরকার

অনলাইন রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ারে শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা থাকার পরও সমস্যাটা কোথায়- সরকার তা বোঝার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম। মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে নানামুখী আলোচনার মধ্যে মন্ত্রী একথা জানিয়েছেন। অবশ্য মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ- এটা মানতে রাজি নন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী। মঙ্গলবার ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমিক নেওয়া বন্ধের বিষয়টি তারা জানতে পেরেছেন সংবাদমাধ্যম থেকে। “আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টা বোঝার জন্য নোট ভারবাল পাঠিয়েছি। আমাদের হাই কমিশনও যোগাযোগ রেখেছে। আমরা বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছি।” দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বাজার। সরকারি হিসাবে পাঁচ লাখের বেশি নিবন্ধিত বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন; যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় ওই দশটি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে। কিন্তু প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র ওই দশ এজেন্সিকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বছরে অন্তত ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর গত জুনে ওই ব্যবস্থা স্থগিত করে দেশটির নতুন সরকার। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ গত ১৬ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার সরকার জনশক্তি আমদানির নতুন একটি পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে, যে নিয়ম সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য হবে এবং সব লাইসেন্সধারী এজেন্টই শ্রমিক নেওয়ার সুযোগ পাবে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, “মালয়েশিয়ায় ডিমান্ডও আছে শ্রমবাজার খোলাও আছে। তাদের সাথে কি জন্য যে ইন্টারেকশন হচ্ছে না, সেটা তো আমরা বুতে পারছি না।” দশ এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দশ এজেন্সিকে মালয়েশিয়া সরকার নিয়ন্ত্রণ করেছে, তাদের তারা নিয়োগ দিয়েছে, আমরা দিই নাই। দশজনের সিন্ডিকেশনের বিরুদ্ধে আমি সব সময়ই ছিলাম, এখনও আছি। আমি সিন্ডিকেশনে বিশ্বাস করি না।” গত জুনে মালয়েশিয়ার স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ এজেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে মাথাপিছু সর্বোচ্চ দুই হাজার রিংগিত খরচ হওয়ার কথা। সেখানে এজেন্টরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার রিংগিত আদায় করছিল। এর অর্ধেক টাকা যাচ্ছিল সেই সিন্ডিকেটের হাতে, যার বিনিময়ে তারা ওয়ার্ক পারমিট ও উড়োজাহাজের টিকেটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছিল। এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “শো কজ করব তাদেরকে।” মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “এটা খোলা আছে, খোলাই থাকবে।” “ওই দেশের যারা মন্ত্রী আছেন… বিশেষ করে ম্যানপাওয়ার সেক্টরে যিনি আছেন, বাংলাদেশের প্রতি উনার অনেক সম্মান আছে, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তার অনেক মমত্ববোধ আছে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের শ্রমিকের চাহিদা অব্যাহতভাবে সেখানে থাকবে।” নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী বৈঠকেই এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হবে। ‘জিটুজি প্লাস’ যদি বন্ধও হয়, বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর জন্য ‘জিটুজি’ পদ্ধতি চালু থাকবে। যারা এরই মধ্যে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, তাদের কী হবে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের সচিব নমিতা হালদার বলেন, যাদের ভিসা প্রক্রিয়া ৩০ অগাস্টের মধ্যে শেষ হবে, তাদের কোনো সমস্যা হবে না। এরকম ৩০ হাজারের মত শ্রমিক আছেন। কিন্তু যারা রিক্রুটিং এজেন্সিকে টাকা দিয়ে ফেলেছেন কিন্তু ভিসা প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি, তাদেরকে এজেন্সির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টের উদ্যোগে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী। তিনি বলেন, সৌদি আরবে কর্মীর চাহিদা কমে গেছে। তবে সেখান থেকে যে হারে নারী কর্মীদের ফিরে আসার কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। মন্ত্রী বলেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা স্কিলড হয় না, ক্লাস সিক্স পাস মহিলাও পাওয়া যায় না। দেখা যায় ওখানে গিয়ে একটা দুটো ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করবে এটাও পারে না। আবার ওখানে অনেকে রুটি খায়… ভাত দেয় না বলে অনেকে চলে আসে। “এভাবে বিভিন্ন কারণে আমাদের কর্মীরা চলে আসে। আমাদের দুর্নাম হয় ।” তিনি বলেন, সরকারের মাধ্যমে যারা যাচ্ছেন, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হয় বলে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যারা বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রেই সমস্যা হচ্ছে।
×