ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বছরে রফতানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলারে যাবে

রফতানি বহুমুখীকরণ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৩ আগস্ট ২০১৮

রফতানি বহুমুখীকরণ হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ পোশাক খাতের উপর থেকে নির্ভরতা কমাতে রফতানি বহুমুখীকরণ করা হচ্ছে। ধানের খড় থেকে উৎপাদিত হস্তজাত পণ্য থেকে শুরু করে সামুদ্রিক জাহাজ রফতানির উপর নগদ সহায়তা পাচ্ছে উদ্যোক্তারা। বর্তমান ৪৫টি পণ্য রফতানিতে সরাসরি নগদ সহায়তা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি পণ্যের উপর নগদ সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তাব রয়েছে। তিন বছরের মধ্যে দেশের রফতানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে হবে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পোশাক খাতের পাশাপাশি নতুন পণ্য রফতানি ও নতুন বাজার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। জানা গেছে, পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে প্রকৃত উদ্যোক্তারা যাতে নগদ সহায়তা পান সেটা নিশ্চিত করা হবে। নগদ সহায়তার নামে কোন দুর্নীতি ও অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে সরকার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবে কম্পন্ট্রোলার অডিটর জেনারেল-সিএজি ও দুর্নীতি দুমন কমিশন-দুদক। গত বছর নগদ সহায়তার নেয়ার নামে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। সিএজির এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে রফতানিকারকদের অপকৌশলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শুধু নয় তাই ইতোপূর্বে সুপারি রফতানির নামেও নগদ সহায়তার অর্থ নিয়ে কেলেঙ্কারির তথ্য পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে, সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রফতানি আয় বাড়াতে পোশাক রফতানির উপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে নতুন পণ্য রফতানির দিকে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন, তাতে নতুন পণ্য রফতানি ও নতুন বাজার অনুসন্ধানের উপর জোর দিয়েছেন। ওই সময় তিনি জানান, রফতানি বহুমুখীকরণ করা প্রয়োজন। আর এ কারণে এবার আরও ৯টি পণ্যের উপর নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে মাদক ও অস্ত্র ছাড়া যেকোন পণ্য রফতানির উপর নগদ সহায়তা দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এক্ষেত্রে নতুন বাজারে কোন পণ্য রফতানি সম্ভব হলে সেক্ষেত্রেও নগদ সহায়তা দেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রফতানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে গত বছর ৩৬টি পণ্য রফতানিতে নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমান গরু-মহিষের নাড়ি-ভুঁরি, শিং ও রগ রফতানির বিপরীতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে ১০ শতাংশ হারে। শস্য ও শাক সবজির বীজ রফতানির বিপরীতে ভর্তুকি দেয়া হয় ২০ শতাংশ হারে। পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন রফতানির বিপরীতে ভর্তুকি দেয়া হয় ২০ শতাংশ। এছাড়া কৃষিপণ্য (শাক-সবজি ও ফলমূল) ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানির বিপরীতে ২০ শতাংশ ভর্তুকি, হাল্কা প্রকৌশল পণ্য রফতানিতে ১৫ শতাংশ, হালাল মাংস রফতানিতে ভর্তুকি ২০ শতাংশ, জাহাজ রফতানিতে ১০ শতাংশ, পেট বোতল-ফ্লেক্স রফতানিতে ১০ শতাংশ, ফার্নিচার রফতানিতে ১৫ শতাংশ, প্লাস্টিক দ্রব্য রফতানিতে ১০ শতাংশ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, পাটজাত দ্রব্যাদির মধ্যে বৈচিত্র্যকৃত পাট পণ্য রফতানিতে ২০ শতাংশ হারে, পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্য হেসিয়ান, সেকিং ও সিবিসি রফতানিতে ১০ শতাংশ এবং পাট সুতা ইয়ার্ন ও টোয়াইন রফতানিতে ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয়া হয়। চামড়াজাত দ্রব্যাদি রফতানিতে নগদ সহায়তা দেয়া হবে ১৫ শতাংশ হারে। এছাড়া সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরিত শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার রফতানিতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে ১০ শতাংশ হারে। এছাড়া রফতানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে ৪ শতাংশ, বস্ত্র খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা ৪ শতাংশ, ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রফতানিকারকদের জন্য বিদ্যমান ৪ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা ২ শতাংশ, নতুন পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণে ৩ শতাংশ সহায়তা, হোগলা খড় আখের ছোবড়া দিয়ে তৈরি পণ্য রফতানিতে নগদ সহায়তা দেয়া হবে ১৫ শতাংশ। আলু রফতানি খাতে নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে ১০ শতাংশ। অন্যদিকে, ৮ ধরনের হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রফতানিতে নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া দেশে উৎপাদিত কাগজ ও কাগজ জাতীয় পণ্য রফতানির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে এবং আগর ও আতর রফতানিতে ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সফটওয়্যার, আইটিইএস ও হার্ডওয়্যার রফতানির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে, সিনথেটিক ও ফেব্রিকসের মিশ্রণে তৈরি জুতা রফতানির বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে, এপিআই (এ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইংগ্রিডিয়েন্ট) রফতানির বিপরীতে ২০ শতাংশ হারে, এ্যাকুমুলেটর ব্যাটারি রফতানির বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে এবং নারিকেল ছোবড়ার আঁশ দ্বারা তৈরি পণ্য রফতানিতে ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে হাল্কা প্রকৌশল পণ্য রফতানির বিপরীতে রফতানি ভর্তুকির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের অধিক মূল্য সংযোজনের পরিবর্তে ৪০ শতাংশের অধিক মূল্য সংযোজনের শর্ত প্রযোজ্য রয়েছে। নতুন নয় পণ্যে নগদ সহায়তা ॥ চলতি অর্থবছর থেকে আরও ৯টি পণ্য রফতানিতে ১০ শতাংশ হারে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পণ্যগুলো হলো- হিমায়িত সফটসেল কাঁকড়া, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য ও ওষুধের কাঁচামাল, সিরামিক দ্রব্য, গালভানাইজড সিট বা কয়েলস, ফটোভলটাইক মডুল, রেজার ও রেজার ব্রেডস, ক্লোরিন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কস্টিক সোডা এবং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, পোশাক রফতানির উপর থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও রফতানিতে নজর দিতে হবে। এখন রফতানি বহুমুখী করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, পোশাক রফতানি উপর আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। এই বাস্তবতায় উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন, রফতানি এবং নতুন বাজারে প্রবেশ করতে হবে। তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬০ বিলিয়ন ডলার রফতানি করা সম্ভব। এজন্য নতুন পণ্য উৎপাদন ও রফতানি বাড়াতে হবে। পণ্য রফতানি হচ্ছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার, এর মধ্যে পোশাক খাত থেকে আসছে ৩৩ বিলিয়ন ডলার। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নতুন পণ্য রফতানি বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
×