ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চালক বেপরোয়া- প্রাণ গেল রাজিব ও দিয়ার

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৯ আগস্ট ২০১৮

চালক বেপরোয়া- প্রাণ গেল রাজিব ও দিয়ার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাসের ব্রেক, ইঞ্জিন থেকে শুরু করে চাকা পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। তবুও সর্বনাশা চালক কোমলমতী শিক্ষার্থীদের ওপর বাস তুলে দেয়। চোখের সামনে নিস্তেজ হয়ে যায় তাজা দুটি প্রাণ। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কিন্তু এত বড় সর্বনাশ কিভাবে হলো? এমন প্রশ্ন দেখা দেয়া খুবই স্বাভাবিক। বলছি রাজধানীর কুর্মিটোলায় উড়ালসেতুর ঢালে দুই শিক্ষার্থীর চাপা দেয়ার ঘটনার কথা। ঘটনার পর পরই বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গঠন করে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটির কাজও শেষ। চূড়ান্ত হয়েছে প্রতিবেদন। বেপরোয়া গতির কারণে বাসটি শিক্ষার্থীদের চাপা দিয়েছিল, তদন্তে এ বিষয়টি ওঠে আসে। প্রতিবেদনটি মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে বিআরটিএ। বুধবার বিআরটিএ সচিব শওকত আলী জানান, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিবেদনে মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনার সার্বিক চিত্র ওঠে এসেছে। যা ইতোমধ্যে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, যে কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তি নিশ্চিত করা হবে এটাই স্বাভাবিক। কেউ আইনের উর্ধে নয়। আমরা বাসে রুট পারমিট বাতিলসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নিয়েছি। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যা যা করণীয় সরকারের পক্ষ থেকে তা করা হবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। গত ২৯ জুলাই উড়ালসেতুর ঢালে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস। এতে দুই শিক্ষার্থী নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম। দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ৩০ বছর ধরে ঢাকা-রাজশাহী পথে দূরপাল্লার বাস চালাচ্ছেন। ঘটনার পর থেকে তিনি বলে আসছেন, বাসটির চালক অদক্ষ ও বেপরোয়া ছিলেন। দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সারাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। প্রায় সপ্তাহব্যাপী রাজপথে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। গোটা সড়ক যোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে যায়। এমন বাস্তবতায় অনেকটা তড়িঘড়ি করে সড়ক নিরাপত্তা আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়। যদিও এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা আপত্তি রয়েছে। বলা হচ্ছে মালিক ও শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে আইনে। তিন বাস পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি ॥ শিক্ষার্থীদের বাস চাপা দেয়ার ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ঘটনায় যুক্ত থাকা তিনটি বাস পরিদর্শন করে ৫ আগস্ট পুলিশের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয় বিআরটিএ। বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক সামসুদ্দিন আহমেদ এই প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি বাস প্রতিযোগিতামূলকভাবে চালানোয় দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও ১০-১২ জন আহত হন। শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় টাটা কোম্পানির তৈরি ২০১৬ মডেলের (ঢাকা মেট্রো ব- ১১-৯২৯৭) বাসটি। চাপা দেয়া বাসটির ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং হুইল, ব্রেক, সাসপেনসন ও চাকা ভাল রয়েছে। বাসের উইন্ডশিল্ড (সামনের কাচ), কিছু লাইট ও সামনের বাঁ পাশের অংশ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাসটিতে এমন কোন যান্ত্রিক গোলযোগ বা ত্রুটি পায়নি তদন্ত কমিটি, যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চালকের দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। রুট পারমিট ছিল না ॥ বাসটির ফিটনেস ঠিক থাকলেও কোন রুট পারমিট নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বাসের চালক মাসুম বিল্লাহর যাত্রীবাহী হালকা যান চালানোর লাইসেন্স রয়েছে। দুর্ঘটনায় যুক্ত থাকা তিনটি বাসের পাঁচজন কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাছে দেয় র‌্যাব। তারা হলেন চাপা দেয়া বাসের চালক মাসুম বিল্লাহ এবং তার সহকারী (হেলপার) এনায়েত হোসেন, অন্য দুই বাসের তিন কর্মী মোঃ জোবায়ের, সোহাগ আলী ও রিপন হোসেন। পুলিশ সূত্রগুলো জানায়, মাসুম বিল্লাহ চালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করার পর গতবছর হালকা যান চালানোর লাইসেন্স পান। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, বাসটির ব্রেক ফেল করে নিয়ন্ত্রণ হারান। মামলাটি এখন তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর ডিবির উত্তর বিভাগ।
×