এনামুল হক ॥ মাদাগাস্কারে বলয়ের মতো লেজওয়ালা এক ধরনের লেমুর আছে। এরা সঙ্গী বা সঙ্গিনীর শরীর থেকে নির্গত ঘ্রাণ থেকে বুঝতে পারে যে সে অসুস্থ বা দুর্বল। সেই ঘ্রাণ বলে দেয় তুমি সরে যাও। কোন লেমুর আহত বা জখম হলেও তার শরীর থেকে গন্ধ বেরোয় এবং সেই গন্ধে তার আহত বা দুর্বল হয়ে পড়া টের পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষটি আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের পরিচালিত গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এই গবেষকদের অন্যতম বিবর্তনমূলক নৃতত্ত্বে¡র অধ্যাপক ক্রিস্টাইন ড্রিয়া বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে সঙ্গীদের সঙ্গে মারামারিতে জখম বা আহত হলে সেই লেমুরের শরীর থেকে এমন গন্ধ বেরোয় যে তার অপর সঙ্গীরা সেটা টের পায় এবং তার অবস্থাটা বুঝতে পারে।
বলয়ের মতো লেজওয়ালা লেমুরের ক্ষেত্রে শরীরের গন্ধ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। পুরুষ ও স্ত্রী লেমুরের জননেন্দ্রিয়তে এক ধরনের গ্রন্থি থাকে। তা থেকেই এই দুর্গন্ধযুক্ত পদার্থ নির্গত হয় যা ২০০ থেকে ৩০০ ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক উপাদানে তৈরি। ওরা যখন তাদের তল্লাটের গাছের ডালপালায় এই পদার্থটি লেপে দিয়ে অন্যান্য লেমুরকে সঙ্কেত পাঠায় যে তারা মৈথুনের জন্য প্রস্তুত কিনা। গন্ধটা বেশ উগ্র তবে এমন নয় যে বেশ পীড়াদায়ক।
গবেষক দলটি নর্থ ক্যারালিনার ডারহামে ডিউক লেমুর সেন্টারে বলয় লেজওয়ালা লেমুরগুলো থেকে গন্ধ সংগ্রহের জন্য তুলার সোয়াব ব্যবহার করেন।
২০০৭ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে তারা ২৩টি লেমুরকে জখম ও অন্যান্য আঘাতের চিকিৎসা করার সময় প্রত্যেকটির থেকে এই সোয়াব শেন। সাধারণত যেদিন ওরা জখম হয়েছিল সেদিন বা জখমের অল্প পরেই এই সোয়াব নেয়া হয়েছিল।
মুক্ত অবস্থায় বা বন্দী জীবনে দলের কর্তৃত্ব নির্ধারণের জন্য কিংবা সঙ্গিনীর সঙ্গে মৈথুন করার জন্য পরস্পরের সঙ্গে মারামারি করে। তারা একে অপরকে ধাওয়া দেয়, ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড় দেয়, থাপ্পর লাগায় কিংবা শরীর থেকে পশমের গোছা খামছে টেনে তুলে ফেলে। এমন মারামারি লেমুরদের ক্ষেত্রে এক সাধারণ আচরণ এবং এতে করে তাদের শরীরে কেটে যাওয়া, কামড়ের চিহ্ন ও অন্যান্য জখম থেকে যায়। এ জাতীয় মারামারি লেমুরদের বেলায় স্বাভাবিক আচরণ। ফলে তাদের শরীরে কাটা, কামড় ও অন্যান্য এবং ক্ষতচিহ্ন থেকে যায়। একটি ঘটনায় সঙ্গিনীর ওপর দখল নিয়ে তরুণ প্রতিদ্বন্দ্বীর সেঙ্গ মারামারি করতে গিয়ে আবাকাস নামে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক এক পুুরুষের হাত ও গাল কেটে যায়। আরেক ঘটনায় ওপর থেকে লাফ দিয়ে নামার সময় বেকায়দায় নেমে হেরোডেটাস নামে এক লেমুরের বুড়ো আঙ্গুলে বেশ চোট লাগে।
গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি-মাস স্পেকট্রোমেট্রির সাহায্যে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে আঘাতের কারণে লেমুরের সেই বিশেষ গন্ধটির রাসায়নিক মিশ্রণে পরিবর্তন ঘটে যায়। আহত হলে গন্ধের রাসায়নিক যৌগের সংখ্যা ১০ শতাংশ হ্রাস পায়। গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে লেমুরদের স্বাভাবিক গন্ধটি বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয় প্রজনন মৌসুমে যখন তাদের মধ্যে লড়াইটা অতি সচরাচর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
ড্রিয়া বলেন, প্রজনন মৌসুমটা হলো চরম ধকলের সময়। এ সময় যেসব পুরুষ লেমুর আহত হয় তারা তাদের ওলফ্যাক্টরি সঙ্কেতগুলো ধরে রাখতে পারে না। সেগুলো পরিবর্তিত রূপে বেরিয়ে পড়ে। এমনকি সেরে ওঠার জন্য এ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে লেমুরের ঘ্রাণ বা গন্ধের যে পরিবর্তন ঘটে সেটা হিসেবে ধরে নেয়ার পরও এই ধারা চলতে থাকে। পরিবর্তনটা যদিও এত সূক্ষ্ম যে মানুষের নাকে ধরা পড়ে না। তবে লেমুররা ঠিকই পার্থক্যটা বুঝতে পারে।
আচরণগত পরীক্ষায় দেখা যায় যে কোন লেমুর আহত না থাকা অবস্থায় তার শরীর থেকে সংগৃহীত ঘ্রাণযুক্ত কাঠের দ-ের প্রতি অন্য পুরুষ লেমুররা যতটা না মনোযোগ দিয়েছিল তার চেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল সেই সব কাঠের দ-ের প্রতি যেগুলোতে সেই লেমুরটি আহত থাকা অবস্থায় তার শরীরের ঘ্রাণ ঘষে নেয়া হয়েছিল। পুরুষরা তাদের আধিপত্য জাহির করার জন্য নিজেদের কব্জির ভেতরকার বাড়তি সেন্ট গ্ল্যান্ডগুলোকে কাজে লাগিয়ে আহত লেমুরদের ঘ্রাণ পরীক্ষা করেছিল। গবেষকরা মনে করেন যে লেমুররা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াইয়ের ক্ষমতায় পরিবর্তন নির্ণয়ের জন্য হয়ত ঘ্রাণকে কাজে লাগিয়ে থাকে এবং দুর্বলতার ঘ্রাণ পেলে আরও বেশি মাবমুখী হয়ে ওঠে। এই প্রাণীগুলো তাদের প্রতিতদ্বন্দ্বীদের শারীরিক অবস্থার ওপর সর্বক্ষণ নজরদারি করে এবং তাদের সামাজিক সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার যে কোন সুযোগ পেলেই তা কাজে লোগায়।
সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের পরিচালিত গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিবর্তনমূলক নৃতত্ত্বে¡র অধ্যাপক ক্রিস্টাইন ড্রিয়া বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে সঙ্গীদের সঙ্গে মারামারিতে জখম বা আহত হলে সেই লেমুরের শরীর থেকে এমন গন্ধ বেরোয় যে তার অপর
লেমুররা গন্ধে অন্যের দুর্বলতা টের পায়
শীর্ষ সংবাদ: