ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট উৎসব এবং রাসিক নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৭ জুলাই ২০১৮

ভোট উৎসব এবং রাসিক নির্বাচন

দেশের তিনটি অন্যতম বৃহত্তম শহর রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে চলছে নির্বাচনের উৎসব। এসব শহরের শ্রাবণের রোদ-বৃষ্টি ভেজা ঝলমলে রুপালি সময় এখন জনগণের। চা স্টল ভোটারদের দখলে। বিকেল হলেই পাড়া-মহল্লায়, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নারী-পুরুষ দলে দলে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। গান-বাজনার সুরেও ভোট চাওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সমর্থীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বড় পর্দায় তার এবং তার পরিবারের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও রাজশাহীর উন্নয়নে ভূমিকা তুলে ধরছেন। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই আত্মীয়তার বন্ধনে মিলিত হচ্ছেন। শহরের অট্টালিকা ও রাস্তার দু’পাশে পোস্টার লিফলেটের সমাহার। এসব পোস্টার লিফলেটে জনগণের মাঝে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে কিভাবে নগরীর উন্নয়ন ঘটানো হবে। এখানকার ধনী-গরিব সব শ্রেণীর নাগরিকের শক্তি এখন নেতার ওপর প্রবল। বিচারপতি ফ্যালিক্স ফ্রাঙ্ক ফার্টার বলেছেন ‘একটি রাষ্ট্রে নাগরিকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন পদ নেই।’ আর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(১) মোতাবেক দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। সেই কারণেই বোধহয় নির্বাচনের সময় মানুষের মুখে মুখে ভোটের আলোচনা প্রাধান্য থাকে। তিন সিটির চা বিক্রেতা থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া মানুষ, রিক্সা, অটো, বাস, ভ্যান চালক এমনকি পথচারী এবং এলিট শ্রেণী সবার কাছে এখন উৎসবমুখর আগামী ৩০ জুলাইর নির্বাচন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও সেই উৎসবে মেতেছে। সবার মুখে মুখে একটি প্রশ্ন কে হচ্ছেন আগামাী পাঁচ বছরের জন্য রাসিকের নগর পিতা? কাকে ভোট দিলে রাসিকের উন্নয়ন হবে? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে নির্বাচনের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এবং প্রার্থীর সমর্থকরা প্রার্থীর পক্ষে নানামাত্রিক কৌশলে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যেমন বিভিন্ন জেলা সমিতি, থানা সমিতি, পেশাজীবী সংগঠন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের জন্য এলাকার মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে নির্বাচনকালীন অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মানুষ মহানগরীতে যারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন সেসব মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে প্রতিদিন জমায়েত হচ্ছেন। একইভাবে নাটোর জেলা সমিতি, চাঁপাই জেলা সমিতি, চিকিৎসক পরিষদ, আইনজীবী সবাই মিলে তাদের নিজেদের প্রার্থীদের জন্য প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। ইমাম, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাংবাদিকগণের সংগঠনও তাঁদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং বাংলাদেশের যে কোন স্তরের নির্বাচনের সময় সর্বোচ্চ নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জনগণের সঠিক ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চতকরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকেন। আসন্ন ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দেশের জনগণের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করেছেন এভাবে- ‘৩০ জুলাই, ২০১৮ রাসিক/সিসিক/বসিক নির্বাচনে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলুন; সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করুন। বিইসি/সিইসি।’ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য, যোগ্য প্রার্থীদের ভোট দেয়ার জন্য প্রার্থীরা যেমন জোর প্রচার চালাচ্ছেন তেমনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা কৌশলে প্রচার চালানো হচ্ছে। যেমন ১৪ জুলাই, ২০১৮ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নগরীর একটি কনভেনশন সেন্টারে ভোটারদের শপথ বাক্য পড়িয়েছেন। শপথ বাক্যের কথাগুলো ছিল এ রকম - ‘আমি এই মর্মে শপথ করছি যে, ভোট প্রদানকে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দায়িত্ব মনে করে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীর সপক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করব। অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করব না। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মিথ্যাচারী, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ঋণ খেলাপী, বিল খেলাপী, ধর্ম ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, পরিবেশ ধ্বংসকারী, কালো টাকার মালিক অর্থাৎ কোন অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেব না, দেব না, দেব না।’ শুধু তাই নয়, সংগঠনটি নির্বাচনে সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মেয়র প্রার্থীদের কাছ থেকে ১৩ দফা সংবলিত একটি অঙ্গীকারনামায়ও স্বাক্ষর নিয়েছে। এই অঙ্গীকারনামার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো, অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কালো টাকার প্রভাব খাটানো ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকবেন। নির্বাচনী আচরণবিধিসহ সব প্রকার বিধিবিধান মেনে চলব। নির্বাচনে কোন মেয়র প্রার্থী পরাজিত হলে গণরায় মাথা পেতে মেনে নেবেন এবং বিজয়ী মেয়রসহ নির্বাচিত পরিষদকে মহানগরীর সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা করবেন। জনগণের খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা প্রভৃতি মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে স্থানীয় মানুষকে সংগঠিত করে সামাজিক পুঁজি গঠনে সচেষ্ট থাকবেন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বছরে কমপক্ষে ১ বার জনগণের মুখোমুখি হবেন। নারীদের অবস্থার উন্নয়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদার প্রতি গুরুত্বরোপ এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে সহায়তা করবেন। প্রতিবছর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদ, আয়-ব্যয় ও দায়-দেনার হিসাব প্রকাশ করবেন। রাজশাহী সিটির উন্নয়ন-পরিবর্তনের মহানায়ক এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সর্বক্ষেত্রেই পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন পরিচ্ছন্ন নগরী, শান্তির নগরী, বিশুদ্ধ নগরী বিনির্মাণের। এমন প্রতিশ্রুতি বা সদূরপ্রসারী চিন্তা অন্য প্রার্থীরাও ইশতেহারে রেখেছেন। মহানগরীর বেশিরভাগ মানুষের মুখে রব উঠেছে এবারে লিটনের বিজয়কে, নৌকার বিজয়কে কেউ ঠেকাতে পারবে না। বিএনপিসহ অন্য প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে এমন প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু সরকারী দলের নেতা হিসেবে লিটন বার বার বলেছেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন কাজ তিনি এবং তার দলের কর্মীরা কখনও করবেন না। অন্য ছোট ছোট দুটি দল অর্থাৎ বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম যাঁকে এই নির্বাচনের আগে কখনও রাজশাহীবাসীর উন্নয়নে দেখা যায় নি। যার নির্বাচনী প্রচারণায় পোস্টারে ছবিও দেননি। তিনি কি করে জনগণের নেতা হবেন সে প্রশ্ন থেকেই যায়! স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ তাঁর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন) সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব তিনিও কিছু আশা-আকাক্সক্ষার কথা জনগণের মাঝে প্রচার করে নির্বাচন যুদ্ধে নেমেছেন। বলা যায়, জনগণ সচেতন থাকলে নির্বাচন কমিশনের যথাযথ কার্যক্রম থাকলে আগামী ৩০ জুলাই এই তিন সিটিতে আবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা তিনজন যোগ্য নগরপিতা পাব তাতে কোন সন্দেহ নেই। লেখক : অধ্যাপক, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী
×