ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজাকাররাই দেশে চাকরি পেয়ে এসেছে ॥ শাজাহান খান

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৮ জুলাই ২০১৮

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজাকাররাই দেশে চাকরি পেয়ে এসেছে ॥ শাজাহান খান

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশে রাজাকারদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। এদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল জিয়াউর রহমান। তারপর থেকে রাজাকাররাই দেশে চাকরি পেয়ে এসেছে। পরে তারা চেষ্টা করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে। আর এ দেশের মৌলবাদীরা এমনভাবে বাঙালী সন্তানদের সম্মোহিত করেছিল যে, মানুষ মারলেই বেহেশতে যাওয়া যাবে, এভাবেই তারা জঙ্গী সৃষ্টি করল। এগুলোই তাদের মাথায় ঢুকানো হলো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে যারা ঘৃণা করল, বিরোধিতা করল, তারাই বলল এতদিন পর কেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মনে রাখতে হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজৈর উপজেলা সদরের রাজৈর-গোপালগঞ্জ কেজেএস মডেল ইনস্টিটিউশন সরকারী করণে বিশেষ অবদান রাখায় নৌমন্ত্রীকে দেয়া এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী ১৯৪৪ সালে ইউরোপের বিশ্বযুদ্ধের উদাহরণ টেনে বলেন, আজকেও ইউরোপে খুঁজে খুঁজে বের করে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা হচ্ছে। আর আমার দেশে যুদ্ধাপরাধীদেরকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া। যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে দেশটি কোথায় নিয়ে গিয়েছিল। তখন কোন উন্নতি হয়নি, আমরা অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলাম। দুর্নীতিতে ১ নম্বর চ্যাস্পিয়ন হয়েছিলাম। তিনি বলেন, আজ আর আমাদের দেশের পরিস্থিতি এমন নেই। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আমরা যখন যুদ্ধারাধীদের বিচার শুরু করলাম, তখন ওরা আমাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে বলে আজকে বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে, শেখ হাসিনা আছে বলেই দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, জঙ্গী-সন্ত্রাস মোকাবেলা করে আমরা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনে নামে পরিবহনের চালক হেলপার, পুলিশ, শ্রমিক, ব্যাংক কর্মচারী, নারী-শিশুসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষকে পেট্রোল মেরে আগুনে পুড়িয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন শুরু করলাম, আমাদের মিছিলের ওপর বোমাবাজি করা হলো, বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হলো। আমরা নির্ভয়ে আন্দোলন করেছিলাম। বিএনপি-জামায়াত সে আন্দোলন ব্যাহত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। খালেদা জিয়া বলেছিলেন বিজয় লাভ করে ঘরে ফিরবেন, কিন্তু, আমাদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া পরাজিত সৈনিকের মতো খালি হাতে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারার জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলেন এটা রাজনৈতিক কারণে নাকি তাকে আটকানো হয়েছে। খুন যদি রাজনীতি হয়, এই খুনের রাজনীতি বাংলার মানুষ চায় না। আর যারা মানুষ খুন করবে তাদের বিরুদ্ধে আজ বাংলার জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে। কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলন প্রসঙ্গে শাজাহান খান বলেন, ২০০৪ সালে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির কোটা বাতিলের জন্য প্রথম দাবি তুলেছিল। কোটা বাতিল করতে হবে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা যদি চাকরি পায় তাহলে এ দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ থাকবে না। বিএনপি জামায়াতের রাজনীতি থাকবে না। সেই কারণে ওরা মুক্তিযোদ্ধার কোটা বাতিল চায়। নৌমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নেতা আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘এই সরকার ট্র্যাইব্যুনাল করে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জামায়াতিদের বিচার করছে, ফাঁসি দিচ্ছে, আবার জামায়াত ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নির্মমভাবে রাজাকার হত্যার বিচার করা হবে।’ ওরা ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি দিবে। নৌমন্ত্রী বলেন, এতদিন আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করেছি, এখন সময় এসেছে আল-বদর রাজাকার জামায়াত শিবির আর স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা করব। বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে শাজাহান খান আরও বলেন, দুনিয়ার অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। ভিয়েতনাম ত্রিশ বছর যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। সেখানে আইন আছে স্বাধীনতা বিরোধীদের ৩ পুরুষ পর্যন্ত সরকারী চাকরি পাবে না। বিশ্বের অনেক স্বাধীন দেশে আজও স্বাধীনতা বিরোধীদের সরকারী চাকরি দেয়া হয় না। জার্মানি, কম্বোডিয়া ও লাওসের আইন করে স্বাধীনতা বিরোধীদের চাকরির সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের কোন স্তরে স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সন্তানরা নেতা হতে পারবে না। কেন না আওয়ামী লীগ রাজাকারের দল নয়। শাজাহান খান আরও বলেন, আমাদের আর বসে থাকার সুযোগ নেই। লড়াই একটা হবে আর তা হবে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যে। আমাদের সেই লড়াইয়ে জিততে হবে। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিতে হবে, বঙ্গবন্ধু যেমন সবাইকে ডাক দিয়ে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, আজকে শেখ হাসিনা ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে দেশে উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাবেক যুগ্ম সচিব সুষেন রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহানা নাসরিন, পৌর মেয়র শামীম মুন্সী প্রমুখ।
×