ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমস্ত সরকার

দীপ্ত পায়ে এগিয়ে চলা সালমা কিবরিয়া

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২৯ জুন ২০১৮

দীপ্ত পায়ে এগিয়ে চলা সালমা কিবরিয়া

প্রতিটি মানুষের মাঝেই থাকে কিছু না কিছু প্রতিভা। তবে এই ব্যাপারটিকে কেউ প্রকাশ করেন, আবার কেউ পারেন না। আবার অনেকে নিজের ভুলেই ধ্বংস করে ফেলেন নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে। এই ভুলের কারণে সারা জীবন আফসোস করে কাটিয়ে দেয়। নিজের অজান্তেই নষ্ট করে দেয় সম্ভাবনা। কিন্তু সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সম্ভাবনাকে নষ্ট করেননি সালমা কিবরিয়া। শুধু নিজে একা প্রতিভা বিকাশ করছেন না, সঙ্গে তার একমাত্র ছেলে শাদমান মাহতাব কিবরিয়াকে নিয়ে এগিয়ে চলছে সংস্কৃতি কর্মকা-। মা সালমা কিবরিয়া একজন সাহিত্যিক। তিনি গল্প, কবিতা, ছড়া, নাটক ও গান, প্রবন্ধ লিখছেন। শিশুসাহিত্যের প্রতি তার বিশেষ অনুরাগের ফলেই রূপকথা পড়তে ও লিখতে ভালবাসেন। সালমা কিবরিয়ার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন সঙ্গীতশিল্পী। তাই সব মিলিয়ে তাকে বলা যায় সালমা কিবরিয়া একজন বহুমুখী প্রতিভাবান গুণী মানুষ। সালমা কিবরিয়ার জন্ম ঢাকায়। তার বাবার নাম শামসুল করিম চৌধুরী। মায়ের নাম বেগম হাফিজুন নেসা চৌধুরী। সালমা কিবরিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। পারিবারিক সাংস্কৃতি আবহাওয়া বেড়ে ওঠা সামলা ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা করে আসছেন। সাহিত্য চর্চার ফলে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দশটি। বইগুলোর নাম হলো-‘আমার পুতুলবাড়ি’ (২০১৩) ও ‘পরীদের মায়াবী স্বপ্ন’ (২০১৪), ‘রূপোর বাঁশি ও রাখাল ছেলে’ (২০১৫), এবং ‘রাজকুমারী চন্দ্রলেখা’ ও ‘দুষ্ট জাদুকার’ (২০১৫), ‘অহঙ্কারী রানী ও রাজকুমারী শ্রাবণী’, ‘মিষ্টিমণি ও পেটুক শেয়াল’, ‘রংধনু পরি ও জাদুকর’ (২০১৬), ‘বুদ্ধিমতী রুপালি ও গুপ্তধন’ (২০১৭), ‘ডাইনীর মায়া পরীতে রাজকুমারী’ (২০১৮), ‘স্বাধীনতার সুখ’ (২০১৮),। শিশুদের মনোজগতে বসবাসরত কাল্পনিক শক্তিকে তিনি সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেন তার লেখায়। সালমা কিবরিয়ার লেখার উৎসর্ষ ও পরিপক্বতা তাকে নিয়ে যাবে উর্ধ আসনে। শিশুদের মতোই সহজ সরল মালমা কিরবিয়া খুব সহজেই ছোটদের মন জয় করতে পারেন। তার আরও কয়েকটি রূপকথার গল্পের বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। গানের ভুবনে মা ছেলে ‘সুরের আকাশ’ ‘ওগো নিরুপমা’ নামে তার দুটো গানের এ্যালবাম বেরিয়েছে। এসব এ্যালবামে মা সন্তান একসঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন। মা ছেলে ইউটিউবে তার ছেলে শাসমান কিবরিয়া ২৯টি গান রয়েছে। এ ছাড়াও তিনটি মৌলিক গানের মধ্যে দুটি গান একুশ আমাদের গর্ব, একুশে আমাদের অহঙ্কার গান রয়েছে এবং এ ছাড়াও সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গান ‘আমার বাংলাদেশ তুমি দুর্বার দুর্জয়’ ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছে। গানটির কথা লিখেছেন সালমা কিবরিয়া, সুর করেছেনÑ সৈয়দ আজাদ রহমান এবং সঙ্গীত পরিচালনায় মুশফিক লিটু। সালমা কিবরিয়া কাজের কাজের স্বীকৃতি জন্য পুরস্কার পেয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা সাহিত্য সংষদ পুরস্কার-২০১৫। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার -২০১৮। সালমা কিবরিয়া তার প্রতিভা চর্চা করে দেশের জন্য আরও ভাল কিছু উপহার দিতে চান। সালমা কিবরিয়ার একমাত্র সন্তান শাদমান মাহতাব কিবরিয়া। তার লেখক নাম শাদমান কিবরিয়া। তিনি একজন লেখক ও সঙ্গীতশিল্পী। তার বাবার নাম গোলাম কিবরিয়া। শাদমান কিরবিয়ার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। শাদমান বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বাংলার ঋতু, ইতিহাস, স্থাপত্য ঐতিহ্য নিয়ে ফিচার লেখার পাশাপাশি গান করে যাচ্ছে নিয়মিত। শাদমান বর্তমানে ড্রেক্সেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘এ’ লেভেলে পড়ালেখা করছেন। সহপাঠী ও স্যারদের প্রিয় শাদমান। শাদমানের ২০১০ বইমেলায় ‘এক কিশোরের আত্মকথন নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ও ২০১৩ সালের বইমেলায়, ‘বাংলার রূপ প্রকৃতি’ ও ২০১৫ বইমেলায় ‘ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও আমাদের ঐতিহ্য’ এবং ‘বাংলার উৎসব ও ঐতিহ্য’ ২০১৮ বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে শাদমান কিবরিয়া পেয়েছেন প্রতিভা প্রকাশ লেখক সম্মাননা ২০১১ এবং বাংলা আওয়াজ লেখক সম্মাননা ২০১, স্কুল থেকে লেখক সম্মাননা স্মারক ২০১৪, ২০০৭ চিত্র অঙ্কন প্রতিযোগিতায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার। এ ছাড়া আজান কিরাত প্রতিযোগিতায় পৃথক পৃথকভাবে দশ বার প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। শাদমানের সবচেয়ে গান গাওয়ার আগে গীতিকার ও সুরকারের নাম বলেন। তার আরও একটা অভ্যাস যে কোন দিবস বা জন্মদিনের কথা একদিন আগে পরিচিতজনকে মনে করে দেন। তার স্বপ্ন সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমেই নতুন এক পরিশুদ্ধ বাংলাদেশ গড়বে। মা ছেলে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন গানের রেওয়াজ করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মা ছেলে একসঙ্গে গান গেয়ে থাকেন। তারা সাধারণত পুরনো দিনের গানগুলোই বেশি গাইতে পছন্দ করেন। সপ্তাহে তাদের বাসা দুই দিন গানের টিচার আসেন। লেখালেখিটা সাধারণত তারা রাতে করে থাকেন। গুণী মানুষদের সান্নিধ্য পেতে তারা পছন্দ করেন। জনকল্যাণমূলক কাজ করতেও ভালবাসা তারা। বর্তমান সমাজে তাদের মতো পরিবারিক বন্ধন খুব একটা চোখে পড়ে না। মা ছেলের বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।
×