ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিষয় এমপিওভুক্তি

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৬ জুন ২০১৮

বিষয় এমপিওভুক্তি

শিক্ষামন্ত্রী শনিবার জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে ‘বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’ জারি করা হয়েছে। দেশে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এর বাইরেও রয়ে গেছে হাজার হাজার নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ইত্যাদি। নামে- বেনামে নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় প্রতিদিনই গজিয়ে উঠছে কোথাও না কোথাও। ব্যাঙের ছাতার মতো এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পেছনে নানা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির খবরও আছে। ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-মাদ্রাসাসহ অবকাঠামোবিহীন প্রায় অস্তিত্বহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খবরও বিরল নয়। সরকার পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করলেও দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির দাবি কতটা যুক্তিসঙ্গত সেই প্রশ্ন তোলা অনিবার্য। কেননা, দেশে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার মান ও ফল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। প্রাথমিক শিক্ষায় গতবার ফল বিপর্যয় ঘটেছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫সহ প্রায় সব সূচকেই খারাপ ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। অষ্টম শ্রেণীর জেএসসিতে পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে ১০ শতাংশ, আর পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার কমেছে ৩ শতাংশ। অবনতি ঘটেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও। মোটকথা, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে ফেলের সংখ্যা। অতীতের মতো এবারও বলা হচ্ছে, ইংরেজী ও গণিতে খারাপ করায় ঘটেছে ফল বিপর্যয়। উল্লেখ্য, এ দুটো বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকেরও অভাব আছে সারাদেশে। প্রধানমন্ত্রী ফল হাতে পেয়ে সারাদেশে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য নিবিড় তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি। সত্য বটে, এক্ষেত্রে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যথেষ্ট অবহেলা এবং ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে, শিক্ষকরা ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন কি -উল্টো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিয়মিত বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন, ধর্মঘটসহ আমরণ অনশনে নামেন। শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান সত্ত্বে¡ও ঘরে ফিরে না গিয়ে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মসূচী। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর ও সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বিমুখী নীতিও কম দায়ী নয় ফল বিপর্যয়ের জন্য। নতুন শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করার সরকারী ঘোষণা থাকলেও সর্বশেষ অবস্থা হয়েছে লেজেগোবরে। শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একদিকে পরীক্ষামূলকভাবে ৬২৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বছরখানেক আগে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মৌখিকভাবে ন্যস্ত করলেও প্রশাসনিক জটিলতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় তা হস্তান্তর করতে পারছে না। ফলে তা বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ে। সর্বোপরি অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নেই। রাতারাতি এসব গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। বাজেট ঘাটতির বিষয়টিও। শিক্ষকদের দুর্বলতার বিষয়টিও সুবিদিত। ফলে ঢালাওভাবে এমপিওভুক্তি সমর্থনযোগ্য নয়। এ নিয়ে রাজনীতিও কাম্য নয় কোন পক্ষের।
×