ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বেয়াই জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে বিল্লাল হোসেনের বৈঠক

জামায়াত নেতার বৈঠক ॥ মাদ্রাসা অধিদফতরের ডিজির রহস্যজনক কাজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ মে ২০১৮

জামায়াত নেতার বৈঠক ॥ মাদ্রাসা অধিদফতরের ডিজির রহস্যজনক কাজ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বেয়াই নানা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের গোপন বৈঠকের অভিযোগ উঠেছে। অধিদফতরে মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেন অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বের করে দিয়ে কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জনপ্রিয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলার আসামির সঙ্গে এ বৈঠকের খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনাকে ‘মিটিং’ বলতে রাজি না হলেও আলোচনার কথা স্বীকার করেছেন মহাপরিচালক। জামায়াত নেতা জাফরীর সঙ্গে আলোচনাকে বৈঠক বা মিটিং বলতে আপত্তি মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেনের। নিজ অফিস কক্ষে জামায়াত নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনা স্বীকার করেছেন মহাপরিচালক। তবে তিনি বলেছেন, সরকার তো মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়নি। মাদ্রাসা খোলা আছে। তাই জামায়াত নেতার সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছে। এটা কোন মিটিং বা বৈঠক নয়। মিটিং কেন বলছেন? সাংবাদিকদের উল্টো প্রশ্ন করে মহাপরিচালক দাবি করছেন, দরজা বন্ধ করে আলোচনা হলে নাকি সেটাকে মিটিং বলা যাবে না। কেন এটাকে মিটিং বললেন-এই বলে ক্ষেপেই যান মহাপরিচালক। এর পর মিটিং শব্দকে খারাপ মনে করার কারণ জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, মিটিং হয়নি; কেন বলবেন? আর কি আলোচনা হয়েছে তা সাংবাদিকদের খুঁজে বের করার পরামর্শও দেন মহাপরিচালক। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে সোমবার সকাল এগারোটার দিকে রাজধানীর বোরাক টাওয়ারে অবস্থিত অধিদফতরে মহাপরিচালক তার নিজ অফিস কক্ষে বৈঠক করেন। বৈঠক চলে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। এগারো হাজারের বেশি আলিয়া ধারার মাদ্রাসায় নিয়োগ ও এমপিওভুক্তিসহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব মাদ্রাসা অধিদয়তরের। বৈঠকের বিষয়ে মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেন বলেন, এটা কোন রাজনৈতিক সভা বা বৈঠক ছিল না। এটা ছিল সাক্ষাত। কী বিষয়ে কথা হয়েছে তা সাংবাদিকদের জানার দরকার নেই। অধিদফতরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) কে এম কওসার আলীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি (কামাল উদ্দিন জাফরী) সকালে এসেছিলেন। মহাপরিচালক স্যারের কক্ষে বৈঠক হয়েছে। কি বিষয়ে বৈঠক করেছেন তা তার জানা নেই। এদিকে জামায়াত নেতার সঙ্গে বৈঠকের মধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন মাধ্যমে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক কর্মচারী বলছিলেন, টেলিভিশনে দেখেছি এমন একজন মাওলানা ডিজি স্যারের রুমে ঢোকার পর আমাদের সবাইকে বলেছেন কেউ যেন রুমে ঢুকতে না পারে। ওই মাওলানার হাতে কতগুলো কাগজ দেখেছিলাম। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে অপর এক কর্মকর্তা বলছিলেন, স্যারের কাছে জামায়াত নেতা এসেছিলেন। স্যার বলছেন জামায়াত নেতা নাকি তার মাদ্রাসা নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন। এটা কোন রাজনৈতিক মিটিং নয়। এর বেশি কিছু ওই কর্মকর্তা বলতে রাজি হননি। জানা গেছে, মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তার বর্তমান পদ যুগ্ম সচিব। তার ব্যাচের অধিকাংশ কর্মকর্তা সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হলেও নানা বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে তিনি পদোন্নতি পাননি। দীর্ঘদিন যাবত বিল্লাল হোসেন নব্গঠিত মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে রয়েছেন। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রগতিশীল শিক্ষকরা তাদের অসন্তোষের কথাও জানিয়েছেন। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আস্থা অর্জন করে তিনি বহাল আছেন। অধিদফতরের ওয়েবসাইটে তার নিজের কোন সুস্পষ্ট ছবি আপলোড করেননি তিনি। মাদ্রাসায় নিয়োগ বোর্ডে দুর্নীতিবাজদের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দেয়া ও নিয়মিত এমপিওর (বেতন-ভাতার সরকারী অংশ) চেক ছাড় করতে না পারাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে অধিদফতরের বিরুদ্ধে। ৭৫ বছর বয়সী কামাল উদ্দিন জাফরী নরসিংদীর জামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন অধ্যক্ষ পদে ছিলেন। এক বছর আগে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে বসানো হয়েছে জাফরীর জামাতাকে। আর ওই মাদ্রাসার মহিলা শাখার অধ্যক্ষ পদে বসানো হয়েছে জাফরীর মেয়েকে। এই দুটি নিয়োগে জাফরীকে সহায়তা করেছেন মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রতিষ্ঠিত বেসরকারী বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান এ জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরী। যিনি সম্পর্কে সাঈদীর আপন বেয়াই। ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট রাত নয়টার দিকে ১৭৪ পূর্ব রাজাবাজারের দোতলা বাসার একটি বেসরকারী টেলিভিশনের ইসলামি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যা করা হয়। ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর জামায়াতের রোকন তারেক মনোয়ারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি হত্যা দায়ের হয়। ওই মামলার অন্যতম আসামি কামাল উদ্দিন জাফরী। এমপিওভুক্ত হচ্ছেন মাদ্রাসার ১০৩ শিক্ষক ॥ মাদ্রাসার ১০৩ নতুন শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের এমপিও কমিটি। তারা গত কয়েক মাসে নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্তির (বেতন-ভাতার সরকারী অংশ) জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোঃ মাহাবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এমপিও কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। মাদ্রাসার ১০৩ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে ১০, চট্টগ্রাম ১, কুমিল্লার ১২, ঢাকার ১০, খুলনার ১১, ময়মনসিংহের ২৫, রাজশাহীর ১০, রংপুরের ২২ এবং সিলেট অঞ্চলের ২ জন। প্রতি বিজোড় মাসে একবার এমপিওভুক্তির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধিদফতরের দুই পরিচালক, আঞ্চলিক উপ-পরিচালক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিনজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন।
×