ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যয় হবে ২৫২ কোটি টাকা

ত্রিপুরা থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৫ মে ২০১৮

ত্রিপুরা থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রস্তুতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের পূর্বাঞ্চলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভারতের ত্রিপুরা থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রস্তুতি নিচ্ছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এজন্য ত্রিপুরার সূর্যমণিনগর থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এক হাজার ৩৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পের নাম ‘সূর্যমণিনগর (ত্রিপুরা, ভারত) থেকে কুমিল্লা উত্তরে (বাংলাদেশ) বিদ্যুত সরবরাহের জন্য কুমিল্লা উত্তরে ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন নির্মাণ’। প্রকল্প ব্যয়ের ২৫২ কোটি ৫১ লাখ টাকা আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং ১ হাজার ১৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আসবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে। বাকি ৬৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে। এ প্রসঙ্গে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার দীপায়ন ভদ্র বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ত্রিপুরা ও আসাম থেকে বিদ্যুত আমদানি করা সম্ভব হবে। ফলে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে তা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। জাতীয় বিবেচনায় প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদ্যুত সেক্টরে ভারত-বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জে ডব্লিউ জি) ১২তম বৈঠক ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সূর্যমণিনগর থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কুমিল্লা দিয়ে সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়। পরদিন ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১২তম জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির (জেএসসি) বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জয়েন্ট টেকনিক্যাল টিম (জেটিটি) সম্ভাব্যতা জরিপ করে একটি ডিটেইল প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করে জেডব্লিউজি’র বৈঠকে উপস্থাপন করবে। ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ১৩তম জেডব্লিউজি বৈঠকে জেটিটি একটি প্রজেক্ট রিপোর্ট দাখিল করে এবং ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ১৩তম জেএসসি বৈঠকে এই প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে একমত জানানো হয়। প্রজেক্ট রিপোর্টের ভিত্তিতে এই প্রকল্পটির কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ত্রিপুরার সূর্যমণিনগর থেকে কুমিল্লা (দক্ষিণ) উপকেন্দ্রের মাধ্যমে রেডিয়াল মোডে বাংলাদেশ ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। এই লাইনের মাধ্যমেই সূর্যমণিনগর থেকে এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য (উত্তর) এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন দিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় বিভিন্ন সুপারিশ প্রতিপালন করে পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) গত ২ এপ্রিল বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়। এরপর ৮ মে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্পের সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেন। বর্তমানে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভবাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের ফলে ত্রিপুরা ও আসাম থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিশ্চিত করা যাবে। এছাড়া, দেশের পূর্বাঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণও সম্ভব হবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
×