ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৪ মে ২০১৮

পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র

সরকার ঘোষিত মেগা বিদ্যুত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র। কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটির ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেটি সবচেয়ে আশার খবর তা হলো এর ব্যয় নির্বাহ বাবদ চীনের এক্সিম ব্যাংক ৪৩০ মিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাংলাদেশে এটি সবচেয়ে বড় চৈনিক বিনিয়োগ। উল্লেখ্য, বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ-চীন সমান সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। চলতি বছরের মাঝামাঝি শুরু হবে এর যন্ত্রপাতি সংযোজনের কাজ। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এর উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। চীন, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এর কাঁচামাল কয়লা আমদানি করা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি যথাসম্ভব পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে চুক্তিকৃত কেন্দ্রের মধ্যে কাজ চলছে রামপাল-১৩২০ মেগাওয়াট এবং মাতারবাড়ি-১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রে। সরকার ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুত সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এটি একটি মাইলফলক। ইতোমধ্যে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে ক্রমশ। দেশ-বিদেশের পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়ছে, ছেড়ে যাচ্ছে, রাজস্ব আদায় হচ্ছে নিয়মিত। এমনকি যেসব জাহাজ এখান দিয়ে যাওয়ার সময় অতিক্রম করে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা, তারাও টোল দিয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান হয়েছে বহু লোকের। আগামীতে বন্দরটি আরও সচল ও বহু ব্যবহার্য হলে আরও বাড়বে কর্মচাঞ্চল্য। চাপ কমবে চালনা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে। মাত্র কয়েক বছর আগে ২০১৩ সালের নবেম্বরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় টিয়াখালীতে এর সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সর্বাধিক মনোযোগ দেয় বিদ্যুত উৎপাদন, বন্দর স্থাপন ও যোগাযোগের উন্নয়নেÑ যা যে কোন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক। দেশ বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। চট্টগ্রাম ও চালনার পর পায়রায় হয়েছে তৃতীয় সমুদ্র বন্দর। সর্বোপরি মাতারবাড়িতে হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। আর পদ্মা সেতুর কাজ তো ইতোমধ্যে ৫১ শতাংশ দৃশ্যমান হয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশে অগ্রসর হতে হলে এসব লাগবে বৈকি। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যের অঙ্গনেও। ফলে জরুরী ভিত্তিতে চালনা ও পায়রা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোসহ আরও একাধিক বিকল্প বন্দর তথা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মিত হলে এর সক্ষমতা বাড়বে বহুগুণ। বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে অবস্থান করছে, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে রূপান্তরিত হতে পারে। সে অবস্থায় গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজন ও গুরুত্ব আরও অর্থবহ হয়ে উঠেছে বৈকি। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, চালনা ও পায়রা বন্দরের আধুনিকীকরণসহ সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত জাইকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা, জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ এবং সর্বোচ্চ দাতা দেশ হিসেবে স্বীকৃত।
×