ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় প্রচার শেষ, এবার ভোটের জন্য অপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৪ মে ২০১৮

খুলনায় প্রচার শেষ, এবার ভোটের জন্য অপেক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের অনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে রবিবার। আগামীকাল ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রচারের শেষ দিনে রবিবার মহানগরীর পাড়া-মহল্লা, অলিগলি মুখরিত ছিল মাইকিংয়ে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের গণসংযোগ ও প্রচারে অংশ নেন। কর্মীরা হ্যান্ডবিল ও ভোটার স্লিপ নিয়ে দ্বারে দ্বারে যান। তবে আনেক ভোটার বাসা পরিবর্তন করায় তাদের খুঁজে পেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় কর্মীদের। রবিবার রাত ১২টার পর কেসিসি নির্বাচনের শেষ হয় সব ধরনের প্রচার। এখন ভোটের জন্য অপেক্ষা। এ দিকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে রবিবার নগরীতে বিজিবি নেমেছে। অন্যান্য বাহিনীও কাজ শুরু করেছে। কেসিসি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চলতে থাকে। বিশেষ করে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও নেতারা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ও তার দলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করতে থাকেন। এর পর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও তার দলের নেতারা পাল্টা জবাব এবং অভিযোগ করতে থাকেন। এতে মাঝে মাঝে নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়ালেও লড়াইয়ের মাঠে তারা সরব রয়েছেন। প্রচারের শেষ দিনেও অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি চলে গণসংযোগসহ নির্বাচনী অন্য কার্যক্রম। মেয়র ও কাউন্সিল প্রার্থীদের গণসংযোগ, মাইকে প্রচার এবং মিছিলে মিছিলে নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহলায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নগরবাসীর প্রত্যাশা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরীক্ষিত যোগ্য নগরপিতা নির্বাচিত হবেন। কেসিসি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার থেকে মাঠে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি সদস্যরা শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ছাড়া নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সিটি নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের লক্ষ্যে ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ শুরু করেছেন। তারা কেন্দ্র ভিত্তিক নিজ নিজ অধীক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন। আজ সোমবার থেকে ১০ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে সাড়ে ৯ হাজার পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন, আনসার-ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি থাকছে র‌্যাবের ৩২টি টহল টিম এবং চারটি স্টাইকিং ফোর্স। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার সোনালী সেন বলেন, কেসিসি নির্বাচনে সাড়ে ৯ হাজার পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে পুলিশের পাশাপাশি ১৬ প্লাটুন বিজিবি, চার হাজার ৪৬ জন অঙ্গীভূত আনসার, ৮১৯ জন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য, ৩০০ এপিবিএন সদস্য থাকবে। নির্বাচনের ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে ২৪ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া প্রত্যেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের টিমের সঙ্গে একটি করে মোট ৪১টি পুলিশের টিম থাকবে। পুলিশের আটটি মোটরসাইকেল টিম এবং ১১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। তারা তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। খুলনা সিটি কর্পোরেশনে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) ও সিপিবি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)। এ ছাড়া নগরীর ৩১ সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন এবং ১০ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে খুলনা সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ ও নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। ভোটকক্ষ ১ হাজার ১৭৮টি। এ নির্বাচনে ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রে রয়েছে ২৫৪টি এবং ৩৫টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল- খালেক ॥ কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, ভোট কারচুপিতে নয় আওয়ামী লীগ জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদি ভোট কারচুপির ইচ্ছা থাকত তাহলে ২০১৩ সালের চারটি সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হতো না। জনগণ যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন আমরা তাকে স্বাগত জানাব। তিনি বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দেশে ভোট কারচুপি, জালিয়াতি, দখলবাজি সবকিছুই তাদের সৃষ্টি। ইতোপূর্বে সব নির্বাচনের আগেই তারা ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। মিথ্যাচার বিএনপির অভ্যাসগত স্বভাব। কিন্তু জনগণ এখন অনেক সচেতন, বিএনপির অবিরাম মিথ্যাচারে বিশ্বাস করে না। বরং ১৫ মে’র নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে বিএনপির মিথ্যাচরের জবাব দেবেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন রবিবার নগরীর দৌলতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় এসব কথা বলেন। তালুকদার আব্দুল খালেক আরও বলেন, অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে গত ৫ বছরে নগরবাসী উন্নয়ন থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা, জলাবদ্ধতা, মশার উৎপাত, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে চলাচল ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে খুলনা মহানগরী। নগরবাসী গত নির্বাচনের ন্যায় আর ভুল করবে না। এবার উন্নয়নের স্বার্থে নৌকার পক্ষে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিএনপি একের পর এক মিথ্যাচার করছে। বিএনপির মিথ্যাচারে কান না দিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোটদানের মাধ্যমে বিজয়ী করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মোঃ শাহ আলম মাতব্বরের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তৃতা করেন জাসদ খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি রফিকুল হক খোকন, দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা শফিউল আলম কিসলু প্রমুখ। এর পর তিনি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ (ওজোপাডিকো) অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়, কেডিএ অফিস, কৃষি ব্যাংক ও শিল্প ব্যাংক ভবনে গণসংযোগ ও ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। দলবদ্ধ হয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষে ভোট দেয়ার আহ্বান মঞ্জুর ॥ কেসিসি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রচারের শেষ দিন রবিবার সকালে নগরীর ৩১ নং ওয়ার্ডের মোক্তার সড়ক, রূপসা ব্রিজ, বান্ধা বাজার, চাঁনমারী বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এর পর তিনি সাত রাস্তার মোড়, দোলখোলাসহ অন্যান্য স্থানে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ-ডিবির হাতে নেতাকর্মীরা গণগ্রেফতার হচ্ছে। শাসক দলীয় প্রার্থীর কর্মীরা হুমকি ধমকি দিচ্ছে। সাহসের সঙ্গে সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। তিনি দলবদ্ধ হয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষে ভোট প্রদানের জন্য আহ্বান জানান। মঞ্জু বলেন, তাদের উন্নয়নের গালগল্প জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। উন্নয়নের নামে হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ এনে লুটেপুটে খাওয়াই আওয়ামী লীগের ধর্ম। দেশের মানুষ তা জেনে গেছে। গণসংযোগ কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা এ কে এম আইয়ুব আলী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম, বিএনপির কেন্দ্রীয়সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলান এমদাদুল হক, বিজেপি নগর সভাপতি এ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু প্রমুখ। এর আগে সকাল ৮টায় নগরীর মিয়াপাড়ার কবাস ভবনে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচনে ভোট ডাকাতির আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, জনগণ ও ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনাও ছিল। নগরবাসীর স্বপ্ন ছিল ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার। কিন্তু পুলিশের অতি উৎসাহী ভূমিকা এবং নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা ভোট ডাকাতির নির্বাচনের আয়োজনকে ত্বরান্বিত করেছে। তিনি জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও নগর পিতা নির্বাচিত করার পরিবেশ তৈরি করতে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
×