ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া সীমান্তে সংঘাত বন্ধ হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১১ মে ২০১৮

ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া সীমান্তে সংঘাত বন্ধ হচ্ছে না

আফ্রিকার অন্যতম দুই দরিদ্রতম দেশের মধ্যে মহাদেশের প্রাণঘাতী সীমান্ত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কেটে গেছে দুই দশক। ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ার মধ্যেকার এ যুদ্ধে দু’বছরে নিহত বা আহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু ২০০০ সালের ডিসেম্বরে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া সত্ত্বেও দু’পক্ষই তাদের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধাবস্থায় রেখেছে এবং লড়াই শুরু করার জন্য যুক্তি খুঁজছে এখনও। বিবিসি। আফ্রিকার এ অসমাপ্ত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পেছনে কী ঘটেছিল ২০ বছর আগে এবং শেষ পর্যন্ত এ যুদ্ধ অবসানের কোন প্রত্যাশা করা যায় কি? যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৬ মে সীমান্ত শহর বাদমি নিয়ে। এটি একটি নগণ্য ধূলিময় বাজার শহর এবং দৃশ্যত শহরটির কোন মূল্য নেই। এ শহরে তেল নেই। হীরকও নেই। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়া দুটি দেশই শহরটি তাদের ভূখ-ের অংশ রাখতে চায়। ওই সময় এ যুদ্ধকে একটি চিরুনির জন্য দুই টেকোমাথা মানুষের লড়াই বলে অভিহিত করা হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হলে দু’পক্ষের অসংখ্য মানুষ গৃহচ্যুত হয়ে পড়ে। সীমান্তবর্তী ইথিওপীয় শহর আদিগ্লাতের বাসিন্দা কাসাহুন ওয়ালডিজিওরজিস স্মৃতিচারণ করে বলেন, এ যুদ্ধে অসংখ্য পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। এক সময়ের সীমান্ত বিভক্ত শহর জালামবেসা থেকে আগত আসগেদোম টিওয়েল্ড বলেন, আমরা সীমান্তে আন্তর্বিবাহে আবদ্ধ হই এবং আমরা একজন অন্যজনের বিয়ে বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত থাকতে পারি না। সীমান্তের ইরিত্রীয় এলাকায় যেহরা গ্রামের এক পরিবারের মেয়ে বিয়ে করে সীমান্তের ইথিওপীয় এলাকার এক ছেলেকে। পরে যুদ্ধ শেষে মেয়েটি মারা যায়। কিন্তু তার পরিবার সীমান্তবর্তী এক পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখতে পায় কেবল তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মিছিল। এটা শুধু পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়ই নয়। সীমান্ত বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট মানুষদের ওপর যে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ে তার গুরুত্ব অপরিসীম। ইরিত্রিয়াতে এক সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দা কিফলোম জেব্রেমেধিন বলেন, যুদ্ধের আগে আমরা যে বাণিজ্যিক তৎপরতা দেখেছি তা এখন আর দেখা যায় না। যুদ্ধ শেষ হয় ২০০০ সালের জুনে। কিন্তু ইরিত্রিয়া-ইথিওপিয়া সীমান্ত কমিশন প্রতিষ্ঠা করে কিন্তু শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে তা আরও ছয় মাস চলে। বোঝা গিয়েছিল বাদমি নিয়ে বিরোধের সমাপ্তি ঘটবে চিরতরে। কিন্তু এর চূড়ান্ত ও বাধ্যতামূলক ১৮ মাসের শাসনের পর বাদমি ইরিত্রিয়াকে দেয়া হয়। ইরিত্রিয়ার সঙ্গে পরবর্তী আলোচনার পূর্বশর্ত ছাড়া ইথিওপিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। ইরিত্রিয়া তার বিপরীতে বাদমির শাসনে সংশ্লিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এবং সাবেক সহযোগীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করে। ফলে, দুপক্ষই তাদের স্ব-স্ব অবস্থানে অটল থাকে এবং তাদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সুদূর পরাহত হয়ে দাঁড়ায়। সীমান্ত সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে এবং সরাসরি বা উভয় পক্ষে তৎপর বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর মধ্যে তা চলতে থাকে। বাদমি থেকে যায় ইথিওপিয়ার কাছেই।
×