ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি এখন উৎপাদনমুখী

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৭ মে ২০১৮

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি এখন উৎপাদনমুখী

শ.আ.ম হায়দার ॥ অনেক প্রতিকূল অবস্থ’া পেরিয়ে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি এখন উৎপাদনমূখী হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি’র (জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোটিয়াম) তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন ৩ সিফটে ৪,০০০ মেট্রিক টন গ্রানাইট শিলা উৎপাদিত হচ্ছে। জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ ২৩ মার্চ/১৮ তারিখে খনি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি উৎপাদন বাড়িয়ে প্রতিদিন ২০ হাজার মে. টন উৎপাদন টার্গেট করার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ঘনঘন পরিবর্তনে বাধাগ্রস্ত হয়েছে নীতি নির্ধারনী কার্যক্রম। শেষে সঙ্কট উত্তরণের জন্য পেট্রোবাংলা থেকে এই পদে নিয়োগ পান প্রকৌশলী এস এম নুরুল আওরঙ্গজেব। সকলের সমন্বয়ে নানাবিধ কর্মকৌশলের মাধ্যমে খনির উন্নয়ন ও বিপণন বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেয়ায় খনি গতি ফিরে পেয়েছে। ইতোমধ্যে মধ্যপাড়ার গ্রানাইট শিলা দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প রুপপুর তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া ও ৪ লেন প্রকল্প, যমুনা নদী রক্ষা প্রকল্প, রেলেওয়ে নির্মাণ কাজসহ অনান্য কাজে এই শিলা ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প, যেমন পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট, পাওয়ার প্লান্টসমূহ, বিভিন্ন বিদ্যুত প্রকল্প(বাঁশখালি ও রামপাল, মহেশখালী-মাতারবাড়ী) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পাতাল রেলে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিতব্য টানেল, কক্সবাজার বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, রেললাইন ও রেলওয়ের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণ কঠিন শিলার প্রয়োজন হবে। এসব প্রকল্পে গুণগতভাবে উৎকৃষ্ট মধ্যপাড়ার গ্রানাইট শিলার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্যুরো অফ রির্সাস টেস্টিং কনসালটেশন (বিআরটিসি), বুয়েটের বিভিন্ন টেস্ট হতে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী এ শিলার ফিজিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোপার্টিজ নির্মাণ কাজের জন্য কন্সট্রাকশন ম্যাটারিয়াল হিসেবে যথেষ্ট মজবুত, টেকশই ও পরিবেশবান্ধব। এছাড়া ও ইংল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর থেকে রাসায়নিক পরীক্ষায় মধ্যপাড়ার শিলা ক্ষতিকারক প্রমাণিত হয়নি। ভূ-গর্ভস্থ খনির প্রায় ৩০০ মিটার গভীর থেকে এ গ্রানাইট শিলা উত্তোলিত হয়। সে কারণে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ শিলা বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ভূ-পৃষ্টের পাথরের তুলনায় অনেক উন্নতমানের ও দেড়গুণ শক্তিশালী। বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের প্রেক্ষিতে অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে গ্রানাইট পাথর ও স্টোন ডাস্টের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মধ্যপাড়া খনি বিশে^র একমাত্র খনি যেখান হতে গ্রানাইট পাথর উত্তোলন করা হয়। খনির কঠিন শিলা হতে উন্নতমানের গ্রানাইট স্লাব তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রানাইট স্লাব তৈরির সম্ভাবতা যাচাইয়ের জন্য পেট্রোবাংলার অর্থায়নে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির কাজ শুরু হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। খনির সঙ্গে উন্নত রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় দেশের যে কোন স্থানে শিলা পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। উন্নতমানের পাশাপাশি মধ্যপাড়ার কঠিন শিলার মূল্য সাশ্রয়ী। লোডিং ও ওজন আধুনিক হওয়ায় ক্রেতারা ব্যাপকভাবে এ শিলা ব্যবহার করছে। যেখানে পাশর্^বর্তী ভারত হতে আমদানিকৃত ৩-৪ সাইজের পাকুর পাথরের মূল্য টন প্রতি ৩৫০০ টাকা সেখানে মধ্যপাড়া কঠিন শিলার মূল্য টন প্রতি ২৯৫০ টাকা। এ কারণে প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে। খনি থেকে প্রতিদিন তিন শিফটে ৫,৫০০ মেট্রিক টন শিলা উত্তোলন এবং নতুন স্টোপ উন্নয়নের জন্য জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোটিয়ামের (জিটিসি) মধ্যে ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে ৬ বছরের জন্য বৈদেশিক ও স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা মূল্যমানের মাইন ম্যানেজমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিমতে ঠিকাদার ১২টি নতুন স্টোপ উন্নয়ন ও ৯২ লক্ষ মেট্রিক টন গ্রানাইট শিলা উত্তোলন করবে। এ চুক্তির আলোকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখ হতে জিটিসি আগের নির্মিত ৫টি স্টোপ হতে উৎপাদন শুরু করে। ঠিকাদার ইতোমধ্যে ১২টির মধ্যে ৩টি নতুন স্টোপের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছে। সেখান হতে প্রতিদিন ৩ সিফটে ৪০০০ মে.টন শিলা উত্তোলন করছে। দ্রুত নতুন স্টোপ উন্নয়ন না হলে শিলা উত্তোলন ব্যাহত হবে কিনা জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানান, চুক্তি মোতাবেক কাজ করলে কোন সমস্যা হবে না। আজ রবিবার সকাল থেকে সারাদিন মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে অবস্থানকালীন প্রত্যক্ষ করা হয় উৎপাদন কার্যক্রম। পাশর্বর্তী হাইওয়ে থেকে প্রকল্প চত্বর পর্যন্ত শতশত ভারী ট্রাকের বহর। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা কঠিন শিলা সংগ্রহ করতে এসেছে। খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এস এম নুরুল আওরঙ্গজেব জানান, এলাকার সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ও জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী নসরুল হামিদ যৌথভাবে খনির সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং করছেন। আগের চেয়ে খনি এখন ভাল অবস্থায়। জাতীয় এ প্রকল্পটি লাভজনক খাতে পরিণত হওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×