ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ছয়দিন সারাদেশে ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩ মে ২০১৮

আরও ছয়দিন সারাদেশে ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান ঝড়বৃষ্টি আরও কয়েকদিন চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বুধবার রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। দুর্ভোগে পড়ে রাজধানীবাসী। ঝড়বৃষ্টির পাশাপাশি মে মাসে থাকবে নিম্নচাপ ও তীব্র তাপ প্রবাহ। এ মাসে দেশের তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। আজ বৃহস্পতিবারও সন্ধ্যার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও ছোট আকারের কালবৈশাখীর আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে বিজলিসহ বজ্রপাতের আশঙ্কাও রয়েছে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। চলতি বছরে মার্চ থেকে ২ মে পর্যন্ত বজ্রপাতে ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ও বুধবারেই মৃত্যু গত এক সপ্তাহ ধরে দেশে চলছে ঝড়বৃষ্টি ও মেঘের দাপট। বুধবারও একই অবস্থা বিরাজ করে। ঝড়বৃষ্টি ও মেঘের দাপট আরও কয়েক দিন থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সারাদেশে আগামী ছয় দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। দেশের অনেক অঞ্চলে কালবৈশাখী বয়ে যাবে। ঝড় ও বৃষ্টির সঙ্গে বিজলিসহ বজ্রপাতেরও আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজমান। এ কারণে বৃষ্টি হতে পারে। তবে কালবৈশাখীর জন্য বৃষ্টি বেশি হবে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মে মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২ টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ওই মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/ তীব্র কালবৈশাখী/বজ্রঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হাল্কা/মাঝারি কালবৈশাখী /বজ্রঝড় হতে পারে। আর দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২-৩টি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২-৩টি মৃদু /মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ২৯৭ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৩১০ মিমি, সিলেটে ৫১০ মিমি, রাজশাহীতে ১৮৮ মিমি, রংপুরে ২৫০ মিমি, খুলনায় ১৬৯ মিমি ও বরিশালে ২৬০ মিলিমিটার থাকতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ৬ মে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, উত্তর প্রদেশের বজ্রপাত ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। বজ্রপাতে মৃত্যু ॥ বজ্রপাতে প্রতিবছরই প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশে। কালবৈশাখীতে এই মৃত্যুর মিছিল যেন নতুন মাত্রা পায়। গবেষকদের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছরই বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ছে, একইসঙ্গে বাড়ছে বজ্রপাতে নিহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা। যদিও এ নিয়ে দেশে সুনির্দিষ্ট গবেষণা বা নির্ভরযাগ্য পরিসংখ্যান নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, বায়ুম-লে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাওয়াসহ নানান কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে; যার নিরীহ শিকার আজকের বাংলাদেশ। সেইভ দ্য সোসাইটি এ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম এ্যাওয়ারনেস ফোরামের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে বজ্রপাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৭০ জনের। এর মধ্যে গত মার্চে ১২ জন এবং এপ্রিলে ৫৮ জন। এই মৃত্যুর সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থার প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাট, রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা, ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ ও সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে বজ্রপাত হয় সবচেয়ে বেশি। তবে সুনামগঞ্জে বজ্রপাত বেশি হলেও বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা উত্তরাঞ্চলেই বেশি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে ১২৪ জন, ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ৩০১ জন, ২০১৩ সালে ২৮৫ জন, ২০১৪ সালে ২১০ জন, ২০১৫ সালে ২৭৪ জন, ২০১৬ সালে ৩৫০ জন, ২০১৭ সালে ২০৫ জন এবং ২০১৮ সালে ২ মে পর্যন্ত ৮৯ জনের বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটেছে।
×