ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দর দিবস আজ

কন্টেনার পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে বন্দর

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

কন্টেনার পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে বন্দর

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমদানি-রফতানি। আর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিকট ভবিষ্যতে বছরে ৭০ লাখ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রস্তুত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নতুন টার্মিনাল নির্মাণসহ বেশকিছু মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহদ্বার বন্দরের উন্নয়নে গৃহীত পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ জানিয়েছেন, আমাদের উদ্দেশ্য বন্দরকে ‘ব্যবহারকারী বান্ধব’ হিসাবে গড়ে তোলা। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩১তম বর্ষপূর্তি ও চট্টগ্রাম বন্দর দিবসকে সামনে রেখে মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা, কর্মকা- ও ভবিষ্যত পরিকল্পনাসমূহ তুলে ধরেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জুলফিকার আজিজ। প্রসঙ্গত, আজ বুধবার উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হবে ‘বন্দর দিবস।’ ঈদের দিনসহ বছরের প্রতিটি দিনই কর্মচঞ্চল থাকে চট্টগ্রাম বন্দর। কোন ধরনের বন্ধ ছাড়া বছরের ৩৬৫ দিন যে বন্দর কর্মমুখর থাকে, সেই বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা আজ মেতে উঠবেন আনন্দ আয়োজনে। বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সভায় গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি জানান, বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিং প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭ সালে এই বন্দর ৮ কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন কার্গো এবং ২৬ লাখ ৬৭ হাজার টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছে। আগের বছর হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৭ কোটি ৪ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন কার্গো এবং ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৯ টিইইউএস কন্টেনার। ২০১৭ সালে জাহাজ এসেছে ৩ হাজার ৩৭০টি। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১৪টি। কার্গো, কন্টেনার এবং জাহাজের এই প্রবৃদ্ধি সামাল দেয়া চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বন্দরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সরকারের রূপকল্প-২০২১ কে সামনে রেখে একটি মাস্টার প্ল্যানের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করে বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালটি (এনসিটি) পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংযুক্ত হয়েছে ৯টি আরটিজি, ৪টি স্ট্রাডল ক্যারিয়ার, ৫টি কন্টেনার মুভার এবং ১টি রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রিক্রেন। শীঘ্রই এসে পৌঁছবে আরও তিনটি স্টাডল ক্যারিয়ার। তাছাড়া ৬টি শিপ টু শোর গ্যান্ট্রিক্রেন, ২টি আরটিজি এবং ১টি মোবাইল হারবার ক্রেন সংগ্রহের এলসি খোলা হয়েছে। এনসিটির জন্য মোট ৫১টি ইকুইপমেন্টস সংগ্রহের প্রস্তাব রয়েছে। টার্মিনাল ও বন্দরের কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ইতোমধ্যেই পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৫টি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আরএফপি চূড়ান্তকরণের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে দেশবাসীর বহু কাক্সিক্ষত ‘বেটার্মিনাল’। প্রস্তাবিত এই টার্মিনালের জন্য ৯০৭ একর জমির মধ্যে মাত্র ৬৮ একর জমি ব্যক্তি মালিকানার, বাকি ৮৩৯ একর জমি সরকারী খাস। ব্যক্তি মালিকানার জমি ইতোমধ্যেই অধিগ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। চলতি বছরের ৩০ মের মধ্যেই জেলা প্রশাসন ৬৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করবে। এরপরই শুরু হবে ডেলিভারি ইয়ার্ড এবং ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। এছাড়া মীরসরাই ইকনোমিক জোনকে কেন্দ্র করে একটি জেটি নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য ডেনমার্ক ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘র‌্যামবল’ কে নিয়োজিত করা হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বন্দরের শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর জীবন উৎসর্গের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে শামিল হয়েছিল এই বন্দর। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে অবস্থানরত পাকিস্তানের অস্ত্রবাহী জাহাজ ‘এমভি সোয়াত’ থেকে অস্ত্র খালাস কার্যক্রম প্রতিহত করেছিলেন ডক-বন্দর এবং অন্যান্য শ্রমিকরা। নৌ কমান্ডোদের সাড়া জাগানো ‘অপারেশন জ্যাকপট’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিলেন। নৌ পরিবহনমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী এবং সংস্কৃতিমন্ত্রীর সমন্বিত নির্দেশনায় আমরা অপারেশন জ্যাকপটকে চলচ্চিত্রে রূপদানের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করেছি। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের মনুমেন্ট ও জাদুঘর নির্মাণের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন। চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি এবং দক্ষতার বিষয়য়ে উল্লেখের পাশাপাশি তিনি অদূর ভবিষ্যতে পণ্য হ্যান্ডলিং আরও অনেক বৃদ্ধির প্রাক্কলন তুলে ধরে বলেন, অগ্রযাত্রা এই হারে চললে ২০৪৩ সালের ১৪ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি ৪০ লাখ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য হ্যান্ডিলিং করতে হবে। সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প নিয়েছে। পায়রাতে এরমধ্যেই জাহাজ ভেড়া শুরু হয়েছে। আর চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ৭০ লাখ টিইইউএস কন্টেনারে উন্নীত করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৮ সালের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে তিনি অভিমত রাখেন। মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড মেম্বার কমডোর শাহীন রহমান, ক্যাপ্টেন খন্দকার আকতার হোসেন এবং কামরুল আমিন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, বন্দর দিবস ঘিরে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কাল (বুধবার) উৎসবমুখর থাকবে বন্দরকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষ যেমন নানা কর্মসূচী নিয়েছে তেমনিভাবে বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোও নিয়েছে অনেক কর্মসূচী। এরমধ্যে রয়েছে মধ্যাহ্নভোজ, আলোচনা সভা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা, বিদায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্মাননা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×