ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠিখেলা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২১ এপ্রিল ২০১৮

গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠিখেলা

লাঠির ঘূর্ণির খট খটাখট খট খটাখট শব্দকে চাপা দিতে পারেনি ঢোলকের বাদ্য। লাঠিয়াল বাবলু মিয়ার লাঠির ঘূর্ণনের শৈলীতে কাবু হলো মতি মিয়া। না- মতি মিয়ার মাথায় কিছু হয়নি, লাঠিটি পড়ে গিয়েছে শুধু। এই পর্বের বিজয়ী বাবলু মিয়ার লাঠি উঁচিয়ে উচ্ছ্বাসে শরিক হলো দর্শকরা। তরুণ সমর্থকরা নাগিন ড্যান্স দিয়ে আরও কিছুটা মাতিয়ে দিল। এই হলো লাঠিখেলা। বাঙালীর ঐতিহ্যের এমন লাঠিখেলা কোন রকমে টিকে আছে। মেলার সিজনে গ্রামের লাঠিখেলার লাঠিয়ালদের ডাক পড়ে। এক সময় লাঠিয়াল নাম শুনলেই আঁতকে উঠত গ্রামের লোকজন। ইংরেজ শাসনামলে জমিদাররা তাদের প্রজাদের শাসনে রাখতে লাঠিয়াল পুষত। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর লাঠিয়ালরা কিছুকাল নীরবে ছিল। পরবর্তী সময়ে প্রভাবশালী জোতদার, গ্রামের মাতবর ও চর দখলকারী প্রভাবশালীরা লাঠিয়াল পালতে শুরু করে। চর দখলে লাঠিয়ালদের ভাড়া করা হয়। বরেণ্য চিত্র পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা ‘লাঠিয়াল’ নামে ছবি নির্মাণ করে, যা পুরস্কার পায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো : লাঠিয়াল প্রতিপক্ষের সঙ্গে লাঠি যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়নি। লাঠি নিয়ে কসরত দেখানো ছিল এক ধরনের মার্শাল আর্ট। অনুশীলনকারীদের বলা হতো লাঠিয়াল। লাঠিখেলা হলো হাতে লাঠি ঘুরানোর কৌশল। এই কৌশলে যে যত নিপুণ শৈলী প্রদর্শন করতে পারে সে তত ভাল খেলোয়াড়। অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়াল নিয়োগ করত। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তাদের লাঠি চালনায় দক্ষ করে তোলা হয়। দিনে দিনে লাঠি দিয়ে মারমারি করতে পটু হয় তারা। তখন বলা হতো : যার আছে লাঠি তার আছে শক্তি। লাঠি প্রকৃত শব্দ। যা এসেছে সংস্কৃত ইয়াস্টি থেকে। লাঠি এক ধরনের বাঁশ। যা তৈরি হয় বাঁশের মুগের গদা বা ডা-া দিয়ে। এই লাঠি কখনও লোহার রিংয়ের সঙ্গে আবদ্ধ করা হয়। লাঠিখেলার ইতিহাস থেকে জানা যায়, মার্শাল আর্টের মতো লাঠি আত্মরক্ষার কৌশল শেখায়। যা পরবর্তী সময়ে হয় লাঠিখেলা। খেলার জন্য ব্যবহৃত লাঠি সাড়ে চার ফুট থেকে পাঁচ ফুট লম্বা হয়। লাঠিকে ঠিক রাখার জন্য তৈলাক্ত করা হয়। মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রত্যেক খেলোয়াড় লাঠি দিয়ে নৈপুণ্য প্রদর্শন করে, যা দেখে মনে হবে রণকৈৗশল। বলিষ্ঠ যুবকরা এই খেলায় অংশ নেয়। তবে বর্তমানে কিশোর-যুবক-বৃদ্ধসহ সব বয়সীর মানুষ লাঠিখেলায় অংশ নেয়। পূর্বাঞ্চলের অনেক এলাকায় হালে তরুণীরাও লাঠি খেলছে। লাঠিখেলার অনেক নাম আছে। যেমন সড়কি বেলা, ফড় খেলা, ডাকাত খেলা, বানুটি খেলা, বাওই খেলা। লাঠি নিয়ে উপহাসের এক খেলাকে বলা হয় নড়িবাড়ি খেলা। লাঠিখেলার সময় উৎসাহ দিতে ঢোলক, কর্নেট, ঝুমঝুমি ও কাড়া ইত্যাদি বাজানো হয়। লাঠিখেলার সময় সঙ্গীতের তালে দর্শকরা নাচতে থাকে। সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×