ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৪ এপ্রিল ২০১৮

তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ

নিজের জীবন নিয়ে কোন ‘রহস্য’ তিনি করতে চাননি। বরং তার কল্পবিজ্ঞান কাহিনীতে রহস্য আছে, রহস্য থাকে। ভূতের রহস্য নিয়েও লিখেছেন সর্বশেষ গ্রন্থ ‘সোলায়মানের ভূত’। কিন্তু সেই ভূত তাকে আক্রমণ করেনি। যেমন করেনি তার কল্পবিজ্ঞানের রহস্য চরিত্র বা এলিয়েনরা ছুরিকাঘাত। বিপথগামী তরুণের হাতে তিনি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রহরা থাকাবস্থায় ছুরিকাহত হন। আহতকারীকে তিনি ক্ষমা করে দিতেই পারেন, তার উদারতা, মহত্ত্ব আর মানবপ্রেমের গভীরতায়। কিন্তু আইন তাকে ছেড়ে দেবে কেন, যখন সেই ধর্মান্ধতার বর্ম পরে জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে হত্যার জন্য আক্রমণ চালায়। মোহের তাড়নায় যখন পাশবিক হত্যাযজ্ঞের প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে, তখন ভয়াবহতা মাথা চাড়া দেয় অবশ্যই। দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও মুক্ত মনের মানুষ ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয়। মাস খানেক আগে অর্থাৎ গত তিন মার্চ বিকেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যেখানে তিনি শিক্ষকতাও করেন) ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানে তার ওপর হামলা চালায় এবং হত্যার চেষ্টায় উপর্যুপরি ছুরি চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে সিলেট হাসপাতালে এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৎপরতায় হেলিকপ্টারযোগে তাকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। ১২ দিন চিকিৎসা শেষে ১৪ মার্চ সিলেটে ফিরে যান। ছাত্ররা ঘটনাস্থল থেকে ফয়জুর হাসান নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে ছুরিসহ আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থানায় মামলাও করে। ঘটনার পর হামলাকারী ফয়জুরের বাবা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফজলুর রহমান, ভাই এনামুল হাসান ও ফয়জুরের বন্ধু সোহাগ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। বিভিন্ন মেয়াদে তাদের রিমান্ডে নেয়ার পর আদালতে ১৬৪ ধারায় তারা জবানবন্দীও দিয়েছেন। ফয়জুরকে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধকারী হিসেবে ফেরিওয়ালা সোহাগ মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এরপর থেকে নতুন করে আর কেউ গ্রেফতার হননি। তদন্তের কাজে গতি নেই। তদন্ত ফয়জুর, তার পরিবার ও স্বজনদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর বাইরে অন্য কোন মহলের সংযোগ রয়েছে কিনা সেসব কিছুই তদন্ত করা হচ্ছে না। এই হত্যাকা-ের জন্য কারা ফয়জুরকে উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে, ‘মগজ ধোলাই’ করেছে, কীভাবে হামলা করা হবে, তার ছক কষে দিয়েছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে না। ফলে এই তদন্ত নিয়ে রহস্য উপন্যাসের মতো ঘনীভূত হচ্ছে। ডক্টর জাফর ইকবাল তার ওপর হামলার জন্য হামলাকারীর পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা বা তার সহযোগীদের কথা সুস্থ হওয়ার পর উল্লেখ করেছেন এবং তিনি তা বিশ্বাসও করেন যে, তাকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তার এই ভাষ্য অনুসারে এটা স্পষ্ট নেপথ্যে যারা রয়েছে, তদন্তে তাদের আড়াল করা হচ্ছে। তদন্তকারীদের মধ্যে ঢিলেঢালাভাব সন্দেহ জাগায়, সুষ্ঠু তদন্ত হবে কিনা। মামলাটির তদন্ত পুলিশের হাতে থাকলেও ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, গোয়েন্দা সংস্থা। ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল থেকেই পুলিশ টিম পালাক্রমে তাকে সর্বক্ষণিক প্রহরা দিয়ে আসছে। ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের পাশে দাঁড়িয়েই ফয়জুর হামলা চালায়। হামলার পর পুলিশ সক্রিয় হয়। এ হামলার ঘটনা সারাদেশের সচেতন-অসচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তরুণরা প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন পরিবারের। দেশবাসী ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। সবাই তার সুস্থতা কামনা করেছে। তিনি এদেশের একজন সম্পদ অবশ্যই। তাই তাকে হত্যা প্রচেষ্টার রহস্য অবশ্যই প্রকাশ হতে হবে। রহস্য কাহিনী মানুষ চায় না। চায় সত্য ঘটনা প্রকাশিত হোক। দ্রুত তদন্ত শেষে বিচার হোক। প্রত্যাশা সকল স্তরের মানুষেরই।
×