ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু পরিবর্তন গ্রিনল্যান্ডের প্রাণিজগতে ক্ষতিকর প্রভাব

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ২৩ মার্চ ২০১৮

জলবায়ু পরিবর্তন গ্রিনল্যান্ডের প্রাণিজগতে ক্ষতিকর প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে অবাস্তব বলে যারা উড়িয়ে দেন, তাদের সামনে সাক্ষাত প্রমাণের কিন্তু কোন অভাব নেই। গ্রিনল্যান্ডে গবেষকরা বেশকিছু প্রাণীর জীবনযাত্রা অনুসন্ধান করে এই সর্বনাশা প্রক্রিয়ার অকাট্য প্রমাণ পেয়েছেন। ইয়োহানেস লাং আইসল্যান্ডের এক বৃদ্ধের কাছে মাদি শিয়ালের ডাক নকল করতে শিখেছিলেন। সেই ডাক শুনলে সুমেরুঅঞ্চলের শিয়ালশাবকরা তাদের বাসা থেকে বেরিয়ে আসে, অবশ্যই এখানে তাদের অস্তিত্ব থাকলে। বেশ বড় বাসা বলে মনে হচ্ছে। আর্কটিক শিয়াল যে এখানে বসবাস করে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। চারদিকে হাড়গোড় আর পালক ছড়িয়ে রয়েছে। একটা বড় শিয়াল ধরতে পারলে তা হবে লটারিতে জ্যাকপট জেতার মতো ঘটনা। এখানে যে কিছু শিয়াল রয়েছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। শাবকের কণ্ঠ শোনা গেছে। এর অর্থ, তাদের বাবা-মাও রয়েছে। মায়ের মতো ডাক শুনে প্রথমে তারা জবাব দিল। তারপর সত্যি কয়েকটা শাবক বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। এবার এক বড় আর্কটিক শিয়াল ধরে তার শরীরে ট্রান্সমিটার বসানো হবে বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রিনল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে মানবহীন ট্রাইল দ্বীপে চলছে এই কর্মকাণ্ড। সুমের অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত গ্রীষ্মে জার্মান ও ফরাসী বিজ্ঞানীরা সেখানকার প্রাণিজগতের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। প্রথমেই তাঁদের আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করতে হয়। তাঁবুর ক্যাম্পের বাইরে বৈদ্যুতিক বেড়া ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রস্তুত রাখতে হয়। তা না হলেই ক্ষুধার্থ পোলার ভালুক হামলা চালাতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রে ভাসমান বরফ গলতে থাকায় সেখান থেকে তাদের পাকা জমিতে চলে আসতে হয়। কিন্তু গবেষকদের মূল আগ্রহ ছোট লেমিং-কে ঘিরে। প্রায় ৩০ বছর আগে বেনোয়া সিটলার এই গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, বছরে বছরে লেমিং-দের সংখ্যা কমে চলেছে। ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেনোয়া সিটলার বলেন, ‘সাধারণত বছরে নয় মাস বরফের চাদর সুরক্ষা দিত। এখন প্রথম বরফ পড়তে অনেক দেরি হয়। বরফ তাড়াতাড়ি গলেও যায়। অর্থাৎ বরফের চাদরের নিচে নিরাপদে বংশবৃদ্ধির সময় প্রায় এক মাস কমে গেছে। তাই আগের তুলনায় লেমিংদের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বরফ কমে চলেছে। এর নাটকীয় প্রভাব দেখা যাচ্ছে। কারণ গ্রিনল্যান্ডের ইকোলজিতে লেমিংদের কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে। কারণ তারা শিয়াল বা আর্কটিক পেঁচার মূল খাদ্য। ফলে লেমিং কমে যাওয়ায় তাদের খাদ্যে টান পড়ছে। গবেষকরা তাই প্রতিবছর লেমিং ও তাগের বাসার গণনা করেন। বেনোয়া এক শীতকালীন বাসার হদিস পেয়ে খুশি। আগে যেখানে প্রায় ৪,০০০ বাসার সন্ধান পাওয়া যেত, আজ সেখানে ৪০০টি পেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। প্রতি গ্রীষ্মে বেনোয়া সিটলার তুন্দ্র্রার মধ্য দিয়ে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার পাড়ি দেন এবং চারদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমাণ সংগ্রহ করেন। ইয়োহানেস লাং কামানে বারুদ ভরছেন। স্কুয়া পাখির দিকে লক্ষ্য করে কামান দাগবেন তিনি। শুধু প্রজননের জন্য তারা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রতিবছর এখানে উড়ে আসে। একমাত্র বাসার মধ্যে তাদের ধরা যায়। তারপর তারা হামলা চালাতে কাছে চলে আসে। প্রশ্ন হলো, লেমিং-এর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই পাখিরাই বা কী খায়? সেটা জানতে তাদের শরীরেও ট্রান্সমিটার বসানো হবে। এই কামানের জাল পাখিদের ক্ষতি করে না। কিন্তু খুব দ্রুত কাজ সারতে হয়। পাখিটির মাপ নেয়া হচ্ছে। তার পায়ে এখনও গত বছরের ডেটা লগার লাগানো রয়েছে। গবেষকরা সেটি সংগ্রহ করে তাদের রুট সম্পর্কে আরও জানতে চান। ইয়োহানেস লাং বলেন, ‘এই অংশ অত্যন্ত মূল্যবান, এখানে তথ্য ভরা আছে। এক বছর ধরে এটি লাগানো ছিল। এই দলের বেশিরভাগ পাখি শীতের সময়ে নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা ভারত মহাসাগরের মাদাগাস্কার দ্বীপে হাইবারনেট করে। লগ দেখে আমরা সেটা জানতে পারি। কিছু পাখি আবার ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, অর্থাৎ দক্ষিণ আমেরিকায় চলে যায়। আমরা জানতে চাই, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? কারণ পাখিরা হাইবারনেশনের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বেছে নেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের শীতকালীন বাসস্থান ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের সমস্যা হবে।’ পয়ে নতুন ডেটা লগার লাগানোর পর পাখিটি উড়ে যেতে পারে। গবেষকরা অনেক কিছুই জানতে পারেননি। তবে এটা স্পষ্ট, যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। এমনকি স্যান্ডারলিং-এর মতো ছোট পাখিরাও চাপের মুখে পড়ছে। তারা এখানে মাটিতে সবার অলক্ষ্যে বংশবৃদ্ধি করত। সূত্র : বিবিসি
×