ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও কারলাইল

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৩ মার্চ ২০১৮

আবারও কারলাইল

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে বিএনপির দহরম-মহরম অনেক পুরনো। পাকিস্তানী চেতনা ও মানসিকতায় লালিত বলেই উভয় উভয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহমর্মিতায় একপ্রাণ যেন। বিএনপি-জামায়াত মূলত একই পরিবারের দুই ভ্রাতা। তারা তা স্বীকার যেমন করেন, তেমনি আচরণেও প্রমাণ করেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে হাত ধরে তারা শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে যা করেছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশের মূল চেতনার বিরোধী। দেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসকদের যে প্রচেষ্টা এবং যুদ্ধাপরাধী ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধীদের দাপট তৈরিতে আজও সক্রিয় উভয় দল। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের তাই বিএনপির ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে স্বাধীন দেশের পতাকা ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়ে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে অপমানিত শুধু নয়, স্বাধীনতাকেই নস্যাত করে দিতে সচেষ্ট ছিল। তাই দেখা যায়, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য বিএনপি দেশজুড়ে অবরোধ ও হরতাল ডেকে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। শুধু তাই নয়, পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, রেললাইন উপড়ে ফেলা, সড়ক ও বৃক্ষ কেটে ফেলা, অফিস আদালতে অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজি সবই চালিয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক গড়ে তোলার অর্থই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার বিরোধী হওয়া। যে কারণে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন বেগম জিয়া ও তার দল। এমনকি আদালতের মর্যাদা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিদেশী কূটনীতিকদের কাছেও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় যুদ্ধাপরাধীদের মামলাকে বিঘিœত করার জন্য বিএনপিকে সহযোগী বানিয়ে সারাদেশে নাশকতা ও জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল যুক্তরাজ্যের ইহুদী আইনজীবী লর্ড কারলাইল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কট্টর সমালোচক ব্যক্তিটি ব্রিটেনে নানা সভা, সেমিনার, এমনকি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে দূতিয়ালিও করেছিল। যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ-ের রায় আদালত বহাল রাখার পর লর্ড কারলাইল বাংলাদেশ সরকারের কাছে লেখা পত্রে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং ওই আদালতের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার সুপারিশ করেছিলেন। আলবদর নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর না করার দাবিতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের কাছে চিঠিও লিখেছিলেন এই ব্রিটিশ আইনজীবী। অবাক কা- যুদ্ধপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার সেই লর্ড কারলাইলকে বিএনপি খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। লন্ডনে পলাতক দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই নিয়োগ দাতা। খালেদার দুর্নীতির মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে বিশ্ববাসীকে জানাবেন। খালেদা জিয়ার মামলাগুলো পরিচালনা করার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেবেন। বিএনপির যেসব আইনজীবী মামলা পরিচালনা করে আসছিলেন তারা যে অযোগ্য তা মনে করছে বিএনপি নেতারা। তবে তাদের দেশী আইনজীবীরা বলছেন, মামলায় লড়তে বিদেশী আইনজীবীর কোন প্রয়োজন নেই। মামলাগুলো এমন ধরনের নয় যে, বিদেশী পরামর্শক প্রয়োজন হতে পারে। বাংলাদেশবিরোধী একজন আইনজীবীকে নিয়োগ দানের মধ্যে খালেদা-তারেকের দেশপ্রেম যে অগভীর তা আবারও প্রমাণিত। আরও বিস্ময়কর যে, ডক্টর কামাল হোসেনও খালেদার মামলার পরামর্শক হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, করাটাই স্বাভাবিক। কারণ পেশাগত দিক থেকে তারা অভিন্ন ও একদেশদর্শী বলে এটা সম্ভব হচ্ছে। বেগম জিয়া ও তার পুত্র দুর্নীতিবাজ হিসেবে যে খ্যাতি পেয়েছেন আশা করি কারলাইলের কর্মকা-ে তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবে।
×