ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১ কোটি মায়ের হিসাব থেকে ১০ লাখ উদ্যোক্তা তৈরি করতে চায় রূপালী ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

১ কোটি মায়ের হিসাব থেকে ১০ লাখ উদ্যোক্তা তৈরি করতে চায় রূপালী ব্যাংক

প্রশ্ন : রূপালী ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি কি? এক কথায় বলতে গেলে ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি খুবই ভাল। গত বছর যেমন তারল্যের আধিক্য ছিল। এখন তা ব্যালেন্স হয়ে গেছে। বলা যায়, বিনিয়োগের একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। নতুন করে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে। ফলে তারল্যে একটা সুসময় অবস্থায় ফিরে এসেছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে বিনিয়োগ যেহেতু বাড়ছে সেহেতু ব্যাংকিং খাত খুবই আশাব্যঞ্জক। প্রশ্ন : রূপালী ব্যাংকের গ্রাহক সেবার বিশেষত্ব কি? ব্যাংকের কাজই হলো গ্রাহকদের সেবা দেয়া। আমানত সংগ্রহ করার পাশাপাশি ঋণের যোগান দেয়া। অতীতে আমাদের সকল সেবা ম্যানুয়ালি ছিল। ফলে মানুষের সেবা পেতে অনেক সময় লাগত। অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় আইটিতে আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন গ্রাহক সেবার মান অনেক উন্নতি করেছি। ব্যাংকে ৫৬৩ শাখা কোর ব্যাংকিং সিস্টেমের (সিবিএস) আওতায় আনা হয়েছে। ফলে সেবার মান অনেক বেড়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে গ্রাহকরা সেবা পাচ্ছে। আমাদের ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা এই সেবা দিচ্ছেন তাদের দেশ-বিদেশে আরও বেশি প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া কর্মকর্তাদের প্রযুক্তি জ্ঞান বাড়ানোর লক্ষ্যে নিয়মিত বিভিন্ন সভা-সেমিনার করা হচ্ছে। প্রশ্ন : আপনার ব্যাংক কোন্ ধরনের গ্রাহককে বেশি পছন্দ করে? আমানতকারী আমাদের গ্রাহক। যারা ঋণ নিচ্ছেন তারাও আমাদের গ্রাহক। তবে ঋণের ক্ষেত্রে আমরা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছি এসএমই খাতকে। বড় বড় শিল্প ঋণে না গিয়ে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ দিচ্ছি। নতুন উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা তৈরিতে আমরা ঋণ দিতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। পাশাপাশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে আমাদের কৃষি খাত। আমাদের চাষী ভাইদেরকেও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ ও আমানতের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের অবস্থা কি? সুদের হার কখনও নির্দিষ্ট করা থাকে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইড লাইন অনুযায়ী ৫ শতাংশের মধ্যে স্প্রেড থাকার নিয়ম। এই নির্দেশনা পরিপালনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমানতের একটু চাহিদা বেড়েছে ফলে সুদের হারও বাড়িয়েছি আমরা। সেটার প্রতিফলন ঋণের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে। প্রশ্ন : সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আপনার ব্যাংক কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে? সাইবার নিরাপত্তা এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যাংকের সব শাখা অটোমেশন করার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তাজনিত হুমকিও বাড়ছে। এসব হুমকি মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হচ্ছে। সাইবার হুমকি নিরসনের জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। এগুলো নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে আমরা করছি। প্রশ্ন : ব্যাংক খাতের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি? এই মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপী ঋণ। যে কোন মূল্যে খেলাপী ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। তবে সেটা শতভাগ আদায় করা যাবে এটা বলা যাবে না। ঋণ দিলে একটু চ্যালেঞ্জ থাকবে। প্রশ্ন : আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন? আমাদের ৫ বছরের একটা পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা বলেছিলাম, রূপালী ব্যাংক ২০১৭ সালে ঘুরে দাঁড়াবে। গত বছর আমরা লোকসানী শাখা ও লোকসান কমিয়ে আনার পাশাপাশি ৫৩৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছি। এ বছর আমাদের স্লোগান হলো-২০১৮ সালে শীর্ষে যাবে রূপালী ব্যাংক। আমাদের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এসএমইকে গুরুত্ব দিচ্ছি, সবগুলো শাখাই অটোমেশনের আওতায় নিয়ে এসেছি। খেলাপী ঋণ আদায়ের জন্য যে চেষ্টা ছিল আমাদের তা করতে পেরেছি। নতুন করে ঋণের প্রবাহ বাড়ানো হয়েছে। গত বছর ১৪৪ শাখা লোকসানে ছিল। বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৩টি। ৮৭ কোটি টাকা লোকসান থেকে ৫৩৭ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে। আমরা গত বছর যেভাবে পরিকল্পনা নিয়েছি সেভাবেই কাজ করেছি। বলতে পারি আমরা একটা ইউটার্ন নিতে পেরেছি। আমরা আমাদের কিছু সূচকে শীর্ষে যেতে চাই। গ্রাহককে সেবা দেয়ার মানের সন্তুষ্টি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে চাই। আমাদের খেলাপী ঋণ কমাতে চাই। আমরা মানসম্পন্ন মুনাফা করতে চাই। সব ক্ষেত্রেই মানসম্পন্ন সেবা দেয়ার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে আমরা শীর্ষে পৌঁছাব। প্রশ্ন : রূপালী ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং ১ কোটি মায়ের হিসাব নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাই? ১ কোটি মায়ের হিসাব করার ফলে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা একটা প্রশংসা পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই রূপালী ব্যাংকের প্রশংসা করেছেন। এক্ষেত্রে সরকারের কিছু আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে। প্রায় ত্রিশ লাখ ভৌতিক হিসাব চিহ্নিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঠিক ডাটা বেজ তৈরি হওয়াতে নির্দিষ্ট সংখ্যক বই ছাপানোর মধ্য দিয়ে অনেক টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়া এক কোটি মা, ১ কোটি ২৩ লাখ শিক্ষার্থী এবং এক কোটি বাবা মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ মানুষের একটি বিরাট ডাটা বেজ তৈরি হয়েছে।
×