ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কানিজ ফাতেমা কলি

মিষ্টি আলুর গুণাগুণ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

মিষ্টি আলুর গুণাগুণ

শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকায় আলু অন্যতম। এই আলুর নানা প্রকারের মাঝে ভিন্ন স্বাদের এক আলুর নাম ‘মিষ্টি আলু’। পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এই মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং উপকারী তন্তু। সুস্থ থাকতে, ক্যান্সার মোকাবেলায়, বহুমূত্র রোগ প্রতিরোধে এবং নিয়ন্ত্রণে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মূত্রথলির নানা জটিলতা রোধে এক প্রাকৃতিক ওষুধ এই মিষ্টি আলু। ক্যান্সার প্রতিরোধ শুধু মিষ্টি আলুই নয়, সম্পূর্ণ উদ্ভিদটিই ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। রক্তবর্ণের মিষ্টি আলুগুলোতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং টিউমার প্রতিরোধী উপাদান, যা ভেষজ ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। তাইওয়ানে মিষ্টি আলুর পাতাকে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা হয়। এর ওপর গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, মিষ্টি আলুর পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, আলফা-ক্যারোটিন এবং বিটা-ক্যারোটিন, যা ফুসফুসের ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করে। উল্লেখ্য, ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ যে কোন খাবারই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা গেলে সহজেই ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো যায়। মিষ্টি আলুর খোসাও এ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। এই মিষ্টি আলুর খোসা মাথা, ঘাড়, স্তন, মলাশয় এবং ডিম্বাশয়ের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রহিত করে এ সকল ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। হৃৎপিন্ডের যত্ন হৃদপেশির প্রসারণশীলতা বা টান ঠিক রাখতে মিষ্টি আলু খুবই কার্যকর বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে। ইঁদুরের ওপর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মিষ্টি আলুর ‘ভেসোরিলাক্সেশন মেকানিজম অফ এ্যাকশন’, বা হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠগুলোর সংকোচন-প্রসারণশীলতা ভাল রাখতে এ্যাসিটাইলকোলিনের মতোই কাজ করে মিষ্টি আলু। ত্বকের সংবেদনশীলতা রক্ষা এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য কতটা উপকারী, সেটা সকলেই জানেন। যেহেতু মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, তাই এটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’, যা ত্বকের বলিরেখা দূর করে এবং ত্বককে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি মিষ্টি আলু গ্রহণের একটি বড় উপকারিতা হলো এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ইঁদুরের ওপর গবেষণায় দেখা গিয়েছে মাত্র সাতদিন মিষ্টি আলু গ্রহণ করেই সেগুলোর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও ভাল কাজ করছে! দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখা মিষ্টি আলুতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও মিষ্টি আলুতে রয়েছে এ্যান্থোসায়ানিন, যা চোখের রেটিনার রঞ্জক কোষের বৃদ্ধি ও রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আলসার প্রতিরোধ পেটের পীড়ায়, পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধেও মিষ্টি আলুর জুড়ি মেলা ভার। শুধু তা-ই নয়, মিষ্টি আলু গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের আলসার রয়েছে তারা যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মিষ্টি আলু রাখেন, তাহলে আলসার প্রতিকারে কাজ করে। এই তথ্যও ইঁদুর নিয়ে করা গবেষণা থেকে প্রাপ্ত। তবে এতে অক্সালেট থাকায় কিডনি এবং পিত্তথলির সমস্যা থাকলে মিষ্টি আলু কম গ্রহণ করাই শ্রেয়। ওজন নিয়ন্ত্রণ খেয়েও ওজন কমানো যায়– ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। মিষ্টি আলুতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকলেও রয়েছে জটিল কার্বোহাইড্রেট, যা পুষ্টিগুণে পূর্ণতা দেয়। এতে রয়েছে স্থূলতা নিরাময়কারী উপাদান, যা দেহে চর্বি জমতে দেয় না। কীভাবে খাবেন? এত পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্যটি কীভাবে খেলে পুষ্টি উপাদানগুলো ঠিকঠাকভাবে পাবেন, তা জানাটা খুব জরুরী। রান্না করে বা শুধু সেদ্ধ করে মিষ্টি আলু খাওয়া যায়। তবে যেভাবেই খাওয়ার উপযোগী করুন না কেন, বেশিক্ষণ সময় নেয়া যাবে না। সেদ্ধ করা মিষ্টি আলুতে সবচেয়ে ভালভাবে পুষ্টি উপাদানগুলো পাওয়া যায়।
×