ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন

মেধাতালিকা উপেক্ষা করে ছাত্রভর্তি, বিপাকে উত্তরা মেডিক্যাল কলেজ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

মেধাতালিকা উপেক্ষা করে ছাত্রভর্তি, বিপাকে উত্তরা মেডিক্যাল কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মেধা তালিকা উপেক্ষা করে ‘আগে এলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে বিপাকে পড়েছে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে এক ঘণ্টায় ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে ভর্তি কমিটির বিরুদ্ধে। মেধা তালিকার সামনের সারিতে থাকা অনেকে ভর্তি থেকে ছিটকে পড়েছেন। যারা ভর্তি হয়েছেন তারা ছিলেন অধিকাংশই পেছনের তালিকায়। আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তির শেষ সময়সীমা থাকলেও তড়িঘড়ি করে ১৭ ডিসেম্বর এক ঘণ্টার মধ্যেই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (মেডিক্যাল শিক্ষা) ডাঃ এম এ রশিদকে প্রধান করে বুধবার আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু ‘উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ’ এবং তাদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল স্টাডিজ এ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিএমএসআরআই) ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ এখনও কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য পরিচালক (মেডিক্যাল শিক্ষা) ডাঃ এম এ রশিদ সাংবাদিকদের জানান, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মেধা অনুযায়ী তালিকা প্রকাশ করার কথা। প্রথম মেধা তালিকা থেকে আসন পূর্ণ না হলে দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। একইভাবে দ্বিতীয় মেধা তালিকা থেকে আসন পূর্ণ না হলে তৃতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হয়। তৃতীয় মেধা তালিকা প্রকাশের পরও আসন খালি থাকলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যে-কেউ ভর্তির সুযোগ পাবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজে মোট আসন ৯০। এর মধ্যে বিভিন্ন কোটায় ১৮, আর সাধারণ কোটায় ৭২ আসন। এর মধ্যে প্রথম মেধা তালিকায় প্রথম দিন ১৫ আসনে ভর্তি হয়ে যান শিক্ষার্থীরা, যার ফল দেয়া হয় ১৪ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। বাকি ৫৭ আসনে দ্বিতীয় তালিকায় (সাধারণ কোটায়) ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারী আদেশ উপেক্ষা করে ‘আগে এলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ভর্তি করা হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ভর্তির নোটিস প্রকাশ করা হয়। এরপর এই মেডিক্যাল কলেজ থেকে ৯শ’ শিক্ষার্থী ভর্তি ফরম সংগ্রহ করেন। প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার তালিকায় থাকা সিরিয়াল ৩৩০৪ থেকে ৭০৮১ পর্যন্ত ডাকা হয়। ১৪ ডিসেম্বর ভর্তি হন ১৫। সাধারণ কোটার বাকি ৫৭ আসনের জন্য ১৪ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই তালিকায় ৭১৭৮ নম্বর সিরিয়াল থেকে ১৯৭১২ নম্বরের মধ্য থেকে ৫১৩ জনকে ডাকা হয়। ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে নোটিস বোর্ডে এবং সাড়ে পাঁচটায় ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাদের ১৭ রবিবার থেকে ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবারের মধ্যে ভর্তি হওয়ার জন্য ১৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকার পে-অর্ডার কাটতে বলা হয়। কিন্তু এর মধ্যে ওই সিরিয়ালে থাকা ১৭ জন ১৪ ডিসেম্বর অগ্রিম পে-অর্ডার কেটে রাখেন। এই দ্বিতীয় তালিকার ১৭ জন প্রথম তালিকার ফল বের হওয়ার আগেই কার আশ্বাসে অগ্রিম পে-অর্ডার কাটলেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরপর শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় পে-অর্ডার করার কোন সুযোগ ছিল না। গত ১৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের মেধা তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের নিয়ে কলেজে ছুটে আসেন। বেলা একটার দিকে কলেজের সপ্তম তলায় অফিস কক্ষের সামনে ৩শ’ জনের মতো শিক্ষার্থীর ভিড় দেখা যায়। এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, ১৪ ডিসেম্বর ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া কিছু শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় পেছনের দিকে থেকেও অফিস কক্ষে পে সিøপ জমা দিয়ে ভর্তির টোকেন নিয়ে ভর্তির জন্য আগেই অবস্থান নেন। সেখানে মেধা তালিকা অনুযায়ী ভর্তির জন্য কোন নিবন্ধন বই ছিল না। এমনকি কে আগে এলো আর কে পরে এলো তা শনাক্ত করারও কিছু ছিল না। পরে মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার কৌশল হিসেবে ভর্তি কমিটির এক অধ্যাপককে দিয়ে একটি নিবন্ধন বই তৈরি করা হয়। তবে এই নিবন্ধন বইয়ে ভর্তিচ্ছু সব শিক্ষার্থীর তালিকা ও স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি। ভর্তি হতে আসা কয়েকজন অভিযোগ করেন, যেসব শিক্ষার্থীর আগে থেকে এখানে ভর্তি কমিটির কেউ পরিচিত আছেন, তারাই সরকারী নিয়ম অমান্য করে ‘আগে এলে আগে পাবেন’ এই কালো আইনে ভর্তির সুযোগ নিয়েছেন। মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও ১৭ ডিসেম্বর পে-অর্ডার কেটে আনা অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি। বরং তারা ভর্তি কমিটির মুখোমুখি হতে চাইলে মেডিক্যাল কলেজের সিকিউরিটি গার্ডদের বাধা ও পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। জানা গেছে, মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকা ৮৯৬৯, ১০০০৪, ১২২৫৯, ১১৭৪৫ সিরিয়ালসহ অনেকেই ভর্তি কমিটির কিছু লোকের মনগড়া ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ কালো আইনের কারণে ভর্তি হতে পারেননি। অথচ মেধা তালিকায় পিছিয়ে থাকা ১৮৭১৮, ১৮৭৫১, ১৮৯২১, ১৮৯৭৬, ১৯০৪৩, ১৯১৫০, ১৯১৭১ সিরিয়ালসহ অনেক শিক্ষার্থীই অবৈধভাবে ভর্তি হয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, ১৪ ডিসেম্বর যারা অগ্রিম পে-অর্ডার কেটেছেন, মেধা তালিকায় তাদের সিরিয়াল হলো ৮০৭১, ১১০৪৫, ১২৪২৭, ১৫৫৮৬, ১৯০৪৩, ৮৮১৮, ৯৭৭১, ৭৪৩৮, ১২০৮৫, ৯২১৬, ৮৬১২, ১৩৩০২, ১০০৯৫, ৭১৭৮, ১০৮১৭, ১১৫৬৬, ১৪৯৪৬। ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আকরাম হোসেন বলেন, আমরা ভর্তির ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করিনি। আমরা তলিকার চেয়ে কিছু বেশি শিক্ষার্থী ছিল বলে ‘আগে আসলে আগে ভর্তি’র বিষয় বিবেচনা করেছি।’ এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা তাদের কাছে যথাযথ জবাব দেব।
×