ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ মামুন রশীদ

নেতৃত্ব মানেই চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

নেতৃত্ব মানেই চ্যালেঞ্জ

সাকিবকে সরিয়ে মুশফিক, মুশফিককে সরিয়ে সাকিব! গত ৮ বছরে দুইবার দলের নেতৃত্বে পালাবদল হয়েছে টেস্ট ক্রিকেটে নৈপুণ্যের পরিবর্তন আনতে। ২০০৯ সালে টেস্ট অধিনায়ক হওয়া সাকিব ২০১১ সালে ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে অনেক স্মরণীয় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ দল গত ৬ বছরে। কিন্তু সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলের ভরাডুবির পর আবার সেই সাকিবের কাঁধেই টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব তুলে দেয়া হয়েছে। ৬ বছর পর আবারও টেস্ট দলের নেতৃত্বে ফিরেছেন এমন সময়ে যখন কঠিন কিছু পরীক্ষা আছে সামনে। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া সফর করবে বাংলাদেশ দল। গত তিন বছরে ঘরের মাটিতে অনেক সিরিজ খেলে সাফল্য আসলেও স্বল্পসংখ্যক যে কয়েকটি সফরে গেছে বাংলাদেশ সেখানে ফলটা হয়েছে হতাশাজনক। সেই বিদেশ সফরগুলোতে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের নৈপুণ্যের উন্নতি ঘটানোই হবে সাকিবের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ভাল করার সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন সাকিব। কারণ, এখন দলে অনেক পারফর্মার ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন। তাদের কারণে নেতৃত্ব দেয়ার কাজটাও অনেক সহজ হবে বলেই দাবি করেছেন বিশ্বসেরা টেস্ট অলরাউন্ডার। অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের শুরুটা হয়েছিল কিছুটা আচম্বিতে! ততোদিনে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে ফেলেছেন। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কারণে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রথমবার ওয়ানডের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়ে যান। সে বছরেরই মাঝামাঝি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায়। সেটি ছিল অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রথম মিশন। কিন্তু প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই ইনজুরিতে পড়ে সিরিজ থেকে ছিটকে যান। তখন দায়িত্ব দেয়া হয় সাকিবকে। বিদ্রোহের কারণে ভঙ্গুর দলে পরিণত হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সুবর্ণ সুযোগটা কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি, দলকে জিতিয়েছিলেন টেস্ট। এরপর স্থায়ী অধিনায়ক হয়ে যান সাকিব দিন ফরমেটের। সবমিলিয়ে ৯ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে শুরুর সেই জয়টাই শেষ, এরপর বাকি ৮ টেস্টেই দলের পরাজয় দেখেছিলেন তিনি। তবে সবচেয়ে আলোচিত পরাজয়টি ছিল ২০১১ সালে জিম্বাবুইয়ে সফরে একমাত্র টেস্টে। সেটি ছিল সংগ্রামে পড়া জিম্বাবুইয়ের টেস্টে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ। ৬ বছর তারা স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিল টেস্ট ক্রিকেট থেকে। কিন্তু ফেরার ম্যাচেই তারা উন্নতির পথে থাকা বাংলাদেশ দলকে হারিয়ে দেয়। ওয়ানডে সিরিজেও খুব বাজেভাবে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল, জিম্বাবুইয়ে সিরিজ জিতে যায় ৪-১ ব্যবধানে। সে বছর ঘরের মাটিতে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশ দল খুব বাজে নৈপুণ্য দেখিয়েছিল। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাত্র ৫৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। তখন দর্শকরা হতাশায় বাংলাদেশ দলকে দুয়োধ্বনি দিতে থাকলে সাকিব অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে জিম্বাবুইয়ে সফরের পরই নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল সাকিবকে। যদিও ওই সময় পর্যন্ত দলকে ৫০ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে ২৩ ম্যাচ জিতিয়েছিলেন তিনি এবং হার দেখেছিলেন ২৬ ম্যাচে। তবে সে সময় ৪ টি২০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে সবগুলোতেই পরাজয় দেখেছিলেন। মুশফিকের অধীনে দুর্দান্ত কিছু সাফল্য পেতে থাকে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ব্যাটিংয়ে অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠেন ধারাবাহিকভাবে আলো ছড়িয়ে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা তিনি হজম করেন ২০১৪ সালে। সে বছর টানা ব্যর্থতার বৃত্তে আটকা পড়ে বাংলাদেশ দল তিন ফরমেটেই। এ কারণে সে বছর নবেম্বরে মুশফিকের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে ওয়ানডে ও টি২০ দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। মাশরাফি আসেন নেতৃত্বে। কিন্তু টেস্ট দলের নেতৃত্বে বহাল ছিলেন মুশফিক। কিন্তু ব্যাটিংয়ে এবং উইকেটরক্ষক হিসেবে টানা ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা পিছু ছাড়েনি তার। বিভিন্ন সময়ে বেফাঁস কিছু মন্তব্য করেও চাপের মুখে পড়েন তিনি। সেসব আগে থেকেই ছিল। সে কারণে ২০১৩ সালে জিম্বাবুইয়ে সফরে দলের ব্যর্থতায় ন্যুব্জ হয়ে সিরিজের মাঝপথেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন মুশফিক। তবে বোর্ড তাকে সুযোগ দিয়েছিল। এবার তিনি নিজে থেকে আর সরে দাঁড়াননি, তাকেই সরিয়ে দেয়া হলো। যদিও মুশফিকের অধীনে গত বছর ঘরের মাটিতে ক্রিকেট পরাশক্তি ইংল্যান্ড, চলতি বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক শততম টেস্ট এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরে টেস্ট জয়ের ঐতিহাসিক সাফল্য এনে দেন তিনি। কিন্তু ব্যাট হাতে এই সিরিজগুলোতে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে নৈপুণ্য দেখায় বাংলাদেশ দল দুই টেস্টের সিরিজে। গুঞ্জন আছে সে সময় কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহের সঙ্গেও মতের অমিল হয়েছিল তার। সবমিলিয়ে তাই মুশফিককে সরিয়েই দেয়া হলো। এ বিষয়ে পাপন বলেন, ‘আমরা ৪/৫ বছরের জন্য পরিকল্পনা করছি। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সাকিবকে নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে। আর মুশফিক আমাদের খুব ভালো ব্যাটসম্যান। আমরা চাইছি সে যেন ব্যাটিংয়ে অনেক বেশি মনোযোগী হতে পারে। সে কারণে চাপমুক্ত করতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ মুশফিক গত ৬ বছর ধরে বাংলাদেশ দলকে ৩৪ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ সময়ে বাংলাদেশ দল ৭ জয় তুলে নিয়েছে। এর মধ্যে ঐতিহাসিক তিনটি জয় আছে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ১৮ টেস্টে হার দেখেছেন তিনি এবং ৯ টেস্টে ড্র করে বাংলাদেশ দল তার অধীনে। সেদিক বিবেচনায় মুশফিকের অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য একেবারে খারাপও না। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে শুরু করে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে তিন ফরমেটেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব। সে সময় তিনি ৯ টেস্টে দলকে ১ জয় এনে দিলেও ৮টি পরাজয় দেখেছিলেন। সে সময় ৪ টি২০ ম্যাচেও নেতৃত্ব দিয়ে একটিতেও জয় আনতে পারেননি। তবে ওয়ানডে নেতৃত্বে সাফল্যটা ভালই ছিল সাকিবের। ৫০ ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করে তিনি ২৩ জয় আনার পাশাপাশি হার দেখেছিলেন ২৬ ম্যাচে। ৬ বছর আগে সাকিবকে হটিয়ে মুশফিক নেতৃত্ব পেয়েছিলেন। এবার সেই সাকিবের কাছেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হলো। যদিও সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট খেলেননি সাকিব, তিনি ৬ মাসের বিশ্রাম চেয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন এবং কোচ হাতুরাসিংহেও জানিয়েছেন সাকিবের না খেলাটা মেনে নিতে পারেননি। সেটাও তার কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার অন্যতম কারণ। আর হাতুরাসিংহের অধীনে টেস্ট দলে চাপের মুখে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। স্কোয়াডে থেকেও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্টে এ অলরাউন্ডার সাইডবেঞ্চে বসে ছিলেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজেও খেলা হয়নি তার। এখন তিনিই সাকিবের সহকারী। তিনিও দায়িত্বে ফিরেছেন এবং টেস্ট দলে নিয়মিত খেলার বিষয়টি এতে নিশ্চিত হয়েছে। হাতুরাসিংহে অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে, নতুন কোচের অধীনে যে পট পরিবর্তন ঘটবে সেটার শুরু হয়ে গেল টেস্ট দলের এই নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে। পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই। মাশরাফি টি২০ থেকে অবসর নেয়াতে সাকিব নেতৃত্বে ফিরেছিলেন। তখন থেকেই গুঞ্জন তিনি ৩ ফরমেটেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হতে পারেন। এখন দুই ফরমেটের হয়ে গেলেন। ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে বহাল আছেন মাশরাফি। এ বিষয়ে পাপন বলেছেন, ‘হতেও পারেন (তিন ফরমেটের অধিনায়ক)। তবে এখন মাশরাফি আছে ওয়ানডের অধিনায়ক। সেখানে হাত দেয়ার কোন সুযোগ নেই।’ সাকিব যখন তিন ফরমেটের নেতৃত্ব থেকেই ছিটকে গেলেন, সেই ২০১১ সালের ডিসেম্বরেই তিন উঠলেন টেস্ট অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়েরও শীর্ষে। পরবর্তীতে বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে, টেস্ট ও টি২০ এই তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই অলরাউন্ডার হিসেবে এক নম্বর হয়ে যান সাকিব। পারফর্মার হিসেবে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও সাকিবের বড় সমস্যা ছিল আচরণগত এবং শৃঙ্খলাজনিত। সেটাও অন্যতম কারণ ছিল তার নেতৃত্ব হারানোর। তিনি ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মিরপুরে দল ৫৮ রানে অলআউট হয়ে গেলে দর্শকরা দুয়োধ্বনি দিতে শুরু করে। ওই সময় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে বিতর্কিত হন অধিনায়ক সাকিব। শেষ পর্যন্ত নেতৃত্বই হারান দলেরও ক্রমাগত ব্যর্থতায়। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একই ভেন্যুতে ম্যাচ চলার সময় টিভি ক্যামেরার দিকে অশ্লীল ভঙ্গি করে আরেকবার সমালোচিত হন। সে বছর কোচ হাতুরাসিংহে দায়িত্ব নেয়ার পর শৃঙ্খলাভঙ্গ ও কোচের নির্দেশ অমান্য করার জন্য সাকিবের বিরুদ্ধে বিসিবিতে অভিযোগ করলে ৬ মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন। সেই সাকিবই আবার নেতৃত্ব পেয়েছেন। এমন একটি দলের যারা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটি বাদ দিলে আগের সিরিজগুলোতে টেস্ট ক্রিকেটেও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছে। ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে টেস্টে হারিয়েছে এবং মাঝে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েও নিজেদের শততম টেস্টে জয় তুলে নিয়েছে। মুশফিকের সেই দলটিকে এখন সাকিবের জন্য এগিয়ে নেয়ার মিশন। এ বিষয়ে অবশ্য সাকিব বলেছেন, ‘অবশ্যই কাজটা সহজ হবে। এখন বেশির ভাগ ক্রিকেটাররাই প্রায় সবসময় পারফর্ম করছে। ক্রিকেটাররা যখন পারফর্ম করে, অধিনায়কের ওরকম কোন কাজই থাকবে না। আমরা বেশ কয়েকজনই আছি, যারা দলের নেতা এবং যেকোন সিদ্ধান্তই আমরা একসঙ্গে মিলে নেই। কেউ অধিনায়ক থাক বা না থাক, সেটা ব্যাপার নয় যখন আমরা মাঠে খেলতে নামি সবার সাহায্যই দরকার হবে। আর রিয়াদ ভাই তো কয়েক বছর ধরেই বিপিএলে ভাল অধিনায়কত্ব করছে। নেতৃত্ব গুণ উনার ভেতর অনেক আগে থেকেই আছে। আমার কাছে মনে হয়, আমার জন্য কাজটি সহজ হবে। এটাও সুযোগ ভাল কিছু করার। কোন না কোন কিছু তো কেউ না কেউ শুরু করবে। যদি শুরু হয়, তাহলে খারাপ কী! যদিও কাজটা কঠিন। কিন্তু আমাদের যে দল আছে, আমরা যেভাবে খেলছি, অনেক কিছু করা সম্ভব। আশা করি সবাই মিলে ভাল করবে। সবাই মিলে ভাল করলেই দল ভাল করবে।’ সাকিবের নতুন অধ্যায়ে বাংলাদেশ দল এখন টেস্ট ক্রিকেটে কতটা ভাল করতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। নেতৃত্বের চাপ মাথায় নিয়ে তিনি নিজের ব্যাট-বলের নৈপুণ্যটা ধরে রাখতে পারেন কিনা সেটাও সময় বলে দেবে। এর পাশাপাশি পুরনো আচরণগত সমস্যা ও বিশৃঙ্খলতা কাটিয়ে দলকে সুসংবদ্ধ রাখাও অগ্নিপরীক্ষা তার জন্য।
×