ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যক্ষ্মার নিরাময়

প্রকাশিত: ০৩:০১, ৬ নভেম্বর ২০১৭

যক্ষ্মার নিরাময়

দেশে বিশেষ করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদটি উদ্বেগজনক। দ্রুত নগরায়ণ, ঘনবসতি, শিল্পাঞ্চল, বিপুল মানুষের চাপসহ ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গীর বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ খুবই আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সার্বিকভাবে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির সূচক আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে উন্নীত হলেও দারিদ্র্য একেবারে নির্মূল করা যায়নি। বস্তিবাসীর সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি এসবের সঙ্গে জড়িত। উল্লেখ্য, যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ। নিয়মিত চিকিৎসা না করালে এবং যক্ষ্মা প্রতিরোধী টিকা না দিলে তা সংক্রমিত হতে পারে অন্য দেহে। তাই পরিবারে কারও যক্ষ্মা হলে তা সংক্রমিত হতে পারে অন্য সদস্যদের মধ্যেও। তবে দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের জন্য সরকারী কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ছে। জাতীয় যক্ষ্মানিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা। প্রাথমিক অবস্থায় যক্ষ্মা শনাক্ত হলে স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসায়ই রোগী ভাল হয়ে যায়। তবে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মারোগীর চিকিৎসা নিতে হয় দীর্ঘমেয়াদী, অনধিক নয় মাস। পূর্ণ মেয়াদের মাল্টিপল ড্রাগ থেরাপিতে (এফডিটি) যক্ষ্মারোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়। তবু এখন পর্যন্ত শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তকরণে জটিলতা, নগরে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা ও এইচআইভি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সে অবস্থায় দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। পাশাপাশি গণমাধ্যমের সাহায্যে সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনা গড়ে তোলাও প্রত্যাশিত। সরকারের অনেক সাফল্যের অন্যতম একটি দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক। সম্প্রতি এটি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের মতো বহুজাতিক দাতা সংস্থার। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে ‘অসাধারণ ভূমিকা’ রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক। স্বাস্থ্য খাতে অভাবনীয় উন্নতির উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, এটি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে নবজাতক ও শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণসহ ১০টি সূচকে সন্তোষজনক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে অবশ্য কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দারিদ্র্য, চিকিৎসা উপকরণের অভাব, বিভিন্ন রোগের প্রকৃতির পরিবর্তন ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নারী ও শিশুর অপুষ্টির কথাও বলা হয়েছে। তদুপরি নগরায়ণসহ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মোট দেশজ আয়ের তুলনায় (জিডিপি) পর্যাপ্ত রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে চাহিদা পূরণ করাও কঠিন। ফলে অনেকেই সরকারের সরবরাহের বাইরে স্বাস্থ্যসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে অনেক গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা আরও সম্প্রসারণসহ প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া গেলে অচিরেই এর সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। এই সমস্যা মোকাবেলায় দাতাদের অর্থ ছাড়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারী তহবিলের অর্থ ছাড়ের সমন্বয় সাধন করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ও গতিশীল রাখতে হলে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে। সে অবস্থায় যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যাও কমে আসবে ক্রমশ।
×