ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদায় রিগান

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

বিদায় রিগান

মুক্তিযুদ্ধের পরম বন্ধু ফাদার মারিনো রিগান চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বাংলাদেশের অকৃত্রিম এই বন্ধু ইতালির ভিচেঞ্চায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ফাদার মারিনো ১৯৫৩ সালে খ্রস্টান ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে বাংলাদেশে আসেন। দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে শেষ পর্যন্ত বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, চিকিৎসা সেবা ও দুস্থ নারীদের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সেবা দেয়ার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে মুক্তিযোদ্ধার খেতাব দেয়া হয়। বাঙালীর বন্ধু হিসেবেই ফাদার মারিনো সমধিক পরিচিত। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে তিনি ইতালির ভিচেঞ্চায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চেয়েছিলেন কিন্তু অসুস্থতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ইতালির ভেনিস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় দশকেরও বেশি সময় তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেবামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি একজন দার্শনিক, লেখক ও অনুবাদক। তার কর্মপরিধির বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে শিক্ষামূলক কার্যক্রম। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠানে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য তিনি বৃত্তিসহ শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করেছিলেন। ফাদার মারিনো বাংলাভাষা শিখতে গিয়ে গভীরভাবে বাংলা সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি বাংলা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে গবেষণাও করেন। শরৎচন্দ্রকে দিয়ে এক্ষেত্রে তার প্রথম প্রবেশ। এর পর রবীন্দ্রসাহিত্যের সঙ্গে পরিচয়। তিনি ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলিসহ প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ। তার অনুবাদের তালিকায় রয়েছে লালন সাঁইয়ের তিন শতাধিক গানও। তিনি জসীম উদ্দীনের নকশীকাথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাটসহ বিভিন্ন কবির কবিতাও অনুবাদ করেন। ১৯৯০ সালে তার হাত ধরেই ইতালিতে রবীন্দ্র অধ্যয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ইতালীয় রূপকথা পিনোকিও অনুবাদ করেছেন বাংলাভাষায়। মানবসেবা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তাঁকে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে। দেশে-বিদেশে বহুসংখ্যক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভুলবে না। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার স্বজনদের প্রতি জানাই সমবেদনা।
×