ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তুফফাহুল জান্নাত মারিয়া

বিবেচনাবোধ যেন না হারায়

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১২ অক্টোবর ২০১৭

বিবেচনাবোধ যেন না হারায়

আমি যে ছেলেটিকে ভালোবাসি ওর নাম জিহাদ। সে আমাদের হলের ক্যান্টিন বয়। বয়স আর কত হবে? এই নয়/দশ মনে হয়। যে বয়সে শিশুরা মা-বাবার গলা জড়িয়ে ভূতের গল্প শোনে, ঝুম বৃষ্টিতে কচুপাতা মাথায় দিয়ে অন্যের বাড়ির আম কুড়াতে গিয়ে তাড়া খায় সেই বয়সে জিহাদেরা নোংরা প্লেটগুলো জড়ো করে এক এক করে ধুয়ে দেয়। মালিকের হাতের শক্ত চড় খেয়ে যে পিঠে চাকা চাকা লালচে দাগ হয়, খানিক বাদেই সেই পিঠেই ওরা বয়ে নিয়ে যায় ভারি ভারি বস্তা। ফুলের মালা বিক্রি করতে গিয়ে কেউ হয়ত খায় সজোরে ধাক্কা। ছুলে যাওয়া হাঁটু নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আবার ওরা চলে অন্য গন্তব্যে। পেটের ক্ষুধা বড় অদ্ভুত জিনিস। পিঠের দাগ আর উঠে যাওয়া চামড়ার তোয়াক্কা করে না। আমাদের মস্তিষ্ক তো কত আগেই ছুলে গিয়েছে তা না হলে কি করে পারি ওদের ঐ কোমল শরীরে আঘাত করতে? কি করে পারি দামী রেস্টুরেন্টে ওদের সামনে নিজে চিকেন ফ্রাই চিবুতে? কি করে পারি নিজেরা রিক্সায় আরাম করে বসে পেছনে ওদের ঝুলিয়ে আনতে? আমাদের পাশের বাসার এক কাজের মেয়ে বাড়িওয়ালার বাসা পরিবর্তনের কারণে যখন তাদের সঙ্গে দূরে চলে গেল, আমার মায়ের সেকি হাউমাউ কান্না। সেই মেয়ের চোখেও অশ্রু। আমি বাসা থেকে হলে চলে আসার সময় মা যেমন করে কাঁদে আর সেই মেয়ের জন্য মা যেভাবে কেঁদেছিলেন, সেই দুই কান্নার মাঝে পার্থক্য খুঁজে পাইনি। আমার কয়েকজন বন্ধুর বাসায়ও দেখেছি কাজের মেয়েদের সঙ্গে ওরা এমনভাবে আচরণ করে মনেই হবে না সেই বাসায় ওরা কাজ করতে এসেছে, মনে হবে আত্মীয়। কিছু কিছু ঘটনা পড়ে শিউরে উঠি। নরপিশাচদের মধ্যে কেউ কেউ নাকি ওদের শরীরে গরম পানি ঢেলে দেয়, ইস্ত্রি দিয়ে শরীর পুড়িয়ে দেয়, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। সভ্য জগতের মানুষ শুনুন, ওরা এই পথে শখ করে আসেনি। ওরা আসে দু মুঠো ভাত খেতে। দিন শেষে হয়ত অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা হয় সেই টাকা দিয়ে, ছোট ভাই-বোনের মুখে সামান্য খাবার জোটে। ওদের কিছু দিতে না পারলেও অন্তত নোংরা শরীর দেখে নাক না কুঁচকাই, শক্ত হাত দিয়ে পিঠে লাল দাগ না বসাই। একটু খানি স্নেহের পরশ দিয়ে অন্তত নিজের বিবেকের কাছে স্বচ্ছ থাকি। বিনিময়ে ওরা কিছু দিতে না পারলেও ¯্রষ্টার কাছে আমাদের জন্য যে আশীর্বাদটুকু করবে কোনকিছুর বিনিময়ে আমরা তা পাবো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×