ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের পেছনে আন্তর্জাতিক মদদ ;###;রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থেমে নেই

পশ্চিম রাখাইনে দ্বিগুণ শক্তিতে অভিযান- জ্বালাও-পোড়াও

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৮ অক্টোবর ২০১৭

পশ্চিম রাখাইনে দ্বিগুণ শক্তিতে অভিযান- জ্বালাও-পোড়াও

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন, বাড়িঘর জ্বালাও পোড়াও এবং দেশান্তরী হতে বাধ্য করার নেপথ্যে শুধু যে সে দেশের জান্তা সমর্থিত সরকার জড়িত তা নয়, এর নেপথ্যে যে আন্তঃদেশীয় চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রয়েছে তা দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। নেপথ্যের বহুমুখী শক্তির ইন্ধনেই মিয়ানমার সরকার বেপরোয়া গতিতে রোহিঙ্গাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে তাতে টলানো যাচ্ছে না মিয়ানমারকে। সবই যেন অন্তঃসারশূন্য। ফলশ্রুতিতে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা যেমন পৈশাচিক হিংস্র ছোবলে প্রাণ হারাচ্ছে, তেমনি দলে দলে পালাচ্ছে। আর পালানোর গন্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশ। এখন শুরু হয়েছে পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযান, যা ইতোপূর্বেকার চেয়ে আরও ভয়াবহ। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা বসতিগুলো। আর গুলি করে রোহিঙ্গাদের হত্যা করা একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নিধনযজ্ঞের আলামত আগের মতোই। শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণ আর গোলাগুলির শব্দ। রোহিঙ্গা পল্লীগুলো থেকে আগুনের কু-লী লক্ষ্যণীয়। গলা কেটে, জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। কখনও কখনও মায়ের কোল থেকে শিশুদের কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে গুলি করছে। অবিশ্বাস্য হলেও এসব ঘটনার সত্যতা এখন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। মিয়ানমার সরকারের ও জান্তা বাহিনী রাখাইনকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে এখনও অটল অবস্থানে থেকে বর্বরতার শেষ পরাকাষ্ঠা সৃষ্টি করে চলেছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নতুন করে রোহিঙ্গাদের বড় একটি ঢল আসতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আবারও আহ্বান জানানো হয়েছে ইইউ’র পক্ষ থেকে। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে নেপিদোকে (মিয়ানমারের রাজধানী) ঢাকার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-ইইউ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে এক যৌথ ঘোষণায়। রোহিঙ্গা নিধন অভিযান সর্বশেষ শুরু হয়েছে গত ২৫ আগস্ট রাত থেকে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে। শনিবার পর্যন্ত ৪৩ দিন অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার বাহিনীর সহিংসতা থামছে না। আর রোহিঙ্গারাও সে অঞ্চলে থাকতে পারছে না। এমন কোন দিন বা রাত নেই যে, রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে না। বাংলাদেশ মানবিকতার হাত সম্প্রসারিত করায় এখন পুরো কক্সবাজার অঞ্চল রোহিঙ্গাভারে জর্জরিত। সারাবিশ্ব অবাক বিস্ময়ে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের চিত্র প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই ইস্যুতে সোচ্চার ভূমিকা গ্রহণ করেছে। কিন্তু সবই যেন মূল্যহীন হয়ে আছে। এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচি সরকার সমগ্র বিশ্বকে রীতিমত বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের ন্যায় রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মিয়ানমারের এ সরকার মুখে যা বলছে তা চরম মিথ্যাচার। আর যা করে যাচ্ছে তা বিশ্ব মানবতার জন্য চরম লজ্জার। কিন্তু কে দেবে এ সঙ্কটের সমাধান। কোথায় লুকিয়ে রয়েছে এ সঙ্কট উত্তরণের উৎসটিÑএ নিয়ে কোন কূলকিনারা এখনও দৃশ্যমান নয়। সারা বিশ্বের অভিভাবক সংস্থা জাতিসংঘ অধিবেশনে জোরালোভাবে উঠেছে রোহিঙ্গা ইস্যুটি। জাতিসংঘ মহাসচিব এ পর্যন্ত বারে বারে মিয়ানমার সরকারকে অনতিবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা থামিয়ে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ধরনের আহ্বান এসেছে বিশ্বের অসংখ্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কাছ থেকে। কিন্তু কোন কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না মিয়ানমার সরকারকে। তারা একদিকে শর্ত সাপেক্ষে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলছে, অপরদিকে, সে দেশের আগের সরকারের অসমাপ্ত কার্যক্রম সমাপ্ত করার ঘোষণাও দিয়েছে। অর্থাৎ রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত সংখ্যালঘু মুসলমানদের বসতিশূন্য করেই ছাড়বে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাখাইনের পশ্চিমাঞ্চলে এখন সামরিক অভিযান আরও দ্বিগুণ গতিতে চলছে। আর এ কারণেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের স্রোত থামছে না। লোমহর্ষক এ ঘটনা বিশ্বের কোন দেশের কাছে আর অজানা নয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদের লেলিয়ে দেয়া জান্তা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে হেন কোন অপকর্ম নেই, যা বাস্তবায়ন করেছে না। রক্তেভেজা রাখাইন আর অশ্রুসজল নয়নে প্রতিদিন পলায়নরত রয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অসহায় সদস্যরা। এ নির্মমতা ইতোমধ্যে বর্বরতার ইতিহাস গড়েছে। কিন্তু তাতে কি মিয়ানমার দুর্দমনীয় গতিতে একের পর এক হিংস্র ছোবল মারছে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা পল্লীগুলোতে। রোহিঙ্গারা এখন সর্বহারা, দেশহারা। প্রাণ বাঁচানোর আশ্রয়স্থল হয়েছে বাংলাদেশ। এক রাতে এলো ১২ শতাধিক শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত আরও ১২ শতাধিক রোহিঙ্গা নাফ নদী হয়ে টেকনাফ সাগর উপকূল দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সীমান্তের সব পয়েন্ট খোলা রাখা হয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য শুধুমাত্র মানবিকতার কারণে। অনগ্রসর রাখাইন রাজ্যে এ বিষয়টি যতই জানাজানি হচ্ছে রোহিঙ্গারা ততই বাংলাদেশমুখী হচ্ছে। প্রথমে এসেছে হাজারে হাজারে। পরে তা হয়েছে লাখে লাখে। এখন আসছে শ’য়ে শ’য়ে। জাতিসংঘের নতুন সতর্ক বার্তা জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সর্বশেষ প্রদত্ত সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের আরেক দফায় বড় একটি ঢল নামতে পারে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রদান মার্ক লৌকক এ শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মিডিয়া কর্মীদের কাছে তিনি এ সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। মিয়ানমার সরকারকে আবারও রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধ ও বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা স্রোত থামছে না। সামরিক সহিংসতা অব্যাহত থাকায় রোহিঙ্গাদের নতুন একটি রোহিঙ্গা ঢল নামতে পারে। অপরদিকে, জাতিসংঘ এ ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জোয়েল মিল ম্যান। এই দুই কর্মকর্তা পৃথক পৃথকভাবে বিশ্ব গণমাধ্যমকে বলেছেন, কমপক্ষে আরও একলাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার সমূহ আশঙ্কা করা হচ্ছে। অপরদিকে, বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে ৪শ’রও বেশি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামের অর্ধেকই জ্বালিয়ে দিয়েছে সেনা সদস্য ও স্থানীয় মগরা। আরসা’র নতুন বার্তা রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন বিতর্কিত আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) এর পক্ষ থেকে শনিবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, তারা মিয়ানমারের যে কোন শান্তি প্রস্তাবে সাড়া দিতে রাজি আছে। আরসার এ ধরনের একটি বিবৃতি শনিবার রয়টার্স প্রকাশ করেছে। আরসার এ বক্তব্যের বিপরীতে মিয়ানমার সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। এর আগে আরসার পক্ষ থেকে একতরফা অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়ার পর তখন মিয়ানমার সরকারের পক্ষে বলা হয়েছিল সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করার কোন নীতি তাদের নেই। রাখাইনে ঢুকতে চায় জাতিসংঘ রাখাইন রাজ্যে সেনা ও উগ্রবাদীদের যৌথভাবে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনা নিয়ে সে অঞ্চলে ঢুকতে চায় জাতিসংঘ। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এ ব্যাপারে কোন ইতিবাচক ভূমিকায় নেই। এরপরও জাতিসংঘের মানবিকসংস্থা বিষয়ক দফতরের প্রধান মার্ক লৌকক জানিয়েছেন, তারা আশাবাদী। এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়াতে দ্বিগুণ শক্তিতে নেমেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে জাতিসংঘ রাখাইন রাজ্যে প্রবেশাধিকার চাইছে। রাখাইনে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম নিষিদ্ধ রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে সে অঞ্চলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশাধিকার যেমন নেই, তেমনি সে অঞ্চলের প্রকৃত তথ্যও মিয়ানমার সরকার কাউকে দিচ্ছে না। এরফলে জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তাদানের ২০টিরও বেশি সংগঠন সে অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ সহায়তা প্রদানের বিষয়টি ভিন্ন চোখে দেখার পর তাদের অবাধ যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে অতি সম্প্রতি বিশ্ব চাপের মুখে ২০ কূটনৈতিককে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশাধিকার দিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। কূটনৈতিকরা পরিদর্শন শেষে সারা বিশ্বের কাছে যে বার্তা দিয়েছে তা মিয়ানমারের বিপক্ষে গেছে এবং রোহিঙ্গাবিরোধী বর্বরতার ভয়াবহ চিত্র এতে উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটলে তাদের আশ্রয় হবে সেখানকার শরণার্থী ক্যাম্পে। যেগুলোকে তারা আগেভাগেই একেকটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হবে বলে বার্তা দিয়েছে। ৬ লাখ ছাড়িয়েছে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। বর্তমানে গড়ে কখনও হাজার, কখনও দু’হাজারেরও বেশি হারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সির দফতরের মন্ত্রীর ঢাকা সফরের পর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার যে আশা করা হয়েছিল সে আশা ইতোমধ্যে ভঙ্গ হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান, হত্যা, জ্বালাও পোড়াও অব্যাহত থাকায় প্রতিরাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। আশ্রয় কেন্দ্র হচ্ছে দেড়লাখ বাংলাদেশ সরকার ইতোপূর্বে রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৪ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি অবনতিশীল হওয়ায় এবং রোহিঙ্গারা দলে দলে আসতে থাকায় এখন এ ধরনের আশ্রয় কেন্দ্র দেড়লাখ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ত্রাণ সহায়তা শুরু থেকে যেভাবে বেসরকারী ত্রাণ সহায়তা প্রত্যক্ষ করা গেছে এখন তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে সরকারী এবং দেশী-বিদেশী পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছুচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ কাজের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে সেনা সদস্যরা। শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে আগের তুলনায় বহুগুণ বেশি। ৪২ দিনে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম রাখাইন থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে গেল ৪২ দিনে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম নিয়েছে। গর্ভবতী মহিলার সংখ্যা অগণিত। নোম্যানল্যান্ডে গত ৩০ দিনে জন্ম নিয়েছে প্রায় একশ শিশু। ৫ সহস্রাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত এক সপ্তাহে ৫ হাজারেরও বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। আশ্রয় নেয়া শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া ও কলেরার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, যা আগামীতে মহামারিতে রূপ নিতে পারে বলে ইতোমধ্যে সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এছাড়া অপুষ্টিতে ভুগছে রোহিঙ্গা শিশুদের বড় একটি দল। এছাড়া পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ৬০ শতাংশই শিশু। আর এদের মধ্যে ৩০ শতাংশের বয়স ৫ বছরের নিচে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা এখনও পুরোপুরিভাবে সমাধান করা যায়নি। তবে সরকারের পক্ষে ব্যাপক উদ্যোগে তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৪ সহস্রাধিক জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এছাড়া কলেরা ও ডায়রিয়ায় ভুগছে দশ সহস্রাধিক। পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা বার বার আশঙ্কা ব্যক্ত করছে যে, এ জাতীয় রোগ মহামারি আকারে রূপ নিতে পারে। ১৬ এইচআইভি রোগী শনাক্ত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৬ এইচআইভি রোগীর সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আবদুস সালাম। এরমধ্যে কিছুদিন আগে চমেক হাসপাতালে এইচআইভিতে আক্রান্ত এক রোহিঙ্গা নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, মিয়ানমার সর্বাধিক এইচআইভি রোগে আক্রান্ত দেশ হিসাবে বহু আগে চিহ্নিত হয়েছে। সে দেশে প্রায় আড়াই লাখ এইচআইভি আক্রান্ত রোগী রয়েছে। গত দু’বছরে এ রোগে সে দেশে মৃত্যুবরণ করেছে ৭ হাজার ৮শ’। ফলে এদেশটিকে এইচআইভির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফিরে না যেতে উস্কানি অভিযোগ উঠেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে না যেতে উস্কানি দিচ্ছে আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের ক্যাডাররা। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে চিহ্নিত আরএসও এবং আল ইয়াকিনের ক্যাডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলছে ঘাপটি মেরে থাকা রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপের কিছুসংখ্যক নেতা। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের বাহানায় ওসব রোহিঙ্গা জঙ্গী উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন ক্যাম্পে এখনও বিচরণ করছে। গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা দিনের বেলায় ঢুকে পড়ে আশ্রয় শিবিরে। তারা রোহিঙ্গাদের মগজধোলাই করে বলছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব ও সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কেউই ফেরত গেলে সব আশা গুড়েবালি হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, আল ইয়াকিনের সীমান্ত এলাকার সমন্বয়কারী মৌলবি শফিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে আরএসও ক্যাডার মৌলবি আয়াছ, মৌলবি ইয়াছিন ও মৌলবি নুর হোসেনসহ অনেকে রোহিঙ্গা বস্তিতে এ ধরনের উস্কানি ছড়াচ্ছে। ৩০টিরও বেশি পাহাড়ে বসতি মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে রোহিঙ্গারা ক্রমাগতভাবে আসছে। তারা বিচ্ছিন্নভাবে যত্রতত্র বসতি গড়ছে। এ প্রক্রিয়ায় টেকনাফ থেকে উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি পাহাড়ে এরা অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় প্রতিনিয়ত নিয়ে যাচ্ছে। তবে এ প্রক্রিয়া চলছে ধীরগতিতে। কেননা, রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে চাইছে না। সরকার পক্ষে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার লোকজন তাদের বিভিন্নভাবে আগ্রহী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে কেউ কেউ যাচ্ছে, আবার কেউ কেউ গা-ঢাকা দিয়ে থাকছে।
×