ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ

বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছিলাম ॥ ফেসবুক লাইভে জান্নাতুল

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ৪ অক্টোবর ২০১৭

বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছিলাম ॥ ফেসবুক লাইভে জান্নাতুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নির্বাচিত হওয়া জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও বিতর্ক। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের নবরাত্রি হলে অনুষ্ঠিত হয় লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ছয় বিচারকের তালিকায় নাম না থাকলেও আয়োজকদের পছন্দে জান্নাতুল নাঈমকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আগামী ১৮ নবেম্বর চীনে সানাইয়া শহরে অনুষ্ঠিতব্য ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার কথা ছিল চট্টগ্রাম থেকে উঠে আসা এই তরুণীর। পরবর্তীতে জানা যায়, মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নির্বাচিত হওয়া এই তরুণী বিবাহিত। প্রতিযোগিতার শর্ত অনুযায়ী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী নারীকে অবিবাহিত হতে হবে। এ তথ্য জানার পর শুরু থেকেই ওঠা বিতর্ক আরও বেশি জমাট বাঁধে। ফলে এই প্রতিযোগিতা এবং এর বিজয়ীকে নিয়ে সমালোচনামুখর সামাজিক যোগাযোগ্যমাধ্যমসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও দৈনিক পত্রিকাগুলো। এই বিতর্ক পরিস্থিতিতে জানা যায়, ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৭’-এর বিজয়ী হিসেবে থাকছেন না জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। প্রতিযোগিতার আয়োজক অন্তর শোবিজ ও অমিকন এন্টারটেইনমেন্টের একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মঙ্গলবার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, জান্নাতুল নাঈমের বিয়ের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আমরা জেনেছি ২০১৩ সালের ২১ মার্চ তার বিয়ে হয়, আড়াই মাস সংসারও করেছেন। বিয়ে করলে ‘মিসেস’ হয়ে যায়। অনুষ্ঠানটির নাম হচ্ছে ‘মিস’। সুতরাং বিবাহিত কেউ মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে যেতে পারবেন না। সেজন্য জান্নাতুল নাঈম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় থাকছে নাÑএটি চূড়ান্ত। গত দুই দিনে কয়েক দফায় আলোচনার মাধ্যমে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ও প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালের বিচারকরা এভ্রিলকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বলে জানা গেছে। জান্নাতুল নাঈমকে সরিয়ে দ্বিতীয় রানারআপ জেসিয়া ইসলাম অথবা তৃতীয় রানারআপ জান্নাতুল সুমাইয়া হিমিÑএ দুজনের মধ্যে একজন মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে যাবেন বলে সূত্র জানায়। প্রতিযোগিতার আয়োজকরা জানান, আজ বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সেখানেই প্রতিযোগিতার বিচারকদের উপস্থিতিতে সকল আলোচনা-সমালোচনার অবসান হবে। এদিকে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ফেসবুক লাইভে আসেন জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এই তরুণী জানান, তিনি বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছিলেন। ফেসবুক লাইভে এসে এভ্রিল বলেন, পৃথিবীর সব মানুষের কাছে সম্মান রেখে আমি কিছু কথা বলতে চাই। কেন আমি বিয়ের ব্যাপারটা গোপন করেছি, কেন আমি কম্পিটিশনে পার্টিসিপেট করেছি। আমি ছোটবেলা থেকে কখনও কোন বাধা বিপত্তির কাছে মাথা নত করিনি। কক্ষনো না। এখনও পর্যন্ত। যতই বাধা বিপত্তি এসেছে, চুপ করে সেটার বিপরীতে গিয়ে বারবার নিজেকে শুধরে নিয়েছি। বারবার আমি নিজেকে পরিবর্তন করেছি। একটা ১৬ বছরের মেয়েকে তার বাবা জোরপূর্বক বিয়ে দিচ্ছে, সে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছে। আর সেই মেয়ে এখন সাকসেসফুল, সেই মেয়ে তার সমাজের কোন কথা শোনেনি। সেই মেয়ে আশপাশের মানুষ কী বলেছে সেটাও কানে নেয়নি। ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দিলে তা আইনত সিদ্ধ হয় না উল্লেখ করে এভ্রিল বলেন, আমার একটাই উদ্দেশ্য ছিল বাল্যবিবাহকে আমি মানতে পারিনি। বাংলাদেশে আইন আছে। ১৬ বছরের একটি মেয়েকে বিয়ে দিলে সেই বিয়েটা হয় না। সেটা বাল্যবিবাহ হিসেবেই গণ্য হয়। আমি চেয়েছিলাম এই বাল্য বিয়ের বিপরীতে কাজ করতে। আমি প্রত্যেকটা মেয়েকে এটাই বোঝাতে চেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে একটা মেয়ে চাইলে অনেক কিছুই পারে। নিজের অধিকারটা নিজে আদায় করে নিতে পারে। আমি ডিভোর্সি, ফাইন, আমি একটা মেয়ে, একজন মানুষ হিসেবে আমারও অধিকার আছে। আমি চেয়েছিলাম দেশের মেয়েদের দেখিয়ে দিতে, একটা মেয়ে চাইলে কী কী পারে।” ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের নবরাত্রি হলে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করা হয়। সেদিন মঞ্চে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির নাম ঘোষণা করেন ভারতীয় উপস্থাপক শিনা চৌহান। তবে মুহূর্তেই বদলে যায় সেই সিদ্ধান্ত। আয়োজকের পক্ষ থেকে অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী মঞ্চে এসে জান্নাতুল নাঈমের নাম ঘোষণা করেন। এরপর পুরো বিষয়টি নিয়ে বিচারক ও দর্শকরা আয়োজকদের ভূমিকার সমালোচনা করেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চ্যাম্পিয়ন জান্নাতুল নাঈমকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরীও জানান, মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভুল হয়েছে। জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ওই প্রতিযোগিতার বিচারকরা সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাদের পছন্দের তালিকায় ছিলেন না এই তরুণী। যাচাই-বাছাই শেষে বিচারকেরা ভোট দিয়ে যাকে প্রথম নির্বাচিত করেন, আয়োজকের নির্দেশে উপস্থাপক তাকে দ্বিতীয় ঘোষণা করতে বাধ্য হন। এমন কা-ে বিস্মিত হন গ্র্যান্ড ফিনালের ছয় বিচারক। ‘লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালের বিচারক ছিলেন জুয়েল আইচ, শম্পা রেজা, বিবি রাসেল, চঞ্চল মাহমুদ, রুবাবা দৌলা ও সোনিয়া বশির কবির। এবারই প্রথম ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। আয়োজক প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫ হাজার আগ্রহী নাম নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্য থেকে কয়েকটি ধাপে বাছাই করা হয় সেরা ১০ জনকে। এই ১০ জন হলেন রুকাইয়া জাহান, জান্নাতুল নাঈম, জান্নাতুল নাঈম হিমি, জেসিকা ইসলাম, জারা মিতু, সাদিয়া ইমান, তৌহিদা তাসনিম, মিফতাহুল জান্নাত, সঞ্চিতা দত্ত ও ফারহানা জামান।
×