ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পবিত্র আশুরা পালনে সৈয়দপুরে ব্যাপক প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পবিত্র আশুরা পালনে সৈয়দপুরে ব্যাপক প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ প্রতি বছরের ন্যায় এবারো মহরম মাসের আগামীকাল রবিবার পবিত্র আশুরা পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে নীলফামারীর অবাঙ্গালি অধ্যুষিত সৈয়দপুরে। পবিত্র আশুরার দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে শোক ও ত্যাগের দিন হিসাবে পরিচিত হলেও সৈয়দপুরে আশুরা পালনে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের একটি অংশ আলাদা আলাদাভাবে ভিন্ন আঙ্গিকে তাদের তরিকানুযায়ী পালন করে থাকেন পবিত্র আশুরা। এলাকায় ৬৪ টির অধিক ইমামবাড়া থাকায় পবিত্র আসুরা পালনে তাজিয়ার শহরে রূপান্তরিত হয়েছে সৈয়দপুর তৈরি করা হয়েছে বড় বড় তোরণ। রঙ্গিন কাপড়ে বানানো তোরণের গায়ে জ্বলছে হরেক রং এর বাতি। আগামীকাল রবিবার পবিত্র আশুরা তাজিয়া মিছিলের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি টহলও থাকবে বলে জেলা প্রশাসন সুত্র জান্য়া। আগামীকাল রবিবার বাদজোহর সকলে সমবেত হবে সৈয়দপুর রেলমাঠে। এখান হতে বের করা হবে তাজিয়া মিছিল। শহর প্রর্দক্ষিন শেষে তা শেষ হবে হাতিখানা স্মরণীয় কারবালা চত্বরে। পুলিশ সুত্র মতে ২০১৫ সালের তাজিয়া মিছিলে সৈয়দপুরে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ব্যাপক নিরাপক্তা ব্যবস্থা থাকায় জঙ্গীরা সে হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়। ওই বছরের ১২ নবেম্বর সৈয়দপুর উপজেলায় হাতিখানা স্মরণীয় কারবালার খোলা মাঠে মাগরিবের সময় একাই নামাজ আদায় করছিল খাদেম হাসনাইন মাষ্টার(৬০)। তাকে ধারালো তরবারি দিয়ে নামাজের সেজদার সময় ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার করে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। ফলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে।আশংকাজনক অবস্থায় এলাকাবাসী ও দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে তাকে প্রথমে সৈয়দপুর হাসপাতালে পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে। ওই খাদেম সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট রেলওয়ে কলোনী এলাকর মৃত গোলাম রসূলের ছেলে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর তিনি বেঁচে যান। ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা মাঠে নামলে বেড়িয়ে আসে জঙ্গিরা এ ঘটনা ঘটায়। ওই ঘটনার সঙ্গে জরিত এমন দুই জঙ্গি আটক হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি জবাববন্দী প্রদান করেছিল। ফলে ২০১৬ সালে আশুরার তাজির মিছিলে কঠোর নিরাপক্তা রাখা হয়েছিল। ঠিক সে রকম এবারো নিরাপক্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান সৈয়দপুর থানার ওসি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম। আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ইমামবাড়ায় তাজিয়া বানানো শেষ করা হয়েছে। ঈমামবাড়াগুলোতে ইমাম হোসেনের মাজারকে স্মরণ করে তৈরি করা হয়েছে তাজিয়া। শুধু তাজিয়া মিছিল নয়, আশুরা উপলক্ষ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় চলবে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা, তলোয়ার ও আগুনের বিভিন্ন ধরনের খেলা। একই সঙ্গে মুখে উচ্চারিত হয় “ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন”। কেউবা অঝোর নয়নে কাঁদেন আর ইমাম হোসেনের মৃত্যুর স্মরণে মাতম গীত গাইতে থাকেন। প্রতি ইমামবাড়ায় সারারাত ঢোল বাজনা, তাজিয়া মিছিল, লাঠি খেলা, ইমাম হোসেনের ঘোড়ার প্রতিকৃতি হিসাবে মানত করে পাইক বাধা, ইমামবাড়ায় ফাতেহা পাঠ, নিশান চড়ানো হয়ে থাকে। আজ শনিবার রাত ১১ টার দিকে ইমামবাড়ায় বসানো হবে। সৈয়দপুর হাতিখানায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় প্রতীকী কারবালার আয়োজক কমিটির সদস্য জাভেদ জানান, মহরমের ৭ তারিখে কারবালা থেকে কিছু মাটি শহরের প্রতিটি ইমামবাড়ায় নিয়ে যান সেখানকার খলিফারা। বিশেষ নিয়ম অনুযায়ী সে মাটি একটি পাত্রে করে তাজিয়ার নিচে সংরক্ষিত রাখা হয়। এরপর তাজিয়াকে কেন্দ্র করে চলে অন্যান্য রীতিনীতি পালন। তিনি আরও জানান, শহর জুড়েই দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। তারা দেখতে আসেন, দোয়া পড়েন, ভক্তি করেন। মহরমের ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরার দিন মাটি যেখান থেকে আনা হয়েছিল সেখানেই রেখে আসা হয়। সে মাটি রাখার জন্যও যেতে হয় শোকাবহ মিছিল সহকারে। কারও কারও শরীর রঙিন রশি, জরির ফিতা এবং ছোট ছোট ঘুন্টির মালা দিয়ে পেঁচানো। প্রত্যেকের মাথা সাদা ও সবুজ কাপড়ের টুকরো দিয়ে ঢাকা। হাতে লাল সবুজ আর সাদা রংয়ের পতাকা। হাজার হাজার লোকের মিছিলে সৈয়দপুর শহরে তিল ধরনের জায়গা থাকে না। পরে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় সুন্নি সম্প্রদায়ের একটি অংশের এ আনুষ্ঠানিকতা। সৈয়দপুর শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা ও সৈয়দপুর শিয়া মসজিদস্থ আঞ্জুমানে আব্বাসীয়ার সেক্রেটারি সৈয়দ শাহিদ হোসেন রেজভী জানান, প্রতি বছর এ কেন্দ্রীয় মসজিদে মাতমে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিয়া সম্প্রদায় যোগ দেন। বিশাল এ শোক শোভাযাত্রাটি দেখতে পার্বতীপুর রোডে জমায়েত হন শহরের অনেক মানুষ।
×