ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অবাধ তথ্যপ্রবাহ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অবাধ তথ্যপ্রবাহ

তথ্য পাওয়ার অধিকার এযুগে মানুষের মৌলিক অধিকারেরই অন্তর্ভুক্ত। তথ্যের ওপরই নির্ভর করে জীবনপ্রবাহ পরিচালনার দিগন্তের বিস্তৃতি ঘটানো। মানুষ তাই তথ্য জানতে চায়। আর এই জানার আগ্রহ তার অসীম। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষ তার অবস্থান জেনে নিতে যেমন আগ্রহী হয়ে উঠেছে, তেমনি এই অবাধ তথ্যপ্রবাহ যুগেও মানুষ বিশ্বের সকল প্রান্তের তথ্য সম্পর্কে অবহিত হতে চায়। আর তথ্য জ্ঞাত হওয়ার মাধ্যমে মানুষের চিন্তা-চেতনার ঘটছে বিস্তৃতি। সৃষ্টি ও সৃজনশীলতার ধারক হয়ে যে তথ্যপ্রবাহ প্রসারিত হচ্ছে প্রতিদিন, তা মূলত মানুষের জীবনচর্চারই অংশ। বিশ্ব এখন এক সূত্রে গাঁথা হয়ে আছে ইন্টারনেটের কল্যাণে। নেটিজন মানব বিশ্বের একপ্রান্তে বসে, অপর প্রান্তের নানাবিধ বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছে। পৃথিবী যেন হয়ে উঠছে একটি বিশ্বগ্রাম। কোন ধরনের বাধা ছাড়াই অনলাইনে সব ধরনের তথ্যের উপস্থিতি, চাকরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের চিন্তাকে সহজে প্রাপ্তির সুযোগ করে দিয়েছে। জ্ঞানার্জন ও চিন্তার স্বাধীনতার যে বিস্তৃতি ঘটেছে, তা মানবসভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রকে করেছে সুদূরপ্রসারী। বিশ শতকের পৃথিবী বদলে গেছে পুরোপুরি একুশ শতকে অনলাইনের কল্যাণে অবাধ তথ্যপ্রবাহের বিস্তারে। কোন তথ্যই এ যুগে আর চেপে রাখা যায় না। কোন না কোনভাবে তা প্রকাশ হয়ে যায় নেটের সুবিধাকে ধারণ করে। বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হচ্ছে ক্রমশ, তাই অবাধ তথ্যপ্রবাহের মধ্যে নিজস্ব অবস্থানও তৈরি করছে। শুধু তথ্য নয়, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, দৈনন্দিন কেনাকাটাসহ নানাবিধ বিষয় নেটের কল্যাণে ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব কিছুকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। থেমে থাকার কোন অবস্থাই আর নেই। তাই দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ এখন অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুবর্ণ সময়ে অবস্থান করছে। দেশজুড়ে সংবাদমাধ্যম, ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম এবং অনলাইন পোর্টালের বিস্তৃতি ঘটেছে। বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক, যেখানেই যা সংঘটিত হচ্ছে, মুহূর্তের মধ্যেই তা পৌঁছে যাচ্ছে মানুষ থেকে মানুষে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে। বাংলাদেশের মানুষ কোন বিষয়ে আর অন্ধকারে থাকছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষকে আরও বেশি নিয়ে এসেছে কাছাকাছি, পারস্পরিক চিন্তা-চেতনার ঘটাচ্ছে বিনিময়। যা কল্যাণকর এবং মঙ্গলময়। কিন্তু মুদ্রার অপরপিঠে রয়েছে অবাধ তথ্যপ্রবাহের নেতিবাচক দিকও। অসত্য, বানোয়াট, গুজব, মিথ্যাচার, গণবিরোধী তথ্যেরও বিস্তার ঘটছে। অসত্য তথ্য প্রচার করে হানাহানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনাও ঘটছে। ভুল ও অসত্য তথ্যের বিরূপ প্রভাব সমাজে পড়ে যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। বাংলাদেশেও এসব ঘটছে। এমনিতেই দেশে সংবাদ বা গণমাধ্যমের ওপর রাষ্ট্রের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রকৃত পেশাদারি সাংবাদিক নন বরং তথ্য বিকৃতকারী, উস্কানিদাতা ও চক্রান্তকারীরাও থাকেন তৎপর। অবাধ তথ্যপ্রবাহের স্বাধীনতার সুযোগে অনেক চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী, সুযোগ সন্ধানীরা বিভ্রান্তির প্রসার ঘটায়। যার ফলে মানুষ ভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে পড়ে। অন্যায়ভাবে কেউ রাষ্ট্রের বা জনগণের ক্ষতি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোন নীতিমালা তৈরি হয়নি। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের অনলাইনের মাধ্যমের সুবিধা যেমন নিশ্চিত করা জরুরী, তেমনি কেউ অন্যায়ভাবে অন্য কারও ক্ষতি করতে গেলে সেখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিও জরুরী। অনলাইন সুবিধার নেতিবাচক ব্যবহার বিপদাপন্ন পরিবেশ তৈরি করতে পারে। অনলাইন পোর্টালগুলোতে মিথ্যাচার বেড়েছে। দেশ, সমাজ, রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে প্রোপাগা-া, মিথ্যাচার স্বাভাবিক তথ্যপ্রবাহকে বিঘিœত করছে। অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হলে মিথ্যাচারের ক্ষেত্রগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার বিধিবিধান জরুরী। স্বাধীন সাংবাদিকতার সুযোগ নিয়ে সীমা অতিক্রম করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নেতিবাচক ও মিথ্যাচারণার কাজে তথ্যপ্রবাহের ব্যবহার দ্রুত বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরী।
×