ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশনা শুনতে এসেছি’

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

‘নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশনা শুনতে এসেছি’

কায়কোবাদ খান, রাজশাহী থেকে ॥ সকালে এক পশলা ভারি বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার সারাদিনই কালো মেঘে ঢাকা ছিল রাজশাহীর আকাশ। কিন্তু বৃষ্টি আর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ঠেকাতে পারেনি জনস্রোত। পবা উপজেলার হরিয়ান সুগার মিল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে সকাল থেকেই জমায়েত হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা ব্যানার-ফেস্টুন হাতে ছোট বড় মিছিল নিয়ে সুগার মিল মাঠে জমায়েত হতে থাকেন। দুপুর ২টার দিকে কানায়-কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সুগার মিলের বিশাল মাঠ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে রাজশাহীতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিরাজ করছিল উৎসাহ-উদ্দীপনা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় পবার হরিয়ান সুগার মিল মাঠে আয়োজিত সমাবেশে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি। তার আগমন উপলক্ষে সমাবেশ মাঠে চারধারে শোভা পায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয়-নেতাদের ছবি সংবলিত ব্যানার-বিলবোর্ড। নগরীর কাটাখালি বাজার থেকে হরিয়ান পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশের গাছগুলোতেও লাগানো ছিল কয়েক হাজার ব্যানার। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রাজশাহীজুড়েই বিরাজ করছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আমেজ। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এক পলক দেখার জন্য বৃহস্পতিবার সকালেই সুগারমিল মাঠে উপস্থিত হন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার অশীতিপর বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মোঃ আশরাফ আলী। সমাবেশের জন্য নির্ধারিত স্থানের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার কথা শোনার জন্যই বৃষ্টি উপেক্ষা করে তার এখানে আসা। তিনি বলেন, এর আগেও নেত্রীকে অনেকবার দেখেছি। তবে নির্বাচনের আগে তিনি কী দিক-নির্দেশনা দেন এবার সেটা শুনতে এসেছি। রাজশাহীর বহরমপুর এলাকার ষাটোর্ধ বৃদ্ধা নাজমা বিবি বলেন, মানুষের ভিড়ে তিনি হয়তো ভেতরে ঢুকতে পারবেন না। বাইরে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনবেন। রাজশাহীর উন্নয়নে, গরিব মানুষের উন্নয়নে তিনি কী করেন সেটা শুনবেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকেরা আসতে থাকে সমাবেশস্থলে। তবে সকালের আধা ঘণ্টার ভারি বৃষ্টির কারণে সমাবেশ মাঠে পানি জমে কাদা হয়ে যায়। বৃষ্টি থেমে গেলেও সারাদিনই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরপরই প্রধান সড়কগুলো দিয়ে আসতে থাকে জনতা। ছোট-বড় মিছিল নিয়ে সমাবেশ মাঠে জমায়েত হতে থাকে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড থেকে আসা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী এবং সমর্থক। রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও হাজার হাজার নেতাকর্মী বাস, ট্রেন, ট্রাক, মোটরসাইকেল ও সাইকেলযোগে জমায়েত হতে থাকেন সমাবেশে। দুপুর ১২টার দিকে সমাবেশ মাঠ অর্ধেক ভরে যায়। দুপুরের পরপরই ভরে যায় মাঠ। বেলা ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে উপস্থিত হওয়ার পরেও আসতে থাকে জনস্রোত। সুগার মিল মাঠের আশপাশের সড়ক এবং মাঠগুলোও ভরে যায় জনতায়। এ সময় কাটাখালি-হরিয়ান পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তা সমাবেশে আসা মানুষে কানায়-কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জনস্রোতের কারণে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের বানেশ্বর থেকে তালাইমারি পর্যন্ত ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া সমাবেশের কয়েক শ’ গজ দূরের রেললাইন জনতায় ঠাসা থাকায় রাজশাহীগামী এবং রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন চলাচলেও বেগ পেতে হয়। এদিকে যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সমাবেশস্থলে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা। নেতাকর্মীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কাটাখালি থেকে হরিয়ান পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। বিপুলসংখ্যক পুলিশ, গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং আনসার সদস্যসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি করে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের সমাবেশস্থলে প্রবেশ করান। এ সময় জনস্রোতের কারণে হিমশিম খেতে হয় তাদেরও।
×