ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জানালেন সাকিব নিজেই

জাতীয় দলে দীর্ঘ সময় খেলতেই বিশ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জাতীয় দলে দীর্ঘ সময় খেলতেই বিশ্রাম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ছয় মাসের বিশ্রাম চেয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে আবেদন করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার আবেদন মঞ্জুরও করেছে বিসিবি। তবে তা শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের জন্যই। এ দুই টেস্টেই বিশ্রাম পাচ্ছেন সাকিব। ছয় মাসের জন্য নয়। সাকিবের এ বিশ্রাম নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সাকিব নিজেই তাই এ বিশ্রাম নেয়ার কারণ জানিয়েছেন। জাতীয় দলে দীর্ঘ সময় খেলতেই যে এ বিশ্রাম, তা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে ডিওএইচএসে নিজ বাসায় সাকিব সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন। কেন এই বিশ্রামের সিদ্ধান্ত, সেই ব্যাখ্যাও দিলেন। বললেন, ‘সব থেকে বড় কারণ হচ্ছে, আমি মনে করি আমার আরও অনেকদিন খেলা বাকি আছে। এবং আমি যদি ওটা খেলতে চাই এবং ভাল ভাবে খেলতে চাই, তাহলে এই বিশ্রামটা আমার জরুরী। আমি চাইলেই খেলতে পারি। কথা হচ্ছে, আপনারা কি চান যে আমি আরও ৫-৬ বছর খেলি, নাকি ১-২ বছর? নির্ভর করছে সেটার ওপর। আমি যেটা অনুভব করি, এভাবে খেলতে থাকলে ১-২ বছরের বেশি খেলতে পারব না। ওভাবে খেলার থেকে না খেলা আমার কাছে ভাল। যতদিন খেলব, ততদিন যেন ভালভাবে খেলতে পারি। সেটিই লক্ষ্য আমার। সেই কারণেই এই বিরতিটা পেলে আমি আমার তরতাজা হয়ে, মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে যতটা না, তার চেয়ে বেশি মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ফিরলে হয়ত পরের ৫ বছর আমার টেনশন ছাড়া খেলা সম্ভব হবে। যেটা আমি মনে করি বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি-দুটি ম্যাচ বা একটি-দুটি মাস না খেলা থেকে।’ সঙ্গে সাকিব যোগ করেন, ‘দুটি টেস্টের পরও যদি যাই, প্রায় এক মাসের একটি বিরতি হয়ে গেল কিন্তু। এ রকম বিরতি আমি গত ৩-৪ বছরে পাইনি। আমার জন্য এটি অনেক বড় বিরতি আমি মনে করি। আমি বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা আমার ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছেন। যেভাবে আপনাদের মাত্র বললাম, আমি তাদের সেটি বুঝিয়ে বলার পর, তারা বলেছে যে ঠিক আছে, আইডিয়া ভাল আছে। কারণ দিন শেষে আমার শরীর আমি যে কারও চেয়ে ভাল বুঝতে পারব। আমার এটা ম্যানেজ করার দরকার আছে। এই কারণেই এই সিদ্ধান্ত। খুব যে কঠিন ছিল বোর্ডকে বোঝানো, তা নয়। সুবিধা যেটা ছিল যে, আমি যখন কথা বলেছি, যাদের সঙ্গে বলেছি, আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা বলার পর মনে হয়নি যে এটি অনৈতিক কিছু। সে কারণেই তারা হয়ত এটি গ্রহণ করেছে।’ আবেদনের বিষয়ে সাকিব জানান, ‘৬ মাসের জন্যই আবেদন করেছি। এখন এই সিরিজের পর দুটি টেস্ট ম্যাচ আছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এখন পর্যন্ত এবারের দুটি টেস্ট অনুমতি দিয়েছে। এরপর যখন খেলা শুরু হয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা, বিপিএল, তার পর ওই সময়টা চিন্তা করব যে ওই দুটি টেস্ট খেলব কী খেলব না। সেভাবে কথা বলব তখন। তার পর যদি তারা মনে করে যে আমার খেলার দরকার বা আমার নিজের যদি মনে হয় যে মানসিক ভাবে এমন অবস্থায় আছি যে পুরোটা দিতে পারব, তখন অবশ্যই খেলব।’ টি২০ বেশি প্রাধান্য দেয়া নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে সাকিব জানান, ‘(এসবে) প্রতিক্রিয়াই দেখাই না। কারণ, আমার শরীর আমি বুঝতে পারব যে কতটা ধকল যাবে। এই যে ওয়ানডে-টি২০ কেন বিশ্রাম নিলাম না, বাইরের টি২০ কেন নিলাম না, এই প্রশ্নগুলো আসলে একটু অবাকই লাগে। কারণ, আমি যখন বাইরের টি২০ খেলি, তখন না কোন চাপ আছে, না কোন ভাবনা আছে। আমার কছে মনে হয় হলিডে ধরনের। সঙ্গে একটা অভিজ্ঞতাও হয়। অর্থনৈতিক দিক অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সেটিও থাকে। টেস্ট ম্যাচে আমার যেটা হয় যে যেহেতু আমি ব্যাটিং-বোলিং দুটিই করি, চারটা ইনিংসেই আমার অবদান রাখার দরকার হয়। দলও আশা করে। যদি আমি অর্ধেক অবদান রাখতে পারলাম, অর্ধেক পারলাম না, তাহলে দল যেটা আশা করেছে তা তো পুরো দিতে পারলাম না। পুরোটা না দিতে পারা আমার মনে হয় না ভাল দিক। আমি যখন চারটা ইনিংসেই ভাল করতে পারব এবং আমার মনে হবে সেই সামর্থ্য আমার আছে বা সেই ইচ্ছাটাও থাকবে, আমার মনে হয়, তখনই খেলার সেরা সময়। আমিত চাইলেই খেলতে পারি। ম্যাচ ফি পাব, পারিশ্রমিক পাব। সবই পাব। কিন্তু ওভাবে খেলাটা আমার মনে হয় না খুব একটা গুরুত্ব বহন করে আমার কাছে। ঠিক আছে, এটা আমার চাকরি। কিন্তু দিন শেষে এখানে আমার আগ্রহ, আমার প্যাশন, ভালবাসা থেকেই খেলাটা শুরু করা। ওইটা যদি না থাকে, ওই খেলাটার মানে আছে বলে মনে করি না।’ আগে থেকেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানালেন সাকিব, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই মনে হচ্ছে। এটা আমি আগে আলোচনাও করেছি। এমনকি এই টেস্ট সিরিজের আগে কথা বলে রেখেছি। আমার পরিবারের সঙ্গে পরিবার বলতে স্ত্রীর সঙ্গে এবং আমার কাছের যারা আছে, সবাই জানত যে আমি এ রকম চিন্তা করছি। আমি মনে করি, এটা আমার জন্য উপকারী হবে। যেহেতু অনেক খেলা হয়, আমার ফিটনেসটাও (ট্রেনিং) ওভাবে করা হয় না বা করা হলেও মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকার যে ব্যাপারটি আছে, সেটি হয় না। এমন তো নয় যে দু-একদিন খেলেই ছেড়ে দিচ্ছি। ১০-১১ বছর হয়ে গেল, একটি বিরতি তো নিতেই পারি। এটা আমার প্রাপ্য।’ সাকিব না থাকলেও কোন প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করছেন তিনি, ‘আমার থাকা না থাকায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ দুনিয়াতে কোন জিনিসই কারও জন্য অপেক্ষা করে না। আমি আশা করি এবং মন থেকে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ অনেক ভালো করবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। ধারাটা অব্যাহত থাকবে। যে যাবে, সে ভাল করবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সবার জন্য চ্যালেঞ্জিং। সবার ভেতর বাড়তি চেষ্টাও থাকবে ভাল করার।’ অন্যদের বিশ্রাম নেয়ার ব্যাপারেও সাকিব বললেন, ‘যদি কখনও কারও মনে হয় যে আমার আসলে খেলা বেশি হয়ে যাচ্ছে বা বেশি খেলেছি, একটি বিরতি দরকার, আমি মনে করি তাদের অবশ্যই মন থেকে বলা উচিত। এটা করে তাদের ক্যারিয়ার আরও ভালই হতে পারে। আমি ধরেন, এখন ইচ্ছে হচ্ছে না, তবু জোর করে খেললাম, আপনারাই বলবেন আমাকে বাদ দেয়া হোক। স্বাভাবিক না? কি দরকার আছে ওটার? যতদিন খেলব, চেষ্টা থাকবে ভাল ভাবে খেলার।’
×