ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকে নগদ অর্থের সঙ্কট নেই

প্রকাশিত: ২৩:০২, ৩১ আগস্ট ২০১৭

ব্যাংকে নগদ অর্থের সঙ্কট নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার॥ পবিত্র ঈদুল আজহার আগে বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কার্যদিবস। এদিন ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকা তোলার খুব একটা চাপ ছিল না। আগেরদিন বুধবার ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেলেও, বৃহস্পতিবার তা ছিল না। ফলে এবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে আন্তব্যাংক মুদ্রা বাজারেও সুদের হার বাড়েনি। প্রতিবছরই ঈদের আগে ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের চাহিদা বেড়ে যায়। আর বাড়তি চাহিদার যোগান দিতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার করে। কিন্তু এবার ঈদের আগে ব্যাংকগুলোতে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হলেও নগদ অর্থের টান পড়েনি।যার কারণে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি মার্কেট) সুদের হারও বাড়েনি। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর টাকার সংকট দেখা দিলে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার অর্থাৎ কলমানি মার্কেট থেকে তারা স্বল্পসময়ের জন্য ধার করে থাকে। অর্থের চাহিদা বেশি থাকলে ধার করতে অধিক সুদ গুনতে হয়। আর চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকলে সুদ কম গুনতে হয়। সাধারণত ঈদের আগে ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন বেড়ে যায়। এসময় অধিকাংশ ব্যাংকের নগদ অর্থের সংকটের কারণে কলমানি মার্কেটে সুদের হারও বাড়ে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ তারল্য উদ্বৃত্ত থাকায় গত কয়েক বছর ধরে স্বাভাবিক রয়েছে কলমানি মার্কেট। মুলত ঈদের আগে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বুধবার। ফলে ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোতে ভিড় কিছুটা থাকলেও উপচেপড়া ভীড় ছিল না। দুপুরের পরতো অনেক ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকই দেখা যায়নি। প্রতি বারের মতো, এবারও কোরবানির পশুসহ বাড়তি কেনাকাটায় নগট টাকা তোলার চাপ বাড়লেও আন্তঃব্যাংক কলমানির সুদের হার স্বাভাবিক ছিল। বুধবার কলমানিতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়েছে। তবে সুদের হার না বাড়লেও লেনদেন বেড়েছে এই বাজারে। জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই এই বাজারের সুদহার খুব একটা বাড়তে দেখা যায়নি। যার মূল কারণ বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে এক লাখ কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘ বিনিয়োগ স্থবিরতায় অধিকাংশ ব্যাংকের কাছেই উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এ কারণে ঈদের আগে নগদ অর্থের চাহিদা বাড়লেও কলমানিতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ আগস্ট (বুধবার) আন্তঃব্যাংক কলমানি বাজারে ব্যাংক-টু-ব্যাংক লেনদেন হয়েছে ৪ শতাংশ সুদে। আর ব্যাংক-টু-ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেনদেন হয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে। চলতি মাসের আগের কার্যদিবসগুলোতেও এই বাজারে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ সুদেই লেনদেন হয়। বুধবার সবচেয়ে বেশি ধার দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটি দুই হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংককে ধার দিয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ৮৮১ কোটি এবং স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ২৪৯ কোটি টাকা ধার দিয়েছে অন্য ব্যাংকগুলোকে। অন্যদিকে দ্যা সিটি ব্যাংক ৬৯২ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ৪৩০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ৫৮৪ কোটি, মার্কেন্টাইল ৬০৬ কোটি এবং পূবালী ব্যাংক ৬১১ কোটি টাকা করে ধার নিয়েছে। এছাড়া, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সোনালী ব্যাংক ৪৮৬ কোটি টাকা এবং জনতা ব্যাংক ১৩৩ কোটি টাকা ধার দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তবে বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। ফলে ঈদের আগে নগদ অর্থের চাহিদা বাড়লেও কোনো সংকট সৃষ্টি হয়নি। তাই কলমানি স্থিতিশীল রয়েছে।
×