ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দূষণের যাঁতাকলে

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২৯ আগস্ট ২০১৭

দূষণের যাঁতাকলে

দূষণের কবল থেকে বুঝি সহজেই আর মিলবে না উদ্ধার। দূষণ গ্রাস করছে যেন সবকিছুকেই। পরিত্রাণের উপায় উদ্ভাবনে এগিয়ে আসছে না কেউ। সবই যেন হয়ে আছে গা সওয়া। সচেতনতার মাত্রা শূন্য বলে অনেকের ধারণাতেই আসে না দূষণ কতটা ক্ষতিকর- মানবদেহ শুধু নয়, পারিপার্শ্বিক সবকিছুর জন্যই। পরিবেশ নিয়ে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর, অধিদফতর রয়েছে বেশ, কিন্তু জনসচেতনতা তৈরি বা দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাদের কাজকর্ম হয় না দৃশ্যমান। তবু তারা আছেন পরিবেশ নিয়ে, পরিবেশ রক্ষার মহান ব্রত তাদের অন্তরে-অন্দরেই স্থিত। বাতাসে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। হ্রাস পাবার বা কমতি হওয়ার কোন লক্ষণই মিলছে না। দূষণে দূষিত হয়ে দুঃসহ যাতনায় পতিত হওয়ার ক্ষেত্রে কেউ তৈরি করে না প্রতিবন্ধকতা। অবহেলা আর ঔদাসীন্যে আক্রান্ত যেন উদ্ধারকারীরা। এই যে দেশের ছোট ছোট কারখানার বেশিরভাগ দূষণ ছড়ায়, তা কারও ধারণাতেই আসে না। কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিকরাও পরিবেশ দূষণ নিয়ে অসচেতন। অনেক কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে তাই নেই কোন নিয়ন্ত্রণ। কারিগরি ও আর্থিক সামর্থ্য নেই এসব কারখানা বরং এগুলো দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোলা জায়গায় কিংবা নর্দমায় এসব কারখানার বর্জ্য ফেলা হয়। জুতা কারখানার বর্জ্য বেশিরভাগ অপচনশীল প্লাস্টিক ও কৃত্রিম রেক্সিনের চামড়া। অটো ওয়ার্কশপগুলোর কর্মস্থলেই রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। পরিচ্ছন্নতার লেশমাত্র মেলে না এসব কারখানায়। সবুজায়ন তো দূরঅস্ত। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, দেশে যে আটাত্তর লাখ ব্যবসা ইউনিট রয়েছে, তার ঊননব্বই ভাগ ক্ষুদ্র পর্যায়ের। মোট শ্রমশক্তির ছাপ্পান্ন ভাগ অর্থাৎ দুই কোটি পঁয়তাল্লিশ লাখ এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত রয়েছে। অবশ্য জিডিপির প্রায় পঁচিশ ভাগ আসছে এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে। আর দেশে পরিবেশের দূষণে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তার পরিমাণ বার্ষিক জিডিপির প্রায় চার ভাগ। দেশে অসুখের প্রায় বাইশ ভাগ পরিবেশ দূষণের কারণে হচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল এই কারখানাগুলো। ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো বিভিন্ন খাতে বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে। এর মধ্যে কৃষিজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ, শস্য উৎপাদন, পোল্ট্রি, ফিশারি, ডেইরি, অপ্রাতিষ্ঠানিক হস্তচালিত তাঁত, প্লাস্টিক পণ্য, ফুটওয়্যার, কম্পিউটার সফটওয়্যার, তথ্যপ্রযুক্তি, সিল্ক, মুদিদোকান অন্যতম। ক্ষুদ্র উদ্যোগের প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়ার বিষয়ে ১৯৯৭ সালের পরিবেশ আইনে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিবিধান অনুযায়ী, তিন হাজার এক শ’ পঞ্চাশ ডলার বা আড়াই লাখ টাকার নিচে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে কোন পরিবেশগত সনদ দেখাতে হয় না। দুর্ভাগ্য যে, এই কারখানাগুলো যে দূষণ ছড়ায়, তা বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে জানতে হয়েছে অথচ দেশের পরিবেশসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি উপেক্ষাই করে গেছে। এবার এগিয়ে এসেছে পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন। ক্ষুদ্র শিল্পের পরিবেশ ঝুঁকি কমিয়ে আনতে এগারো কোটি সত্তর লাখ ডলারের একটি প্রকল্প নিয়েছে। এর আওতায় পরিবেশের ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নিতে সম্মত ক্ষুদ্র আকারের প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়া হবে। টেকসই উদ্যোগ শীর্ষক এ প্রকল্পে দশ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। ক্ষুদ্র শিল্পের পরিবেশগত ঝুঁকি কমাতে বিলম্বে হলেও অবশেষে যে একটি প্রকল্প হয়েছে, তা উল্লেখযোগ্য বটেই। কিন্তু যথাযথভাবে ঋণ ব্যবহৃত না হলে দুর্ভোগ বাড়বে বৈ কমবে না। আগামী জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। পদক্ষেপটি যুগান্তকারী এবং দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্ববহ। বাংলাদেশ দূষণমুক্ত করতে হলে এ ক্ষেত্রে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্ছনীয়। পরিবেশবান্ধব, টেকসই গুচ্ছ ব্যবসাভিত্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করা হলে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলায় সহায়ক হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা নারীদের আর্থিক সামর্থ্য বাড়ানো জরুরী। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নজর দেবেন কি?
×