ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অধ্যাপক হাসান আব্দুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ মাতৃ পদতলে সন্তানের জান্নাত

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৫ আগস্ট ২০১৭

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ মাতৃ পদতলে সন্তানের জান্নাত

মাতৃগর্ভরূপী জাহাজে করে মানব সন্তানের আলো হাওয়ার এই পৃথিবীর বন্দরে অবতরণ ঘটে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘আল জান্নাতু তাহ্তা আক্দামিল উম্মাহাত মায়ের পায়ের তলায় জান্নাত। বর্তমান লেখকের মা ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট ইন্তেকাল করেন। ২৩ আগস্ট এলে তার স্মৃতি বার বার মনে পড়ে। তিনি ছিলেন প্রায় ৯ লাখ মুরিদানের পীর আম্মা এবং বিশাল জমিদারির মালিকা। জানা যায় তাঁর এক পূর্ব পুরুষ এদেশে এসেছিলেন ইসলাম প্রচার করতে। তাঁকে বাংলার রাবেয়া বস্রীও বলা হতো, তার সমাজ সেবার কথা এখনও মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। মানব জাতির আদি মাতা হযরত হাওয়া আলায়হাস সালামকে নিয়ে আদি পিতা হযরত আদম ‘আলায়হিস্ সালাম জান্নাতে ছিলেন। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু হযরত আদম (আ)-কে স্ত্রীসহ জান্নাতে বসবাস করার আদেশ দিয়ে ইরশাদ করেন : হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেখানে ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর কিন্তু এই বৃক্ষটির নিকটবর্তী হয়ো না। হলে তোমরা অত্যাচারীর অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা বাকারা : আয়াত ৩৫) সুখের মধ্যে তারাও জান্নাতে ছিলেন। চির শত্রু ইবলিসের প্ররোচনায় তাঁরা ভুলক্রমে সেই নিষিদ্ধ বৃক্ষটির নিকটবর্তী হয়ে সেই বৃক্ষের নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেললেন তাঁদের জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হলো। তাঁরা পৃথিবীতে অবতরণ করলেন। হযরত আদম (আ) অবতরণ করলেন শ্রীলঙ্কার একটি পর্বত চূড়ায় এবং মা হাওয়া অবতরণ করলেন জেদ্দায়। প্রায় সাড়ে তিন শ’ বছর তাঁরা তাঁদের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে কান্নাকাটি করলেন। আল্লাহ্ তাঁদের তওবা কবুল করলেন, তাঁরা আরাফাত ময়দানে এসে মিলিত হলেন। তারপর আরাফাত থেকে ৯ মাইল পশ্চিমে মক্কায় এসে সংসার বাঁধলেন। মা হাওয়ার গর্ভ থেকে শতাধিক সন্তান সন্তুতি হলো। তাঁর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হলো একটি মেয়েকে বিয়ে করা নিয়ে। মা হাওয়া সন্তানদের এই বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু কাবিল হাবিলকে হত্যা করল। মা হাওয়া পুত্র শোক সহ্য করলেন। মা হাওয়ার কবর এখনও জেদ্দায় সংরক্ষিত আছে। বর্তমান লেখক ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে স্ত্রী মায়া ও একমাত্র পুত্র মিঠুকে সঙ্গে নিয়ে মা হাওয়ার কবর জিয়ারত করেছেন। সেই কবরের গেটে লেখা রয়েছে মাক্বারা উন্মুনা হাওয়াÑ আমাদের মাতা হাওয়ার কবর। মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আলায়হিস সালামের মাতার নাম উশা। জালিম রাজা নমরুদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এক পর্বত গুহায় আত্মগোপন করে তিনি যে সন্তান প্রসব করেন তাঁরই নাম ইবরাহীম। হযরত ইবরাহীম আলায়হিস সালামের বংশ ধারায় অধিকাংশ নবীর আগমন ঘটে। তিনি তওহীদের সুদৃঢ় বুনিয়াদ স্থাপন করেন। তাঁর থেকেই কোরবানি প্রবর্তিত হয়। আল্লাহ্র নির্দেশে তিনি কা’বা শরীফে হজ করার ঘোষণা দেন। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলায়হিস সালামের মাতার নাম হযরত হাজেরা আলায়হাস্ সালাম। তিনি নবজাতক পুত্র ইসমাঈলকে নিয়ে মক্কার বিরান পার্বত্য ভূমিতে নির্বাসিত জীবনযাপন করেন। মক্কাতে জনবসতি গড়ে তোলায় তাঁর অবদান রয়েছে। সাফা-মারওয়া সায়ী করা তাঁর স্মৃতি বহন করছে। যমযম কূপের সঙ্গেও তাঁর স্মৃতি রয়েছে। জানা যায় তাঁর এবং তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ)-এর কবর কাবা শরীফের অর্ধ বৃত্তাকার দেয়াল হাতীমে রয়েছে। মিসরের আল্লাহদ্রোহী জালিম রাজা ফেরাউন পুত্র সন্তান জন্মদানে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা সত্ত্বেও হযরত মূসা (আ)-কে সংগোপনে প্রসব করেন তাঁর মাতা। তিনি সন্তানকে একটি বাক্সে নীল দরিয়ায় ভাসিয়ে দেন। সেই বাক্স ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া (আ) নদী থেকে উদ্ধার করে নিজের পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন এবং মূসা (আ)-এর মাতাকেই দুগ্ধমাতা হিসেবে নিযুক্ত করেন। এটা ছিল আল্লাহ্র কুদরতের নিদর্শন। আল্লাহ্র কুদরতের এক অপূর্ব নিদর্শন হযরত ঈসা আলায়হিস সালাম। তাঁর মাতা হযরত মরিয়ম আলায়হাস সালাম কুমারী অবস্থায় গর্ভবতী হন। এর জন্য ইহুদীরা নানা কুৎসা রটায়। তিনি সে সব খ- করেন। আল্লাহ্র তরফ থেকে তাঁকে মৌনতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়। প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম মা আমিনার গর্ভে থাকাকালে পিতা আবদুল্লাহকে হারান। ছয় বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। মায়ের স্মৃতি তিনি ধরে রেখেছেন। একবার এক যুবক তাঁর কাছে এসে জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তিনি সেই যুবকের কাছে জানতে চাইলেন : তোমার মা আছেন? বললেন : আমার মা আছেন। তিনি বললেন : বাড়িতে গিয়ে তোমার মাকে খিদমত করবে। তোমার মায়ের পায়ের তলাতেই তোমার জান্নাত। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা)
×