ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফতুল্লায় গোপন বৈঠক, আগ্নেয়াস্ত্র গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার

জেএমবির সারোয়ার তামিম গ্রুপের তিন জঙ্গী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩০ জুলাই ২০১৭

জেএমবির সারোয়ার তামিম গ্রুপের তিন জঙ্গী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ ফতুল্লার বক্তাবলীর লালমিয়ার চর এলাকায় গোপন বৈঠকের সময় অভিযান চালিয়ে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সক্রিয় তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১’র একটি দল। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি বিদেশী রিভলবার, ৫ রাউন্ড গুলি, ২টি চাকু, বোমা তৈরির বিস্ফোরক, জিহাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো কুমিল্লার মুরাদনগরের ওয়ালিউল্ল্যাহ চিশ্তি ওরফে জনি ওরফে মোহাম্মদ ওরফে আবু ওমর (২৭), বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাটের আল আমিন শেখ ওরফে রাজিব ওরফে রাজিব ইসলাম ওরফে ইসলাম শেখ ওরফে শেখ (২৫) ও কুমিল্লার দেবিদ্বারের কামরুল হাসান ওরফে হৃদয় (৩৫)। শনিবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর র‌্যাব-১১ ব্যাটেলিয়ন সদর দফতরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কামরুল হাসান এ তথ্য জানান। প্রেস ব্রিফিংয়ে সিও আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ তথা জেএমবির (সারোয়ার-তামিম গ্রুপের) সক্রিয় সদস্য এবং তারা নাশকতার পরিকল্পনার জন্য তাদের এক শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে এই গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। পরে র‌্যাবের অভিযানের খবরে তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে কমপক্ষে ২৫ সদস্য পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ওয়ালিউল্ল্যাহ চিশতি ও আল আমিন শেখের নামে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ কয়েকটি থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত ওয়ালিউল্ল্যাহ চিশ্তি ২০১২ সালে মাওলানা জসিম উদ্দিন রাহমানির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় এবং পরে ২০১৪ সালে মাওলানা আব্দুল হাকিমের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। মাওলানা আব্দুল হাকিম গ্রেফতার হওয়ার পর সে নন্দীপাড়র কোরআন সুন্নাহ একাডেমি মসজিদের খতিব শায়েখ আরিফ হোসেনকে ধর্মীয় গুরু মেনে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপে যোগদান করে এবং বাড্ডা এলাকার দাওয়াতি কাজের দায়িত্ব পায়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও সে কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় সংগঠনের জন্য কাজ করত। সে ২০১৬ সালে জেএমবির দাওয়াতি শাখার বর্তমান আমির শায়েখ আরিফ হোসেনের সঙ্গে জামালপুর, রাজশাহী, বগুড়া, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এছাড়াও সে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চরে গমন করে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য জায়গা নির্ধারণের কাজ করেছিল। সে ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত জেএমবির (সারোয়ার-তামিম গ্রুপের) দাওয়াতি শাখার শূরা সদস্য, সংগঠনের অর্থদাতা ও ঢাকা মহানগরের পশ্চিম অঞ্চলের দাওয়াতি শাখার আমির ইমরানের কাছ থেকে সংগঠনের জন্য তহবিল সংগ্রহ করত। র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত আল-আমিন শেখ তৎকালীন জেএমবির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম নেতা মামুনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মামুন এবং সাকিব দুজনই তাকে জেএমবির দাওয়াত দেয় এবং সে দাওয়াত গ্রহণ করে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করে। তাদের কাছ থেকে সে জেএমবির বিভিন্ন ধরনের জঙ্গীবাদী নোট, সিট ও বই সংগ্রহ করত। মামুনের কাছ থেকে সে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেয়। পরে সে সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ করত এবং তাদেরকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিত। মামুনের বাসায় সংগঠনের দাওয়াতি এবং সামরিক প্রশিক্ষণ পরিচালিত হত। এই প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য ৭ জনের ১টি প্রশিক্ষক দল ছিল। মামুনের নিজস্ব অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণের কাজ হত। এইভাবে প্রায় ২ বছর তাদের দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণের কাজ চলতে থাকে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মামুন নিহত হওয়ার পর তারা এলাকা ত্যাগ করে ছদ¥বেশ ধারণ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করতে থাকে। পরবর্তীতে চলতি বছরের শুরুর দিকে পুনরায় তারেক ওরফে সাকিবের নেতৃত্বে সংগঠনকে পুনর্গঠিত করতে থাকে। তারেক ওরফে সাকিব সামরিক শাখার দায়িত্ব নেয় এবং আল-আমিনকে সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত কামরুল হাসান মোহাম্মদপুরের বছিলায় জসিম উদ্দিন রহমানির মসজিদে যাতায়াত শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের দিকে জনৈক ফিরোজের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। প্রাথমিকভাবে ফিরোজ তাকে ধর্মীয় বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে এবং পরবর্তীতে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করে। সংগঠনের প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। সে ফিরোজের কাছে সামরিক প্রশিক্ষণের কলাকৌশল শিখেছে। র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
×