ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

বিলেতে নীলনকশার নীল আভাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৯ জুলাই ২০১৭

বিলেতে নীলনকশার নীল আভাস

বিদেশে বাংলাদেশের রাজনীতির দরকার আছে কি নেই সেটা এখন আর তর্কের বিষয় না। কারণ, বাংলাদেশীরা রাজনীতি করবেন এটাই আমাদের নিয়তি। খালি আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকে দোষারোপ করলে চলবে না। জামায়াতের যে নীরব সমর্থকের দল তারা ও বিদেশে আছেন। গোপনে প্রকাশ্যে তারা ও সচল। এই বাস্তবতায় বাকি দলগুলো কি চুপ থাকবে? তাছাড়া আমাদের সমাজ বড় চঞ্চল। আমাদের জনগণের মতি বোঝাও দায়। তারা পোশাকে আধুনিক মননে গোঁড়া। কখনও মননে উদার আচরণে সীমাবদ্ধ। তারপরও আমরা কুর্নিশ জানাই তাদের যারা এই দেশ ও মানুষকে সতত এগিয়ে নিচ্ছেন। সে কারণে এখনও রাজনীতির বিকল্প নেই। বিদেশে দেশের রাজনীতি থাকলেও দলের দরকার আছে কি নেই সেটা আমার মতো মানুষের কাছে বিস্ময়ের। তাতে কি আর কিছু বন্ধ থাকে? কে না জানে বিএনপির মূল নেতা আসলে এখন লন্ডনে। আওয়ামী লীগের আগামী দিনের কা-ারী নামে পরিচিত জয়ও থাকেন দেশের বাইরে। পার্থক্যটা এই তারেক রহমান যে কোন সময় সুযোগ পেলেই আবার এসে তার বর্তমান অবস্থানের জন্য যারা দায়ী তাদের ওপর প্রতিশোধ নেবেন। আজ যখন এই লেখা লিখছি খবরে দেখলাম প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ সাহেব গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে। জানি না এই সূত্র কতটা সত্য। তবে, অভিযোগের ভিত্তি আছে। আমরা চট্টগ্রামের মানুষ আমাদের যৌবনের শুরুতে বিভিন্ন দোকানে দেখতাম ছোট ছোট কালো কালো টেলিফোন সেট কাচের আড়ালে বসে মুচকি হাসত। অত ছোট ফোন হতে পারে সেটা আমাদের ধারণায় ও ছিল না। মোবাইল কালচারের প্রস্তুতি পর্বে সেই সেটগুলো এনেছিল এই মোর্শেদ সাহেব। শুনতাম ওই একেকটি সেটের দাম অর্ধ লাখ টাকা বা তারও বেশি। জাপান থেকে এনে মোবাইল সেটের এই ব্যবসায় মনজুর মোর্শেদ কত কামিয়েছিলেন সে কথা তোলা অবান্তর। তবে এভাবেই ফুলে ফেঁপে ওঠা ব্যবসা নামের টাকা কামানোর কারণে তিনি হয়ে উঠলেন শিল্পপতি। সেই সুবাদের বিএনপিতে সে কারণে কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই হয়ে গেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ এতদিন পর তিনি রহস্যের জট খুলে বলছেন, এই পদ পাওয়ার জন্য তারেক জিয়াকে প্রচুর টাকা দিতে হয়েছিল। যার পোশাকী নাম চাঁদা। এও বলেছেন, তারেক জিয়ার সঙ্গে এই ডিল তার জীবনের কাল। এখনও নাকি লন্ডন থেকে ফোন আসছে চাঁদা দেয়ার জন্য। তার ভাষায়, এখন চায় পাউন্ড। এই অভিযোগ অসত্য মনে করার রাজনীতি আমাদের দেশে নেই। তাছাড়া আমরা যারা বিদেশে থাকি সব সময় একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। এত পরিশ্রম এত কষ্টের পরও আমরা টাকা জমাতে পারি না। যা রোজগার তাই খরচ। বিদেশে লাখ লাখ বাংলাদেশী একাধিক চাকরি করেন। তাদের সকাল থেকে রাত অবদি কাজ করে বাড়ি-গাড়ি এসব বজায় রাখতে হয়। তাহলে কোন মন্ত্রবলে কোন জাদুর কাঠিতে তারেক জিয়া বা তার মতো কেউ কেউ দিনের পর দিন লন্ডনের মতো ব্যয়বহুল শহরে বিলাসী জীবনযাপন করে চলেছেন? যদি বিলাসী নাও হয় তার জীবনে যে কোন অভাব নেই সেটা তো গাড়ি পোশাক আর আচার আচরণ দেখলেই বোঝা যায়। উৎস কি কেউ জানেন? মন্জুর মোর্শেদের মত যারা মুখ খুলেছেন তারাই এর জবাব দিতে পারবেন। বলছিলাম বিদেশে দেশের রাজনীতি নিয়ে। এই যে ষড়যন্ত্রের কথা আসে মিডিয়ায় সেটা কি আসলেই অসত্য? টাকা বা পাউন্ডের কি গুণ সেটাতো আমরা আগেও দেখেছি। যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হচ্ছিল মার্কিন তালেবরেরা ফোন লাগিয়ে বানচাল করতে চেয়েছিল কোন সুখে? তারা জামায়াতী নেতাদের মুরিদ? না তারা এদের চেনেন? ইংরেজীতে একটা কথা আছে, মানি টকস। টাকা কথা বলে। সে কথাই শুনেছি জন কেরির মুখে। এখন আমাদের সামনে আরেক বিপদ সঙ্কেত। মোর্শেদ সাহেবের কাছে বা তার মতো বিগসট দের কাছে টাকা চাওয়ার কারণ হয়তো অনেক। খবরে দেখলাম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আইএস প্রধানের নাকি বৈঠকও হয়েছে। ছবিও দেখলাম। কতটা কি জানি না তবে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর অবিশ্বাসের জায়গা কোথায়? ছলে বলে কৌশলে তারা শেখ হাসিনাকে সরাতে পারলেই হলো। সবচেয়ে বড় বিষয় তাদের গদি ফিরে পাওয়া। আওয়ামী লীগারদের ভুল বা নানা অপকর্মে মানুষের মেজাজ বিগড়ে থাকলেও বিএনপি তার কোন সুযোগ নিতে পারেনি। তারা চিরকাল ঘুরপথ আর নোংরা রাজনীতি ও ষড়যন্ত্রে গদিতে এসেছে। এবারও তারা তাই করবে। সঙ্গে আছে প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব। যাদের জীবন জীবনবোধ বা আচার কোথাও শীলতা বা সৌজন্য নেই তারা বেনজীর ভুট্টোর মতো শেখ হাসিনাকে সরাতে চাইলে অবাক হওয়ার কি আছে? এ জন্য তাদের সঙ্গে যে কোন কিছু করতে রাজি জামায়াতও এক পায়ে দাঁড়িয়ে। শেখ হাসিনাকে সরালে বা সরাতে পারলে তাদের পথের কাঁটা দূর হবে বটে, কিন্তু জাতির অমানিশা আর অন্ধকার হবে ঘনীভূত। এমনিতে নানা সমস্যা তার ওপর এরা বিলেতে বসে তাকে ঘায়েল করার নীলনকশা আঁটছে। এ খবর সরকারও তাদের সংশ্লিষ্টরা জানেন কি-না? আমাদের মতো আমজনতা জানলে তারাও জানার কথা। ইতোপূর্বে ঘটে যাওয়া আকাশযানের ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দেয় হুঁশিয়ার হতে হবে। তাই বিদেশে লীগের রাজনীতি ও দলের দরকার ফুরোয়নি। যারা দরকার নেই বলে হেদায়েত করেন তাদের মনে রাখা প্রয়োজন বিএনপি যতদিন বিদেশে ষড়যন্ত্র করবে ততদিন এর প্রয়োজন ফুরাবে না। সরকার কি সাবধান আছ? অবগত আছে?
×