ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু

মুক্তামণির রোগটি বহুমাত্রিক চর্মরোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৩ জুলাই ২০১৭

মুক্তামণির রোগটি বহুমাত্রিক চর্মরোগ

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার ১২ বছরের শিশু মুক্তামণির রোগটি বহুমাত্রিক চর্মরোগ বলে জানা গেছে। মুক্তামণির চিকিৎসায় গঠিত আট সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড বুধবার দুপুরে একত্রিত হয়ে মুক্তামণির পরবর্তী চিকিৎসা নির্ধারণ করেছেন। এদিকে, মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মুক্তামণির উন্নত চিকিৎসা চলছে। এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের উপদেষ্টা ড. সামন্ত লাল সেন জনকণ্ঠকে জানান, ‘শিশু মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডাঃ জুলফিকার লেনিন আমাকে ফোন করে এ কথা জানিয়েছেন।’ বুধবার প্রাথমিক বৈঠকের পর আট সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড সম্মিলিতভাবে মুক্তামণির সম্ভাব্য চারটি রোগ নির্ণয় করেছেনÑ ডার্মাল ভাসকুলার ম্যালফরমেশন, নিউরোফাইব্রোমেটোসিস ও কনজেনিটাল হাইপারক্রেটোসিস। মেডিক্যাল বোর্ড সার্বক্ষণিক তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের উপদেষ্টা ড. সামন্ত লাল সেন জানান, ‘মঙ্গলবার থেকেই মুক্তামণির প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এর পর উন্নত চিকিৎসার জন্য আট সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডেও সদস্যরা আজ তাকে পরীক্ষা করেছেন। মুক্তামণির একাধিক অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে। এছাড়া, মুক্তামণির ফিটনেস ফিরিয়ে আনতে সাত থেকে দশ দিন সময় লাগবে। এরপর সে অস্ত্রোপচারের উপযোগী হয়ে উঠবে।’ বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার ১১ বছরের মুক্তামণিকে মঙ্গলবার ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর থেকেই তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। শরীরে রক্ত দেয়া হচ্ছে সঙ্গে উন্নত খাবার দেয়া হচ্ছে তার সুস্থতার জন্য। জন্মের দেড় বছর পর ১২ বছরের শিশু মুক্তামণির দেহে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়েও তার কোন চিকিৎসা হয়নি। তার আক্রান্ত ডান হাত এখন ছোট আকারের গাছের গুঁড়ির রূপ নিয়ে প্রচ- ভারী হয়ে উঠেছে। এতে পচনও ধরেছে। পোকাও জন্মেছে। দিন রাত চুলকানি ও যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকে মুক্তামণি। আক্রান্ত স্থান থেকে বিকট গন্ধ ছুটছে। এ রোগ তার দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা। এসব কারণে তাদের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও পড়শীদের যাতায়াতও এক রকম বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত মুক্তমণির এ খবর নজরে আসার পর অনেকেই মুক্তার চিকিৎসায় হাত বাড়ান। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ মুক্তার চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নেন। ইতোমধ্যেই, মুক্তামণির চিকিৎসার জন্য ৮ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ডেও সদস্যরা হলেনÑ বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন, ইউনিটের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, একই ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ সাজ্জাদ খন্দকার, ঢামেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম খুরশিদ আলাম, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ টিটু মিয়া, বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ রায়হানা আউয়াল ও ঢামেক হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ রাশেদ মোহাম্মদ খান।
×